মর্গের সামনে কাওসারের যমজ সন্তান

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে কাওসারের মায়ের বিলাপ। ছবি: দীপু মালাকার
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গের সামনে কাওসারের মায়ের বিলাপ। ছবি: দীপু মালাকার

স্ত্রী আর ফুটফুটে যমজ সন্তান নিয়ে সংসার কাওসারের। রয়েছেন মা, বাবা, ভাইসহ আত্মীয়স্বজন। সবাইকে রেখে কি তিনি চলেই গেলেন না–ফেরার দেশে? জীবিত পাওয়ার আশা ছেড়ে তাঁর লাশের খোঁজে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গের সামনে ছুটে বেড়াচ্ছেন স্বজনেরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মোহাম্মদ কাওসার আহমেদ খুবই মেধাবী ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় হয়েছিলেন ১৭তম। পড়াশোনার পাশাপাশি চকবাজারে মদিনা মেডিকেল হল ক্লিনিক চালাতেন কাওসার। ঘটনার দিন ওই ক্লিনিকেই ছিলেন তিনি।

কাওসারের ভাই ইলিয়াস শুনেছেন, ভয়াবহ ওই আগুনে দগ্ধ হয়ে কাওসারসহ অন্তত পাঁচজন পুড়ে মারা যান। মর্গের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘ও নেই জানতে পারছি। লাশ মর্গে আসছে। তবে দেখতে পাচ্ছি না, খুঁজছি।’

সবাইকে রেখে কি চলেই গেলেন হাফেজ মোহাম্মদ কাওসার আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত
সবাইকে রেখে কি চলেই গেলেন হাফেজ মোহাম্মদ কাওসার আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

ঘটনার খবর শুনেই মর্গে ছুটে আসেন কাওসারের দুই ভাই, মা ও স্ত্রী মুক্তা। তাঁদের কোলে রয়েছে ছোট্ট ফুটফুটে দুই শিশু। তারা কাওসারের যমজ ছেলে-মেয়ে আবদুল্লাহ ও মেহজাবীন। স্বজনেরা ওদের মুখের দিকে তাকাতে পারছেন না। অবিরাম চোখ বেয়ে ঝরছে পানি। বিলাপ করছেন মা। কী বোঝাবেন দুই অবোধ শিশুকে?

পেশায় দাঁতের চিকিৎসক ইলিয়াস বলেন, ‘আমি, ইয়ামীন, ফয়সাল, কাওসার, আমরা চার ভাই। কাওসার মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।’ পার্টনারশিপে ক্লিনিকের ব্যবসা শুরু করেন কাওসার। বাবার নাম খলিলুর রহমান। কুমিল্লায় বাড়ি। সবাই থাকতেন চকবাজারে

কাওসারের যমজ দুই শিশু সন্তান। ছবি: দীপু মালাকার
কাওসারের যমজ দুই শিশু সন্তান। ছবি: দীপু মালাকার

ইলিয়াস বলেন, আগুনের সময় ক্লিনিকের ভবনের গেট বন্ধ ছিল। খোলা থাকলে হয়তো ভাইকে পেতেন। ওই ক্লিনিকে কাওসারের সঙ্গে ছিলেন তিন দাঁতের চিকিৎসক ও এক রোগী। এর মধ্যে ইমতিয়াজ ও আশরাফুল নামের দুই চিকিৎসক অন্য চিকিৎসকের অধীনে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন।

কাওসারের যমজ শিশুর একজন। ছবি: দীপু মালাকার
কাওসারের যমজ শিশুর একজন। ছবি: দীপু মালাকার

কাওসারের স্বজনদের মতো হাজারো মানুষের বিলাপে ও কান্নায় ভারী হয়ে গেছে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গ। স্বজন হারানোর বেদনা যেমন রয়েছে, তেমনি লাশগুলো দ্রুত চাইছেন তাঁরা।

আরও পড়ুন: