ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজাকে হত্যার দায় স্বীকার করে গৃহকর্মীর জবানবন্দি

মাহফুজা চৌধুরীর ফাইল ছবি
মাহফুজা চৌধুরীর ফাইল ছবি

রাজধানীর ইডেন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীনকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন গৃহকর্মী রিতা আক্তার ওরফে স্বপ্না (৩৭)।
সন্দেহভাজন খুনি রিতা আক্তার আদালতকে বলেছেন, এই খুনের মূল পরিকল্পনাকারী হলেন আরেক গৃহকর্মী রুমা ওরফে রেশমা (৩০)।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নিউমার্কেট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আলমগীর হোসেন মজুমদার বুধবার রাতে প্রথম আলোকে বলেন, সাবেক অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরীকে হত্যা করার কথা আদালতের কাছে স্বীকার করেছেন রিতা। টাকাপয়সার লোভে বালিশচাপা দিয়ে তাঁরা মাহফুজাকে খুন করেছেন বলে আদালতকে জানিয়েছেন।

নিহত মাহফুজার স্বামী ইসমত কাদির গামা বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, গৃহকর্মী রেশমার সঙ্গে তাঁর স্ত্রীর ভালো সম্পর্ক ছিল। কোনোভাবেই তিনি বুঝতে পারেননি, এই দুই গৃহকর্মী নৃশংসভাবে তাঁর স্ত্রীকে খুন করে বাসার মালামাল নিয়ে যাবেন।


মাহফুজা চৌধুরী ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রাজধানীর এলিফ্যান্ট রোডের সুকন্যা টাওয়ারের বাসায় খুন হন। এ ঘটনায় মাহফুজা চৌধুরীর স্বামী দুই গৃহকর্মী রেশমা ও রিতার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মামলা করেন। মামলায় বলা হয়, গৃহকর্মী রেশমা ও রিতা পরস্পর যোগসাজশে মাহফুজাকে হত্যা করে বাসার ২০ ভরি সোনা, একটি মোবাইল সেট ও নগদ ৫০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।

মামলার পাঁচ দিনের মাথায় গৃহকর্মী রিতা এবং রুনু বেগম নামের আরেক নারীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রিতা বুধবার স্বীকারোক্তি দেওয়ার পর তাঁকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর চার দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর আজ রুনু বেগমকেও কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত।

আদালত সূত্র বলছে, মাহফুজা চৌধুরীকে খুন করার পরিকল্পনা হয় গত ৯ ফেব্রুয়ারি। পরের দিনই রিতা ও রেশমা দুজনে মিলে হত্যা করে বাসার মালামাল নিয়ে পালিয়ে যান।

গৃহকর্মী রিতা ও রুনুর ফাইল ছবি
গৃহকর্মী রিতা ও রুনুর ফাইল ছবি

তদন্ত কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, মাহফুজা চৌধুরীর বাসায় রিতা কাজে যোগ দেন ২ ফেব্রুয়ারি। সেখানে নিজের নাম বলেছিলেন স্বপ্না। তাঁর বাড়ি কিশোরগঞ্জে। অথচ রিতার বাড়ি নেত্রকোনায়। খুন করার আগের দিন গৃহকর্মী রেশমা ও রিতা মিলে ঠিক করেন, ১০ ফেব্রুয়ারি মাহফুজা চৌধুরীকে খুন করবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী সেদিন মাহফুজা দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমিয়ে পড়লে দুজনে মিলে শ্বাস রোধ করে তাঁকে হত্যা করেন। রিতা ও রেশমা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে গাবতলী যান। রিতা চলে যান নেত্রকোনায় নিজের বাড়িতে। রিতাকে রেশমা জানিয়ে যান, তিনি যাবেন সায়েদাবাদ।

এসআই আলমগীর বলেন, গৃহকর্মী রিতার ধারণা ছিল, পুলিশ তাঁকে খুঁজে পাবে না। কারণ তিনি তো তাঁর আসল ঠিকানা দেননি। এ কারণে খুন করার পর নিজের বাড়িতে চলে যান।

পুলিশ কর্মকর্তা আলমগীর জানান, এখন পর্যন্ত গৃহকর্মী রেশমার কোনো হদিস তাঁরা পাননি। তবে রেশমা কাজে যোগ দেওয়ার সময় বলেছিলেন, তাঁর বাড়ি ফরিদপুরে। কিন্তু সেটা সঠিক ঠিকানা নয়। গৃহকর্মীর দুজন কেউ মোবাইল ফোন ব্যবহার করতেন না। আদালতকে পুলিশ প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, রিতার কাছ থেকে পাওয়া গেছে নিহত মাহফুজা চৌধুরীর সোনার চেইন ও তাঁর ভ্যানিটি ব্যাগ।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার ১৫ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিকদের জানান, গৃহকর্মী রিতা ও রেশমার ছবি ছিল মাহফুজা চৌধুরীর মুঠোফোনে। দুজনের ঠিকানাও লেখা ছিল মাহফুজার ডায়েরিতে। হত্যার পর মুঠোফোন ও ডায়েরির পাতা দুটিই তাঁরা সঙ্গে করে নিয়ে চলে যান।

মামলার বাদী ইসমত কাদির গামা অবিলম্বে অপর সন্দেহভাজন খুনি গৃহকর্মী রেশমাকে গ্রেপ্তার করার দাবি জানিয়েছেন। গামা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান। মাহফুজা চৌধুরী ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইডেন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন। সুকন্যা টাওয়ারের ১৫ ও ১৬ তলায় দুটি ফ্ল্যাটে (ডুপ্লেক্স) এই দম্পতির বহুদিনের সংসার। ওপরের অংশটিতে তাঁরা থাকেন। নিচতলায় রান্নাঘর, গৃহকর্মীদের আবাস। তাঁদের দুই ছেলের একজন সেনাবাহিনীর চিকিৎসক, আরেকজন ব্যাংকে চাকরি করেন বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা।