দেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকিতে

সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিউনিখ, জার্মানি। ছবি:বাসস
সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মিউনিখ, জার্মানি। ছবি:বাসস

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গোপসাগরের পানিতে অ্যাসিডিটি বাড়ছে, সমুদ্রের পানির উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের এক-তৃতীয়াংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হওয়ার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। যদিও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাংলাদেশের ভূমিকা সামান্যই।

গতরাতে জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনের ফাঁকে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাজ আ সিকিউরিটি থ্রেট’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে বিশ্বকে রক্ষায় ‘সদিচ্ছা’ নিয়ে কাজ করার জন্য ধনী দেশগুলোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় আমাদের যথেষ্ট বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, উদ্ভাবনী এবং অর্থায়ন রয়েছে। আমাদের এখন কেবল প্রয়োজন সমাজের সর্বত্র ধনিক শ্রেণির সদিচ্ছা, আগ্রহ ও প্রচেষ্টা।’

আলোচনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পোস্টডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট পরিচালক হানস জোয়াসিম। কেবিনেট সেক্রেটারি ফর ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অব কেনিয়া মনিকা জুমা, নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইনি ইরিকসন সরিডি, মার্কিন সিনেটর সেলডন, হোয়াইট হাউস অ্যান্ড কো-এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর অব গ্রিনপিস ইন্টারন্যাশনাল বুন্নি ম্যাকডিয়ারমিড প্যানেল আলোচনায় অংশ নেন। ডয়চে ভেলের চিফ পলিটিক্যাল করেসপনডেন্ট বার্লিন ম্যালিন্ডা ক্রেনি রোর্স অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বৈশ্বিক অব্যাহত উষ্ণতা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তন মানুষের জন্য সত্যিকার এক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশে সাইক্লোন, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস এবং মৌসুমি বন্যা মানুষের জীবন-জীবিকার জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যদি এ বিষয় কারও কোনো সন্দেহ থাকে, তাদের আমি বাংলাদেশে এসে প্রকৃত অবস্থা দেখে যাওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

২০১২ সালে ইউএনজিএ সিদ্ধান্তের বিষয়টি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় সমষ্টিগত প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের প্রমাণ পাওয়া যায় এবং জলবায়ু পরিবর্তনের আরও অনেক হুমকির কারণে লাখ লাখ মানুষ পৈতৃক ভূমি ছেড়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে, নদীভাঙন, লবণাক্ত পানি এবং ভূগর্ভস্থ পানিতে আর্সেনিকের মিশ্রণের কারণে এসব ঘটছে।

শেখ হাসিনা বলেন, প্রতি বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙনের কারণে অনেক পরিবার রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়ছে এবং হাজার হাজার একর কৃষিজমি হারিয়ে যাচ্ছে। বৃষ্টিপাতে অনিয়ম এবং অতিবৃষ্টি ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে কৃষকের জন্য চাষাবাদ কঠিন হয়ে পড়েছে এবং শুষ্ক মৌসুমে পানির সংকট দেখা দিচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নতুন নতুন রোগ-ব্যাধি বাড়ছে। বাংলাদেশ থেকে ম্যালেরিয়া সফলভাবে নির্মূল করা হলেও সেটি আবার ফিরে আসার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একই ধরনের রোগ-ব্যাধি বাড়ছে খাদ্যশস্য, পশুসম্পদ ও পোলট্রি সেক্টরেও। তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশের প্রজনন হুমকির মুখে পড়েছে। জলবায়ুর এসব চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বাংলাদেশ বিশ্বে চাল ও মাছ উৎপাদনে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। সবজি উৎপাদনে পঞ্চম এবং হর্টিকালচারে শীর্ষ দশের মধ্যে রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে বিশ্বের কাছে জাদুকরি পরিবেশবান্ধব পাটের আঁশ ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নিজস্ব উদ্যোগে বৈরী অবস্থায় টিকে থাকার উপযোগী শস্যের জাত উদ্ভাবন করেছি।’

বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব সম্পদ থেকে জলবায়ু পরিবর্তন তহবিল গঠন করেছে এবং অভিযোজন ও প্রশমন কর্মসূচি বাস্তবায়নে এই পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪০ কোটি মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় করেছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমরা এখন বড় ধরনের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়েছি: আমাদের অর্জিত অগ্রগতি ধরে রাখতে পারব কি না?’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ ও অন্যান্য অনেক দেশেরই জলবায়ু পরিবর্তনে অভিযোজনের ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা রয়েছে।’ জলবায়ুর সঙ্গে খাপ খাইয়ে চলার জন্য জীবনযাত্রা, আচরণ, পদ্ধতি ও অর্থনীতিতে পরিবর্তনের আহ্বান জানান তিনি।