বরিশালে ডাস্টবিনে ৩১টি মানবভ্রূণ

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পেছনের ডাস্টবিন থেকে অন্তত ৩১টি মানবভ্রূণ (ফিটাস) উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার রাত পৌনে নয়টার দিকে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা ওই স্থান থেকে ভ্রূণগুলো উদ্ধার করেন।

চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায়, জরায়ুতে ভ্রূণ (ফিটাস) ৩৮ সপ্তাহ অবস্থান করে। এ সময়কে গর্ভধারণকাল বলা হয়।

শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ার্ডমাস্টার আবুল মোদাচ্ছের আলী কবির জানান, রাতে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা হাসপাতালের পশ্চিম পাশে প্রধান পানির ট্যাংকের পাশে থাকা ডাস্টবিনের ময়লা অপসারণ করতে আসেন। এ সময় তাঁরা ময়লার স্তূপের ভেতরে প্লাস্টিকের বালতিতে অনেকগুলো ভ্রূণ দেখতে পান। পরে পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানান।

হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি সূত্র জানায়, হাসপাতালের গাইনি বিভাগে অনেক মায়েরা অপরিণত (ইম্যাচিউরড) বাচ্চা প্রসব করেন। অনেক সময় পরিবারের লোকেরা এসব ভ্রূণ নিয়ে বাড়িতে যান। আবার অনেকে হাসপাতালে ফেলে যান। যেসব ভ্রূণ ফেলে যান, সেগুলো দিয়ে মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লিনিক্যাল ক্লাস নেওয়া হয়। পরে তা কলেজ ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মাটিচাপা দেওয়া হয়।


রাত সোয়া নয়টার দিকে হাসপাতালে গিয়ে দেখা, ভ্রূণগুলো ময়লা-আবর্জনার একপাশে রাখা হয়েছে। লোকজন সেখানে ভিড় করে এসব দেখছেন। ভ্রূণগুলোর অধিকাংশের হাত-পা-মাথা রয়েছে।


অন্যদিকে, খবর পেয়ে বরিশাল মডেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন মডেল থানা পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

হাসপাতালে পরিচালক ডা. বাকির হোসেন রাত সাড়ে ১০টায় প্রথম আলোকে বলেন, মূলত অপরিণত যেসব ভ্রূণ হাসপাতালে প্রসব হয়, বিভিন্ন বয়সের সেসব ভ্রূণ ফরমালিন দিয়ে হাসপাতালে গবেষণার জন্য সংরক্ষণ করা হয়। এটা মেডিকেল কলেজের শিক্ষা উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভ্রূণগুলো এখন উপকরণ হিসেবে ব্যবহারযোগ্য নয়। তাই এগুলো ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু ফেলে দেওয়ার পদ্ধতিটা ঠিক হয়নি। এগুলো মাটিচাপা দেওয়ার কথা। কিন্তু সেটা না করে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়াটা অনুচিত হয়েছে। ফলে, খতিয়ে দেখার জন্য তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এটা যারা করেছে, অবশ্যই তাদের শাস্তি হবে।

দুজন বরখাস্ত, তদন্ত কমিটি গঠন
এদিকে এ ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করার পর দায়িত্বে অবহেলার দায়ে গাইনি বিভাগে প্রধান অধ্যাপক খুরশিদা জাহান ও এই বিভাগের নার্সিং সুপারভাইজর জোছনা বেগমকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।