মতপ্রকাশে বাধা আইন, ভয় ও চাপ

>

• দেশে গণমাধ্যমের যাত্রা কখনোই নির্বিঘ্ন ছিল না
• এখন বড় হুমকি হয়ে উঠেছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন
• মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা দিতে পারেনি সরকার
• সরকার অবশ্য তেমনটা মোটেই মনে করে না
• সব মিলিয়ে বিষয়টি সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ

দমনমূলক এক আইন দেশে মতপ্রকাশ ও সংবাদ–মাধ্যমের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলেছে। চাপা ভয়ের কারণে সংবাদমাধ্যম আর সাংবাদিকদের মধ্যে ‘স্ব-আরোপিত’ নিয়ন্ত্রণ বেড়েছে। এর পাশাপাশি কিছু গোষ্ঠীর চাপ, হামলা এবং হুমকিও রয়েছে।

এ পর্যবেক্ষণ দেশের সাংবাদিক আর সংবাদমাধ্যম বিশ্লেষকদের। মানবাধিকার ও সংবাদমাধ্যমের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এমন অনেক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানও একই কথা বলছে। সরকার অবশ্য এমনটা মোটেই মনে করে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জার্মান সংবাদমাধ্যম ডচে ভেলেকে এক সাক্ষাৎকারে (১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত) বলেছেন, তিনি মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল। মুক্তচিন্তাকে শতভাগ সমর্থন করেন।

 তবে মানবাধিকার নিয়ে কাজ করা দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, গণমাধ্যমসহ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠেছে গত বছর পাস হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন। আরও যে বিষয়গুলো মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ঝুঁকিতে ফেলছে, তার মধ্যে আছে: সবল বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়া; গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারি বা ক্ষমতাবান গোষ্ঠীগুলোর তৎপরতা; এবং সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যমে গোয়েন্দা নজরদারি।

আছে সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, রাজনৈতিক দল, উগ্রবাদী সংগঠন আর অর্থ-প্রতিপত্তিতে ক্ষমতাশালী দুর্বৃত্ত গোষ্ঠীর হুমকি-ধমকি থেকে শুরু করে দমন-পীড়ন-নির্যাতন এমনকি হত্যার ঝুঁকি। অসহিষ্ণুতা ও ভিন্নমতের ব্যক্তিদের ওপর আক্রমণ সামাজিক পরিসরে বড় সমস্যা।

অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতো আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বিভিন্ন সময়ে বলেছে, বাংলাদেশে মানুষের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সুরক্ষা দিতে পারেনি সরকার। সব মিলিয়ে এটা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।

১০ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ‘মানবাধিকার ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এক সেমিনারে দেশি-বিদেশি মানবাধিকার বিশেষজ্ঞদের আলোচনায়ও মতপ্রকাশ এবং নাগরিক স্বাধীনতার বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। তাঁরা বলেছেন, বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখার জন্য এ স্বাধীনতা জরুরি। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় জাতিসংঘের দপ্তর আয়োজিত এ সেমিনারে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী মিয়া সেপ্পো বলেছেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশের মধ্য দিয়ে যাঁরা ভিন্নমত প্রকাশ করতে আগ্রহী, তাঁদের সুরক্ষা দিতে হবে।

অবশ্য বিশিষ্ট আইনজীবী শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, যেকোনো কর্তৃত্ববাদী সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সংকুচিত করে থাকে। বর্তমান সরকারও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে পারবে না।

স্বাধীনতার পর থেকে এ দেশে গণমাধ্যমের যাত্রা কখনোই নির্বিঘ্ন ছিল না। ১৯৭৫ সালে বাকশাল গঠনের পর চারটি পত্রিকা ছাড়া বাকি পত্রিকা বন্ধ করে দেয় সরকার। এরপর জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সামরিক শাসনামলে ছিল নিয়ন্ত্রিত পরিস্থিতি। আক্রমণ এসেছে কথিত বাম চরমপন্থী ও ধর্মীয় উগ্রপন্থীদের কাছ থেকে।

নব্বইয়ে স্বৈরশাসক এরশাদের পতনের পর বিএনপি ও আওয়ামী লীগ সরকারও বিজ্ঞাপন বন্ধ করাসহ নানা চাপ জারি রেখেছিল। সংবাদমাধ্যম বা সংবাদকর্মীরা ধারাবাহিকভাবে বাধা বা আক্রমণ মোকাবিলা করেই এগিয়েছেন। গত কয়েক বছরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে।

গত নির্বাচনের আগে ১৩ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা ভয়ের পরিবেশের মধ্যে আছেন। এ জন্য অনেকে ‘স্ব-আরোপিত’ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে কাজ করছেন।

