উপাচার্যের জামাতার জন্য নিয়ম শিথিল

>
  • শিক্ষক হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল সিজিপিএ ৩.৫
  • এখন ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩.২৫
  • উপাচার্যের মেয়েও শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম আবদুস সোবহান দায়িত্ব নেওয়ার পর শিক্ষক নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করেছেন। এতে প্রার্থীর যোগ্যতা শিথিল করা হয়েছে। আর এই পরিবর্তনের ফলে উপাচার্যের জামাতা শিক্ষক হিসেবে চাকরির আবেদন করার সুযোগ পেয়েছেন। আজ বুধবার এই চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার হওয়ার কথা রয়েছে।

নীতিমালা পরিবর্তনের সুযোগে এর আগে উপাচার্যের মেয়েও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ে প্রার্থীর ন্যূনতম যোগ্যতা সিজিপিএ ৩ দশমিক ৫ এবং একাডেমিক ফল প্রথম সাতজনের মধ্যে থাকতে হতো। উপাচার্য আবদুস সোবহানের দ্বিতীয় মেয়াদে ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ৪৭৫তম সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষক নিয়োগে যোগ্যতা শিথিল করা হয়। এখন শিক্ষক হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ দশমিক ২৫। আর ব্যাচে প্রথম সাতজনের মধ্যে থাকার বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়েছে। তিনি দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব নেন ২০১৭ সালের ৭ মে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপাচার্যের জামাতা এ টি এম শাহেদ পারভেজ ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) প্রভাষক পদে চাকরির আবেদন করেছেন। তাঁর স্নাতকোত্তর পর্যায়ে সিজিপিএ ৩ দশমিক ৫–এর নিচে। তিনি মার্কেটিং বিভাগ থেকে পাস করেছেন। তাঁর ব্যাচে যিনি প্রথম হয়েছেন তাঁর সিজিপিএ ৩ দশমিক ৮৯। এই ব্যাচে ৩ দশমিক ৫ বা এর ওপরে সিজিপিএ পেয়েছেন ৬৬ জন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএর পরিচালক অধ্যাপক শামসুদ্দোহা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএ রয়েছে। নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তনের কারণে এখন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আইবিএতে সবচেয়ে কম যোগ্যতাধারীরা আবেদনের সুযোগ পাবেন।

একইভাবে নীতিমালা পরিবর্তনের সুযোগে উপাচার্যের মেয়ে সানজানা সোবহানকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, মেয়েকে নিয়োগ দেওয়ার জন্যই এ বছর বিভাগটি খোলা হয়েছে। আগের নীতিমালা বহাল থাকলে সানজানা সোবহানও নিয়োগের সুযোগ পেতেন না। কারণ, একাডেমিক ফলাফলে তাঁর ব্যাচে তাঁর অবস্থান ২১তম।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ শিক্ষক প্রথম আলোকে বলেন, শিক্ষক নিয়োগের যদি এই হাল হয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষার মান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে!

যোগাযোগ করা হলে উপাচার্যের জামাতা শাহেদ পারভেজ বলেন, কেউ চাইলেই তো আর বিশ্ববিদ্যালয়ের নীতিমালা পরিবর্তন করতে পারেন না। যে পরিবর্তন হয়েছে তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে অনুমোদন হয়ে এসেছে। সানজানা সোবহানের চাকরির ব্যাপারে তিনি বলেন, তাঁর ফল অনেক ভালো। যাঁরা এর সমালোচনা করছেন, তাঁরা উপাচার্যকে ছোট করছেন।

মুঠোফোনে কথা বলার চেষ্টা করে উপাচার্যের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। জনসংযোগ প্রশাসক প্রভাষ কুমার কর্মকারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি শুনে বলেন, এ ব্যাপারে তিনি কিছু বলতে পারেন না। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার এম এ বারীর কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর বক্তব্য চাইলে তিনি বলেন, তিনি যা বলেন, উপাচার্য কর্তৃক আদিষ্ট হয়ে বলেন। এ বিষয়ে তিনি কথা বলতে পারেন না।