হোটেলের খাবার খাচ্ছে অনেক পরিবার

গ্যাস নেই। কেরোসিনের চুলায় চলছে রান্নার কাজ। গতকাল দুপুরে নগরের পাথরঘাটা এলাকায়।  ছবি: প্রথম আলো
গ্যাস নেই। কেরোসিনের চুলায় চলছে রান্নার কাজ। গতকাল দুপুরে নগরের পাথরঘাটা এলাকায়। ছবি: প্রথম আলো

টানা তিন দিনেও ছিদ্র হওয়া গ্যাস সরবরাহের পাইপলাইন মেরামত করতে পারেনি কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। ফলে চট্টগ্রাম নগরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকায় গ্যাসের সরবরাহ নেই। এ কারণে গ্রাহকেরা চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। অনেক পরিবার হোটেল থেকে খাবার কিনে খাচ্ছে।

গ্যাসের অভাবে অনেক স্থানে বন্ধ রয়েছে কলকারখানা ও সিএনজি ফিলিং স্টেশন।

কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি সূত্র জানায়, ছিদ্র হওয়া পাইপলাইন মেরামতের কাজ শেষ হলে সোমবার মধ্যরাত অথবা আজ মঙ্গলবার সকালের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ শুরু হবে। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা নাগাদ পাইপলাইনের ওপর থেকে কাদামাটি সরানোর কাজ শেষ হয়। এরপর মেরামতকাজ শুরু হওয়ার কথা।

শনিবার সকালে নগরের ইপিজেড থানাধীন আকমল আলী সড়ক সংলগ্ন একটি খালের প্রতিরোধক দেয়ালের খুঁটি বসাতে পাইলিংয়ের কাজ করছিলেন সিটি করপোরেশনের নিযুক্ত ঠিকাদারের কর্মীরা। এতে গ্যাস সরবরাহ পাইপলাইন ছিদ্র হয়ে যায়। এ জন্য সিটি করপোরেশনের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতাকে দায়ী করা হচ্ছে। বিপর্যয় এড়াতে শনিবার বিকেল চারটার দিকে বিতরণ লাইন শাটডাউন (বন্ধ) করে দেয় কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি।

টানা তিন দিনেও গ্যাসের পাইপলাইন সংস্কার না হওয়ায় নগরের সাধারণ গ্রাহকেরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে। রোববার রাতের মধ্যে গ্যাস সরবরাহ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি। কিন্তু গতকাল সন্ধ্যা সোয়া সাতটা পর্যন্ত ছিদ্র হওয়া পাইপলাইনের ওপর কাদামাটি সরানোর কাজ প্রায় শেষ হয়। জোয়ার এবং নর্দমার পানির স্রোত বেশি থাকায় পাইপলাইন মেরামত করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন গ্যাস বিতরণ কোম্পানির প্রকৌশলীরা।

কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানির ব্যবস্থাপক (গ্রাহক এবং রক্ষণাবেক্ষণ) প্রকৌশলী অনুপম দত্ত গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ছিদ্র হয়ে যাওয়া পাইপলাইনের ওপর থেকে কাদামাটি ও পানি সরানোর কাজ প্রায় শেষ। রাতের মধ্যেই পাইপের ছিদ্র মেরামতকাজে হাত দেওয়া হবে। তবে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাইপলাইন মেরামত করে গ্যাস সরবরাহ দেওয়ার চেষ্টা চলছে।

এক প্রশ্নের জবাবে অনুপম দত্ত বলেন, ‘রাতের মধ্যে (গত রাত) পাইপলাইনের মেরামতকাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। রাতেই গ্যাস সরবরাহ দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করব। নইলে কাল (আজ মঙ্গলবার) সকালের মধ্যে গ্রাহকেরা গ্যাস পাবে।’

দুর্ভোগের নগর
চট্টগ্রাম নগরের পতেঙ্গা, হালিশহর, আগ্রাবাদ, পাহাড়তলী, সদরঘাট, আন্দরকিল্লা, লালখান বাজার, জামালখান, আসকারদীঘি এলাকা, সার্সন রোড, কাজীর দেউড়িসহ নগরের প্রায় ৬০ শতাংশ এলাকায় গ্যাস সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব এলাকার বাসিন্দারা হোটেল থেকে খাবার কিনে খাচ্ছেন। অনেকে গ্যাস সিলিন্ডার কিনে ঘরে রান্নাবান্নার কাজ সেরে নিচ্ছেন।

নগরের হালিশহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ আলী প্রথম আলোকে বলেন, ঘরের পাঁচ সদস্যের খাবার কিনতে রেস্তোরাঁয় লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে। কবে নাগাদ গ্যাস সরবরাহ পাওয়া যাবে, তা–ও জানা যাচ্ছে না।

সদরঘাট এলাকার বাসিন্দা রশিদ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, টানা তিন দিন রেস্তোরাঁ থেকে সাতজনের খাবার কিনে আনতে হচ্ছে। প্রতি বেলায় খাবারের জন্য এক হাজার টাকার বেশি খরচ হচ্ছে।

লালখান বাজার এলাকার বাসিন্দা তারেকুল ইসলাম বলেন, ‘গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সিটি করপোরেশনের কোনো ব্যাখ্যা আমরা পাইনি। ঘটনার জন্য দায়ী কে, সে তথ্য জানানো হচ্ছে না।’