বিএনপিও চায় জামায়াত ক্ষমা চাক

>
  • জামায়াতকে নিয়ে দলটির ভেতরে-বাইরে বিতর্ক
  • বিতর্কে বিএনপির অনেকের ভেতরে স্বস্তিবোধ
  • জামায়াত বিষয়ে বিএনপি নাক গলাবেন না
  • জোটে না থাকাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বিএনপি

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার জন্য জামায়াতে ইসলামীর ভেতর থেকেই ক্ষমা চাওয়ার যে দাবি উঠেছে, তা বিএনপিও নীতিগতভাবে সমর্থন করে। কারণ, বিষয়টি নিয়ে ঘরেবাইরে তাদের অনেক বিরূপ সমালোচনা সইতে হয়েছে। তাই জামায়াত ক্ষমা চেয়ে বিষয়টির মীমাংসা করে ফেলুক, তা তারা চায়। তবে এ বিষয়ে আগ বাড়িয়ে কোনো মন্তব্য করবে না বিএনপির নেতারা।

বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে জামায়াতকে নিয়ে দলটির ভেতরে-বাইরে যে বিতর্ক উঠেছে, তা নিয়ে বিএনপির অনেকের ভেতরে স্বস্তিবোধ আছে। তবে তাঁরা এ ব্যাপারে নাক গলাবেন না। একই সঙ্গে ২০-দলীয় জোটে আর সক্রিয় না থাকার ব্যাপারে জামায়াত যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে, সেটিও খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাইছে না দলটি। কারণ, এটি জামায়াতের নিজস্ব ব্যাপার।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার জন্য প্রায় ৪৭ বছর ধরে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের মুখে আছে জামায়াত। ইতিমধ্যে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে দলটির প্রথম সারির অনেক নেতার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। গত শুক্রবার জামায়াতের প্রভাবশালী নেতা আবদুর রাজ্জাক একাত্তর প্রশ্নে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং জামায়াতের বিলুপ্তিসহ আরও কিছু কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনায় আসে। এর রেশ ধরে আরেক কেন্দ্রীয় নেতা মুজিবুর রহমানকে (মঞ্জু) জামায়াত বহিষ্কার করে।

আবদুর রাজ্জাকের পদত্যাগের পাঁচ দিন অতিবাহিত হলো। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে বিএনপি কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য, নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, একাত্তরের ভুলের বিষয়ে জামায়াত ক্ষমা চাইবে কী চাইবে না, সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। বিএনপি অন্য দলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে অনধিকার চর্চা করতে যাবে না। এটাই বিএনপির অবস্থান।

অবশ্য এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ও সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমানের অবস্থান ভিন্ন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময়কার ভূমিকার জন্য জাতির কাছে জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া উচিত। এ ব্যাপারে আবদুর রাজ্জাক যা বলেছেন, আগেই হওয়া উচিত ছিল। আমার বিশ্বাস কথাগুলো বিএনপিও আনুষ্ঠানিকভাবে বলবে। তা না হলে বিএনপিকেও একদিন তার জন্য অনুতপ্ত হতে হবে।’

এদিকে জামায়াত বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোটে আর না থাকার যে খবর গণমাধ্যমে এসেছে, তা নিয়ে বিএনপির নেতারা অনেকটা নির্বিকার। গত কয়েক দিনে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জামায়াত আর জোটে না থাকতে চাইলে বিএনপি তাদের চাপাচাপি করবে না। বরং তা বিএনপির জন্য স্বস্তিদায়ক হবে বলে মনে করছেন দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের অনেক নেতা ও শুভাকাঙ্ক্ষী। এমন একাধিক নেতা বলেছেন, জামায়াত যদি জোট ছেড়ে যায়, এরপর রাজনীতির মাঠে তাদের ভূমিকা কী হয়, সেটি দেখার অপেক্ষায় থাকবে বিএনপি।

বিএনপির উচ্চপর্যায়ের একটি সূত্র জানায়, জামায়াতের ব্যাপারে বিএনপিও দূরত্ব বজায় রাখার কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে। সম্প্রতি লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দলের দুজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা দেখা করলে সেখানে জামায়াতের প্রসঙ্গে আলোচনা হয়। জামায়াত জোট ছেড়ে যেতে চাইলে তাদের থাকার জন্য অনুরোধ করতে যাবে না বিএনপি।

জামায়াতের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন করে জামায়াতকে গুরুত্বহীন করে রাখাসহ নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি বিবেচনায় দলটি বিএনপির সঙ্গে আর জোটে না থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি জামায়াতের নীতিনির্ধারণী পর্ষদ কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরার বৈঠকে অধিকাংশ সদস্যের মতামতের ভিত্তিতে জামায়াত এ সিদ্ধান্ত নেয়। তবে দলটি আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছাড়ার ঘোষণা দেবে না। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে তারা ২০-দলীয় জোটের কার্যক্রম থেকে নিষ্ক্রিয় থাকবে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজকের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট হচ্ছে, জনগণের অধিকারগুলো কেড়ে নিয়ে তাদের বাইরে রেখে ক্ষমতা দখল করা হয়েছে। এর বিরুদ্ধে কে কোন প্ল্যাটফর্ম থেকে কাজ করবে, সেটা তার সিদ্ধান্ত। কোনো বিশেষ দল যদি মনে করে তারা এর বাইরে গিয়ে সে কাজটি করবে, সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। বিএনপির সঙ্গে কেউ থাকতে চাইলে থাকবে, এর বাইরে গিয়ে যদি একই দাবিতে লড়াই করতে চায়, সেটা জামায়াত হোক বা অন্য কোনো দল হোক—তাতে সমস্যা নেই।’