সরকারি দল খালি মাঠে গোল দিচ্ছে

তোফায়েল আহমেদ
তোফায়েল আহমেদ

বাংলাদেশে রাজনৈতিক গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে যেন এক অন্ধকার যুগের সূচনা শুরু হতে চলেছে। বিগত দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর দেশে নতুন কোনো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। উপজেলা পরিষদ, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর পদে নির্বাচন এবং ঢাকা উত্তরের উপনির্বাচনে মেয়র পদে নির্বাচন—সবখানেই একই অন্ধকারের ছায়া বিস্তৃত। এই অন্ধকারের দিকে যাত্রা এক দিনে হয়নি। এখন নির্বাচন নিয়ে ভোটারের কোনো উৎসাহ নেই। প্রার্থীর যোগ্যতা–অযোগ্যতার প্রশ্ন নেই। সরকারি দল ছাড়া বাকিদের দরজা-জানালা প্রায় বন্ধ। সরকারি দল সর্বত্র খালি মাঠে গোল দিয়ে চলেছে। এখন সরকারি দলের মনোনয়ন বা আশীর্বাদই বিজয়ী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

প্রথাসিদ্ধভাবে নির্বাচিত স্থানীয় সরকার পরিষদসমূহ গঠিত হচ্ছে বা হবে। কিন্তু সেই পরিষদসমূহ দায়িত্ব–কর্তব্য পালনের দিক থেকে নিষ্প্রভ ও নিষ্ক্রিয় থাকছে। স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও কাজকর্মের গুণমান, সর্বোপরি নীতিনৈতিকতার চর্চা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। একধরনের নেতৃত্বের অধিষ্ঠান এসব নির্বাচনের মাধ্যমে হচ্ছে। কিন্তু একদিকে নীতিনৈতিকতা ধারণ করা ব্যক্তিরা এসব নির্বাচন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন, অপরদিকে এমন কিছু লোক প্রার্থী হচ্ছেন, তাঁদের কাছে মানুষের হতাশা ছাড়া প্রত্যাশা নেই।

স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উপজেলা পরিষদ বরাবরই ছিল অকার্যকর। আইনকানুনের স্ববিরোধিতা বা অস্পষ্টতা, নেতৃত্বের নানামুখী দ্বন্দ্বের কারণে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান ছাড়া কেউ এই পরিষদের মালিকানা বোধ করেন না। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়ররা এই পরিষদের সদস্য হলেও তাঁরা এই পরিষদকে নিজের প্রতিষ্ঠান বলে মনে করতে চান না। শুধু বরাদ্দের জন্য এখানে আসেন। এক–তৃতীয়াংশের নারী প্রতিনিধিত্ব থাকার কথা থাকলেও সত্যিকার অর্থে তা অনুপস্থিত। সরকারের ১৭টি বিভাগ উপজেলা পরিষদের অধীনে হস্তান্তরিত হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ওই সব বিভাগ উপজেলা পরিষদের অংশ হিসেবে কাজ করতে চায় না। এ বিষয়ে সরকারও যেন উদাসীন। এ ছাড়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সব সময় সাংসদের নির্দেশনা মেনে কাজ করতে হয়।

সুতরাং এ রকম একটি অবস্থার মধ্যে অনেকেই এই অকার্যকর পরিষদের নেতৃত্ব নিতে চান না। চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী কমে যাওয়ার এটি একটি কারণ হতে পারে। আর বিরোধী দল না থাকলে নির্বাচন যে জমতে পারে না, সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের সুপারিশ ছিল আগে উপজেলা পরিষদের আইনকানুনগুলোগুলো সংশোধন করে নির্বাচনটি দেওয়া হোক। সেটিও মানা হয়নি। এসব কারণে নির্বাচনটি নিয়ে প্রার্থী বা ভোটারদের আগ্রহ তেমন নেই।

তোফায়েল আহমেদ, স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