তাঁরাও ঘুরছেন বইমেলায়

লাঠিতে ভর দিতে দিতে জালালউদ্দিন আহমেদ মেলায় ঢুকতে গিয়ে একটু থামলেন। প্রবেশপথের হুইলচেয়ারগুলোতে নজর পড়তেই এগিয়ে গিয়ে একটা চেয়ারে বসলেন। তাঁর এগিয়ে আসা দেখে ততক্ষণে একটি হুইলচেয়ার নিয়ে হাজির স্বেচ্ছাসেবকদের একজন। প্রবীণ, প্রতিবন্ধী বা কোনো বিশেষ শিশু অমর একুশে গ্রন্থমেলায় এখন অনায়াসেই ঘুরতে পারছে।

বেসরকারি সংগঠন সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন চার বছর ধরে মেলার প্রবেশমুখে বিনা মূল্যে হুইলচেয়ার সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

শুরুটা হয় ২০১৬ সালে। প্রথম প্রথম তেমন সেবাগ্রহীতা না পেলেও দিনে এখন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জনের মতো হুইলচেয়ারে করে মেলা প্রাঙ্গণে যান। সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘কয়েক বছর আগে মেলা চলাকালে দুপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। তখন মনে হলো বয়স্ক বা প্রতিবন্ধীরা কীভাবে মেলায় যাবেন। সবার কথা চিন্তা করেই বাংলা একাডেমির সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করি। তারা আমাদের ১০টি হুইলচেয়ার দেয়।’

বেসরকারি সংগঠন সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন চার বছর ধরে বইমেলার প্রবেশমুখে বিনা মূল্যে হুইলচেয়ার সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো
বেসরকারি সংগঠন সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন চার বছর ধরে বইমেলার প্রবেশমুখে বিনা মূল্যে হুইলচেয়ার সেবা দিয়ে যাচ্ছে। ছবি: প্রথম আলো

বাংলা একাডেমির সহায়তায় সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন প্রতিদিন তাদের ১০ জন স্বেচ্ছাসেবক হুইলচেয়ার সেবা দিতে প্রস্তুত থাকেন। মোস্তাফিজুর রহমান জানান, প্রতিবছরই তাঁদের চাহিদা বাড়ছে। প্রবীণেরা আসতে উৎসাহ পাচ্ছেন। ২০১৮ সালে তাঁদের সেবা নিয়েছেন ২৭০ জন। এ বছর এখন পর্যন্ত ৯০ জনের বেশি এসেছেন। এ ছাড়া আরেকটি সংগঠন ‘বিশেষ শিশুদের’ জন্য পাঁচটি হুইলচেয়ার দিয়েছে।
একজন সেবাগ্রহীতা যতক্ষণ খুশি হুইলচেয়ার নিয়ে মেলা প্রাঙ্গণে থাকতে পারেন। সঙ্গে সুইচ বাংলাদেশের একজন স্বেচ্ছাসেবক থাকেন। রওশন আরা বেশ কয়েকবার মেলায় এসেছেন। সুইচ বাংলাদেশের হুইল চেয়ারে করে এর আগেও তিনি মেলায় ঘুরেছেন। এই প্রবীণ বলেন, ‘এই সেবাটা তো ভালো। হাঁটতে যে কষ্ট হতো, এখন চেয়ার থাকায় আরাম হবে।’

রাজধানীর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এই সুইচ বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন। সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের সচেতনতামূলক কার্যক্রমের সঙ্গে যুক্ত এ সংগঠন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাফিয়া জামান এ বছরই স্বেচ্ছাসেবক হয়েছেন। ক্লাস শেষে তিনি চলে আসেন এখানে। তিনি জানান, হুইলচেয়ারে ঘুরে কেউ যখন খুশি হয়, তখন তাঁরা স্বেচ্ছাসেবকেরাও আনন্দ পান।