নারীর প্রতি সহিংসতা উন্নয়নের চ্যালেঞ্জ

ফেরদৌসী সুলতানা
ফেরদৌসী সুলতানা

নিম্ন মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। এ উন্নয়নযাত্রায় নারীকে রাখতে হবে অবদান আর পেতে হবে এর সুফল। লক্ষ্য অর্জনের পথে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। উচ্চ শিক্ষা, প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, শ্রমশক্তি, সম্পদে নারীর অসম অবস্থা, বৈষম্য ও সামাজিক বাধা নারীর ঘরে–বাইরের উপস্থিতি সীমিত করছে।

আমরা জানি, মানসম্পন্ন শিক্ষা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি আরও প্রকট। উচ্চ, কারিগরি ও বিজ্ঞানশিক্ষায় মেয়েরা এখনো পিছিয়ে। কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। শ্রমশক্তি হিসেবে বিদেশে যাওয়াকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। তবে অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে যতজন যাচ্ছে, উন্নত চাকরি নিয়ে যাচ্ছে কজন? সবার জন্য বাজার উপযোগী দক্ষতানির্ভর শিক্ষার দরকার। কর্মক্ষেত্রে নারীকে ছোট বা বড় সব ধরনের চাকরিতেই নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়। হয়রানিমুক্ত নারীবান্ধব পরিবেশের অভাব রয়েছে। কর্মজীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে একজন নারী সন্তান জন্মদান করেন। মাতৃত্বকালীন ছুটি বা সুবিধা সরকারি স্তরে যেভাবে দেওয়া হয়, বেসরকারি খাতের বিরাট ক্ষেত্রে এটি মেনে চলার উদাহরণ কম।

গ্রামীণ নারীর জীবনে নিরাপত্তাহীনতা বাল্যবিবাহের একটি অন্যতম কারণ। এতে তার শিক্ষা শুধু নয়, জীবনের বিকাশও বাধা পায়। আমরা মেয়েদের অন্যায়ের প্রতিবাদ বা আত্মরক্ষা করা শেখাই না। মেয়ের একটি ভালো বিয়ে ছাড়া অন্য স্বপ্ন অভিভাবকেরা দেখতে পারেন না।

নারীর প্রতি সহিংসতা আমাদের সামগ্রিক উন্নয়নের একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠছে। প্রায় প্রতিদিনই খবরের কাগজে নারী বা কন্যাশিশু নির্যাতন বা ধর্ষণের খবর দেখা যাচ্ছে। ফলে এক ভীতির আবহ সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে। মেয়েকে স্কুলে পাঠানোর সময় তাকে নিয়ে ভাবতে হচ্ছে বাবা-মাকে। সন্তান বাড়ি ফিরে না আসা পর্যন্ত স্বস্তি নেই। কর্মজীবী যে নারী বাইরে যাচ্ছেন, তাঁর চলাফেরাও নিরুপদ্রব নয়। কর্মস্থলের বৈরী পরিস্থিতি বা পরিবারে আপত্তির কারণে অনেককেই ক্যারিয়ার বিসর্জন দিতে হয়। ঘরও কি নিরাপদ? না, তা–ও নয়। আমরা জানি, পারিবারিক নির্যাতনের হার আমাদের দেশে বেশি। এই পরিস্থিতির মধ্যেও যে যার মতো করে লড়াই করে যাচ্ছেন নারীরা। সমাজ অগ্রগতিতে নানা পর্যায়ে ভূমিকা রাখছেন তাঁরা। তবে এই অর্জনকে কালিমালিপ্ত করছে সহিংসতা। সহিংসতার শিকার নারীকেই দেওয়া হয় কলঙ্ক।

শুরুটা তাই পরিবার থেকেই করতে হবে। আমরা মেয়েদের চলাফেরায় সংযত হতে শেখাই, কিন্তু আমাদের ছেলেদের কি শেখাচ্ছি কীভাবে একটি মেয়ের সঙ্গে আচরণ করতে হবে? তাকে কী বলা যাবে, কী যাবে না? অনাত্মীয় মেয়েটির মর্যাদার প্রতি তার কি দায়িত্ব? এখন বিভিন্ন স্কুলে ‘ভালো স্পর্শ’, ‘খারাপ স্পর্শ’ শেখানো হয়। এটা খুবই দরকারি। আগে এসব শিক্ষার বিষয়ে অনেকেই আপত্তি করতেন। ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি, এখন বিষয়গুলোকে অভিভাবকেরা সাদরে গ্রহণ করছেন। পরিবারে ও পাঠ্যক্রমে জেন্ডার সংবেদনশীলতার দিকে নজর দিতে হবে।

নারীর প্রতি সংবেদনশীলতা ও সমাজের সর্বস্তরে শ্রদ্ধাবোধ জাগ্রত করতে হবে। এটি ক্রমে তা সমাজ-রাষ্ট্রে ছড়াবে। সর্বস্তরে এর অভাব প্রকট বলেই নারীর প্রতি সহিংসতা। আমাদের অর্জনগুলোকে ধরে রাখতে এই সহিংসতাকে রুখতে হবে।

 আরও পড়ুন: