জমানো টাকায় স্কুলে শহীদ মিনার গড়লেন শিক্ষক

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় নিজের জমানো টাকা দিয়ে স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিয়েছেন সেখানকারই শিক্ষক আলেয়া ফেরদৌসী। ছবি: প্রথম আলো
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলায় নিজের জমানো টাকা দিয়ে স্কুলে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিয়েছেন সেখানকারই শিক্ষক আলেয়া ফেরদৌসী। ছবি: প্রথম আলো

স্কুলটিতে আগে কোনো স্থায়ী শহীদ মিনার ছিল না। ফলে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পারত না স্কুলের শিক্ষার্থীরা। তবে এবারের ২১ ফেব্রুয়ারিতে সেটি হবে না। কারণ ওই স্কুলেরই এক শিক্ষক নিজের জমানো টাকা দিয়ে তৈরি করে দিয়েছেন একটি শহীদ মিনার।

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার প্রতিমাবংকী পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। সহকারী শিক্ষক বেগম আলেয়া ফেরদৌসী এই স্কুলেই কর্মরত। নিজের জমানো ৩৬ হাজার টাকা দিয়ে ২০১৮ সালের মে মাসে তিনি স্কুলে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করেন। ২১ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই মিনারে প্রথমবারের মতো ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আলমগীর হোসেন জানান, নতুন এ শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শিক্ষার্থী, বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি ও এলাকাবাসী ওই দিন ভোরে শহীদ মিনারে উপস্থিত থাকবেন।

জানা গেছে, আলেয়া ফেরদৌসী প্রতিমাবংকী মধ্যপাড়া গ্রামের প্রয়াত এস এম আজহারুল ইসলামের স্ত্রী। আজহারুল ইসলাম সখীপুর পিএম পাইলট মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন।

আলেয়া ফেরদৌসী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের গ্রাম থেকে সখীপুর উপজেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারটি প্রায় তিন কিলোমিটার দূরে। এ গ্রামের মানুষ ও শিক্ষার্থীদের কখনো ওই কেন্দ্রীয় মিনারে গিয়ে ফুল দিয়ে ভাষা শহীদদের আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হতো না। ১৯৯৯ সালে ইউনেসকো ২১ ফেব্রুয়ারির শহীদ দিবসকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার পর আমার মনের ভেতর বিদ্যালয়ে একটি শহীদ মিনার নির্মাণের স্বপ্ন জাগে। এর পর থেকে প্রতি মাসের বেতন থেকে সাংসারিক খরচ মিটিয়ে উদ্বৃত্ত টাকা জমানো শুরু করি।’

আলেয়া ফেরদৌসী জানান, ২০১৭ সালে তিনি বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটিকে এ বিষয়ে জানান এবং পরে অনুমতি পান। শুরু হয় শহীদ নির্মাণের কাজ। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৩৬ হাজার টাকা। এবারের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হবে ওই নতুন শহীদ মিনারে।

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার প্রতিমাবংকী পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজের জমানো ৩৬ হাজার টাকা দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিয়েছেন আলেয়া ফেরদৌসী। ছবি: প্রথম আলো
টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার প্রতিমাবংকী পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিজের জমানো ৩৬ হাজার টাকা দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ করে দিয়েছেন আলেয়া ফেরদৌসী। ছবি: প্রথম আলো

প্রতিমাবংকী পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, স্কুল চত্বরে শহীদ মিনার নির্মাণ হওয়ায় এখন থেকে এই স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীরা এ দিনের তাৎপর্য ও শহীদদের সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। 

আলেয়া ফেরদৌসীর একমাত্র ছেলে ও একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আলমগীর ফেরদৌস বলেন, ‘আমার মাকে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য টাকা দিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি তা নেননি। তিনি আমাকে বলেন, কষ্টে ও নিজের জমানো টাকা দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণে যে আনন্দ, সেটা তো আর পাওয়া যাবে না।’

স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আবদুল গফুর মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘আলেয়া ফেরদৌসীর কাছে আমরা গ্রামবাসী কৃতজ্ঞ। এবারই প্রথম গ্রামবাসী এবং স্কুলের শিক্ষার্থীরা শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে।’

সখীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মানবেন্দ্র দাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রতিমাবংকী পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বেগম আলেয়া ফেরদৌসী নিজের টাকায় শহীদ মিনার করায় তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা আরও বেড়েছে।’

মানবেন্দ্র দাস জানান, উপজেলায় ১৪৭টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। গত বছর মাত্র পাঁচটিতে শহীদ মিনার ছিল। এবার ৭৬টি স্কুলের খুদে শিক্ষার্থীরা তাদের নিজ বিদ্যালয়ের মিনারে ফুল দিয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি প্রথম শ্রদ্ধা জানাবে। আগামী বছর উপজেলার ১৪৭টি বিদ্যালয়েই শহীদ মিনার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।