সরকারি ঘর বরাদ্দের কথা বলে টাকা নিয়ে চম্পট!

সরকারি টাকায় ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে গৃহহীন এক দিনমজুরকে। অথচ ঘর বরাদ্দের কথা বলে আগেই তাঁর কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গতকাল শনিবার রাতে ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযান চালান। টের পেয়ে টাকা আত্মসাৎ করা ব্যক্তি বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নে। ওই দিনমজুরের নাম বীরবল কল। ঘর বরাদ্দের জন্য প্রতারককে টাকা দিতে বেসরকারি এক সংস্থা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন তিনি।

এলাকাবাসী, ভুক্তভোগী ব্যক্তি ও উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উপজেলায় ২২৪টি বাড়ি নির্মাণের জন্য মোট ২ কোটি ২৪ লাখ টাকা (প্রত্যেক ঘর নির্মাণে ১ লাখ টাকা হিসাবে) বরাদ্দ দেওয়া হয়। জমি আছে ঘর নেই, এ রকম ব্যক্তিকে নিজের জমিতে ঘর তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। বীরবল কল থাকেন গোয়ালবাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব শিলুয়া গ্রামে। প্রকল্পের আওতায় একটি ঘর বরাদ্দ পান তিনি। বীরবল দিনমজুরের কাজ করে সংসার চালান।

বীরবলের অভিযোগ অনুযায়ী, ঘর নির্মাণের জন্য প্রয়োজনীয় মালামাল সম্প্রতি তাঁর বাড়িতে পৌঁছায়। মাসখানেক আগে পার্শ্ববর্তী মন্ত্রীগাঁও গ্রামের বাসিন্দা আনফর আলী তাঁকে ডেকে নিয়ে বলেন, প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ আছে এবং ঘর বরাদ্দে ১০ হাজার টাকা লাগবে। টাকা না দিলে ঘর পাওয়া যাবে না। এ সময় কাউকে বিষয়টি জানাতে আনফর তাঁকে বারণ করেন। বীরবল তাঁকে বিশ্বাস করে স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ১০ হাজার টাকা ঋণ নেন। পরে তা আনফরকে দেন। প্রতি সপ্তাহে কিস্তির মাধ্যমে তিনি ঋণের টাকা পরিশোধ করছেন।

উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, ইউএনও গতকাল রাত ১০টার দিকে বীরবলের বাড়িতে যান। এ সময় বীরবল পুরো ঘটনার বর্ণনা দেন। তাঁর বক্তব্য অভিযোগ আকারে লিপিবদ্ধ করা হয়। পরে বীরবলকে নিয়ে আনফরের বাড়িতে অভিযান চালান ইউএনও। আনফর টের পেয়ে গা ঢাকা দেন। যোগাযোগের চেষ্টা করে ইউএনও তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ পান।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল কাদির প্রথম আলোকে বলেন, আনফর সম্পর্কে তাঁর ভগ্নিপতি। নানা কাজের কথা বলে দীর্ঘদিন ধরে আনফর এলাকাবাসীর সঙ্গে প্রতারণা করে আসছেন। একাধিকবার নিষেধের পরও তাঁকে নিবৃত্ত করা যাচ্ছে না। তিনি ইউএনওর কাছে তাঁর শাস্তি দাবি করেন।

অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য জানতে রোববার সকাল থেকে বিকেল পৌনে পাঁচটা পর্যন্ত কয়েক দফা যোগাযোগের চেষ্টা করেও আনফর আলীর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।

ইউএনও অসীম চন্দ্র বণিক প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার বিনা মূল্যে গৃহহীন মানুষকে গৃহ নির্মাণ করে দিচ্ছে। এটা সরকারের ভালো একটা উদ্যোগ। আনফর খুব খারাপ কাজ করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে অন্য কারও সম্পৃক্ততা আছে কি না, তা-ও তদন্ত করে দেখা হবে। আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই সব ঘর নির্মাণের কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে।’