আইনি খড়্গ ও উদ্বেগ
 ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে গণমাধ্যম-সংশ্লিষ্টরা উদ্বিগ্ন। এ আইনে সরকারি সংস্থার গোপনীয় তথ্য কেউ কম্পিউটার, ডিজিটাল যন্ত্র ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ করলে তা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি বলে সাব্যস্ত হবে। শাস্তির বিধানটি কঠোর। অর্থাৎ, যে বিষয়টি সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে জনগণকে জানাচ্ছে না, তা নিয়ে খবর প্রকাশ করলে শাস্তি পেতে হতে পারে। পুলিশের সন্দেহ হলেই যেকোনো গণমাধ্যমের কম্পিউটার-ব্যবস্থা জব্দ করতে পারবে। মতপ্রকাশের অন্তরায় হিসেবে এমন নয়টি ধারাকে চিহ্নিত করে আইনটি সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছে সম্পাদক পরিষদ।

আইনটি পাস হওয়ার পর দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা প্রতিবাদ ও উদ্বেগ জানায়। এর মধ্যে ছিল সাংবাদিকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা প্যারিসভিত্তিক রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডারস (আরএসএফ), নিউইয়র্কভিত্তিক কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) ও ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব জার্নালিস্টস (আইএফজে)। এই আইনের ‘নিবর্তনমূলক’ সব ধারা বাতিলের দাবি জানিয়েছিল টিআইবি।

গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফলের ভুল তথ্য প্রকাশের অভিযোগে এই আইনে খুলনার একজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে ভিডিও ফুটেজে দেখা যায় ভুলটা রিটার্নিং কর্মকর্তাই করেছিলেন।

অবশ্য নতুন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ প্রথম আলোকে এক সাক্ষাৎ​কারে বলেছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন হচ্ছে বাংলাদেশের সব মানুষকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য। এখানে কিছু ধারার ব্যাপারে সাংবাদিকদের উদ্বেগ আছে। সেই উৎকণ্ঠা দূর করার জন্য কাজ করছি, যাতে কোনো ধারার অপপ্রয়োগ না হয়।’ তিনি বলেন, সম্প্রচার আইন দ্রুত পাস করার জন্য কাজ করছেন।

গত বছর ১৫ অক্টোবর মন্ত্রিসভা সম্প্রচার আইন এবং গণমাধ্যম কর্মী (চাকরি শর্তাবলি) আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে। সম্প্রচার আইনে সম্প্রচার মাধ্যমের জন্য নানা বিধিনিষেধ রয়েছে। এই আইনের মতো প্রস্তাবিত গণমাধ্যম কর্মী (চাকরি শর্তাবলি) আইনেরও একাধিক ধারা অপব্যবহারের সুযোগ থাকছে।

সাংবাদিকতায় ঝুঁকিপূর্ণ
বিশ্বে সাংবাদিকতায় ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশকে পাঁচ বছর আগেই অন্তর্ভুক্ত করেছে সিপিজে। বাংলাদেশ এ তালিকায় উঠেছে সাংবাদিকদের ওপর দমন-পীড়ন, গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ এবং বন্ধ করে দেওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে।

আরএসএফের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকদের অধিকার প্রশ্নে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশ সবচেয়ে পিছিয়ে আছে। গত বছর সংস্থাটির প্রকাশিত গণমাধ্যমের স্বাধীনতা সূচকে ১৮০ দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৬তম। এর আগের বছর বাংলাদেশ একই অবস্থানে থাকলেও নেতিবাচক সূচকে পরিস্থিতি আগের চেয়ে খারাপ। চলতি বছরের সূচক এখনো প্রকাশিত হয়নি।

দেশীয় বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে দেশে ১২২ জন সাংবাদিক শারীরিক নির্যাতন, হামলা, মামলা বা হুমকি-হয়রানির শিকার হয়েছেন। নিপীড়কের তালিকায় আছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রভাবশালী ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, সন্ত্রাসী ও ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। সিরাজগঞ্জে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘাতের খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান সমকালের প্রতিনিধি আবদুল হাকিম।

আর ২০১৮ সালে সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে ২০৭টি। এর মধ্যে খুন হয়েছেন ৩ জন। ২০১৬ সালে নির্যাতনের ঘটনা ছিল ১১৭টি।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও
স্বাধীন মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে ফেসবুক এখন জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। গত আগস্টে নিরাপদ সড়কের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনের সময় দেশে-বিদেশে সুপরিচিত আলোকচিত্রী শহীদুল আলম গ্রেপ্তার হন আল-জাজিরায় তাঁর দেওয়া এক সাক্ষাৎকারকে কেন্দ্র করে। তাঁর বিরুদ্ধে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনে (আইসিটি) মামলা হয়। এরপর ফেসবুকে সরকারের সমালোচনা কমে গেছে।

ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে মন্তব্য, কটাক্ষ বা ছবি বিকৃত করার অভিযোগে এ পর্যন্ত অনেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। অন্যদিকে ফেসবুকেই বিরোধী রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে ভুয়া বা বিদ্বেষপূর্ণ খবর ছড়ানোর ঘটনায় কারও বিরুদ্ধে সরকার কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। একাদশ সংসদ নির্বাচনের আগ দিয়ে, গত ডিসেম্বরে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ ভুয়া খবর প্রচারের জন্য বাংলাদেশের নয়টি পেজ ও ছয়টি অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বলেছে, এগুলোতে ‘বাংলাদেশের সরকারের সমর্থনে বিভিন্ন কনটেন্ট পোস্ট করা হচ্ছিল’ এবং ‘এর সঙ্গে সরকার-সংশ্লিষ্ট কিছু লোকের সম্পর্ক আছে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ফাহমিদুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ক্ষেত্র আমার মনে হয়, এখন সবচেয়ে খারাপ সময় যাচ্ছে।’ তাঁর মতে, অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে সরকারবিরোধী কিছু লেখা যায় না। এটা কেবল আইনের কারণে নয়; সব দিক থেকেই চাপগুলো আসছে। সরকারপন্থী কিছু ‘যোদ্ধা’ আছেন, যাঁরা সরকারবিরোধী মতপ্রকাশকারীদের চরিত্র হনন করেন, তাঁদের জামায়াত-শিবিরের দোসর বলেন। কিছু সত্য, কিছু মিথ্যা মিলিয়ে একধরনের কলঙ্ক আরোপের চেষ্টা চলে।

ফোন আলাপেও ভয়
টেলিফোনেও মানুষ এখন মন খুলে কথা বলতে ভয় পান। বিভিন্ন সময়ে অনেক বিরোধী রাজনীতিকের টেলিফোন আলাপ ফাঁস হয়েছে। অনেককে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়েছে। ফোন আলাপের কারণে জেল খেটেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী। কিন্তু কারা এসব টেলিফোন আলাপে আড়ি পাতছেন, তা ফাঁস করছেন, সেটা জানা যায়নি।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশে রাজনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, ভয়ের সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতির অধ্যাপক আলী রিয়াজের মতে, ভয়ের সংস্কৃতি আতঙ্ক, সন্ত্রাস ও বল প্রয়োগকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ করে। এটা শাসন পরিচালনার একটি ধরনও বটে। বাংলাদেশে এই সংস্কৃতি প্রবলভাবে বিরাজমান। (ভয়ের সংস্কৃতি, প্রকাশ; ২০১৪)

কমছে ভিন্নমতের প্রকাশনা
ভিন্নমতের বই প্রকাশে এখন নানা বাধা বা চাপ তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে জঙ্গিগোষ্ঠী অন্যতম। জঙ্গিরা ২০১৩ সাল থেকে তারা একের পর এক ব্লগার, লেখক, প্রকাশক হত্যা ঘটিয়ে চলেছে। গত বছরও মুন্সিগঞ্জে গুলি করে মারা হয়েছে প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে। জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অনেকাংশে নিয়ন্ত্রণে এনেছে। কিন্তু ঝুঁকি কাটেনি।

বরং যে ধরনের লেখালেখির জন্য লেখক, প্রকাশকেরা খুনের শিকার হয়েছেন, কয়েক বছর ধরে তেমন লেখা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে সরকারও। লেখক, প্রকাশক আটকের ঘটনাও ঘটেছে। এবারের একুশের বইমেলা শুরুর আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেছেন, ধর্মীয় ও সাম্প্রদায়িক চেতনায় আঘাত করতে পারে—মেলায় প্রকাশকেরা এমন বই আনতে পারবেন না। আনলে বিক্রেতার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাংলা একাডেমি নতুন বই যাচাই-বাছাই করে মেলায় ঢোকাবে। পুলিশও নজরদারি করবে।

এ ছাড়া ঐতিহাসিক বা সমসাময়িক অনেক রাজনৈতিক ঘটনা ও ব্যক্তিত্বসহ স্পর্শকাতর আরও কিছু বিষয়ে লেখালেখি বা বই প্রকাশে লেখক ও প্রকাশকদের অনেক ভাবতে হচ্ছে। অনেকে ভয় পান বলেও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে।

 ভয়-চাপের এই নানামাত্রিক বাস্তবতার কথা স্বীকার করা এবং দীর্ঘমেয়াদি এই কুফলের কথা অনুধাবন করাটা হচ্ছে টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসা এই সরকারের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ। গত নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ বলেছে, ইতিমধ্যে দেশে গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। দেশে তথ্যের অবাধ চলাচল অব্যাহত আছে। কিন্তু সংবাদমাধ্যম ও মানবাধিকারসংক্রান্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, নাগরিকদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা খর্ব বা সংকুচিত করার মতো পরিস্থিতি প্রকট। সার্বিকভাবে এটা দূর করাটা বড় চ্যালেঞ্জ।

 সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল প্রথম আলোকে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নানাভাবেই খর্ব হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কথা তুলে তিনি বলেন, এমন আইনের অপপ্রয়োগ যদি নাও হয়, খড়্গ ঝোলানোর একটা ব্যাপার থাকে। মানুষ নিজেই মতপ্রকাশ নিয়ন্ত্রিত করে ফেলে। ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এটা সুস্থ গণতান্ত্রিক রাজনীতির পরিচায়ক না।