নিহতদের মধ্যে সাতজনই সোনাইমুড়ীর বাসিন্দা

ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হেলাল উদ্দিনের মা জহুরা বেগমের আহাজারি। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামে।  ছবি: প্রথম আলো
ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হেলাল উদ্দিনের মা জহুরা বেগমের আহাজারি। গতকাল দুপুর সোয়া ১২টায় নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর গ্রামে। ছবি: প্রথম আলো

শোকে মুহ্যমান নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার নাটেশ্বর ইউনিয়ন। গোটা ইউনিয়নের বাসিন্দারাই যেন শোকের সাগরে ভাসছেন। গত বুধবার রাতে ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টার ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে এই ইউনিয়নেরই দুই ভাইসহ সাতজনের মৃত্যুর বিষয়টি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া গেছে।

এ ছাড়া পাশের বারগাঁও ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের আরও একজন মারা গেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। অনেকে এরই মধ্যে স্বজনদের খোঁজে ঢাকায় ছুটে গেছেন। চকবাজারের চুড়িহাট্টায় সোনাইমুড়ীর বাসিন্দাদের দোকানপাট ও বসবাস রয়েছে।

নিহত ব্যক্তিরা হলেন নাটেশ্বর ইউনিয়নের দক্ষিণ ঘোষকামতা গ্রামের সাহাব উল্যাহর দুই ছেলে মাহবুবুর রহমান ওরফে রাজু (২৮) ও মাসুদ রানা (৩৬), নাটেশ্বর গ্রামে সৈয়দ আহম্মদের ছেলে হেলাল উদ্দিন (৩২), পশ্চিম নাটেশ্বর গ্রামের আলী হোসেন (৬৫) ও মির্জাপুর গ্রামের মৃত মমিন উল্যাহর ছেলে শাহদাত উল্যাহ ওরফে হিরা (৩২), মৃত গাউছ আলমের ছেলে মো. নাছির উদ্দিন (৩২) ও পূর্ব মির্জা নগর গ্রামের আবদুর রহিমের ছেলে আনোয়ার হোসেন ওরফে মঞ্জু (৩৮) এবং বারগাঁও ইউনিয়নের দৌলতপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে আনোয়ার হোসেন (৩০)।

নিহত দুই সহোদরের ঘোষকামতা গ্রামের বাড়িতে গেলে কান্নার রোল শোনা যায়। কাঁদছিলেন ফুফু, জেঠি, চাচিসহ আশপাশের মানুষ। আশপাশের শত শত মানুষ খোঁজখবর নিতে আসেন বাড়িতে। বাড়ির লোকজন জানান, বৃহস্পতিবার রাতের মধ্যেই দুই ভাইয়ের মরদেহ গ্রামের বাড়িতে আসার কথা রয়েছে। এ জন্য পারিবারিক কবরস্থানও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে।

এক মাস আগে বিয়ে করেছিলেন রাজু

চকবাজারে চুড়িহাট্টায় মুঠোফোন সার্ভিসিং ও রিচার্জের ব্যবসা করতেন দক্ষিণ ঘোষকামতা গ্রামের দুই ভাই মাসুদ রানা (৩৬) মাহবুবুর রহমান ওরফে রাজু (২৮)। মাত্র এক মাস আগে বিয়ে করেন রাজু। ঢাকায় পারিবারিকভাবে বিয়ে হওয়ার পর সেখানেই নতুন সংসার শুরু করেন তিনি।

রানা ও রাজুকে কোলেপিঠে করেই মানুষ করেন চাচি বিবি ছকিনা। গতকাল দুপুরে বাড়িতে গিয়ে নিকটাত্মীয় বলতে কেবল তাঁকেই পাওয়া যায়। রানা ও রাজুকে তিনি হাসান-হোসেন বলে সম্বোধন করে বিলাপ করতে থাকেন।

ছেলের জন্য হেলালের মায়ের আহাজারি

‘তোমরা আমার হেলালকে এনে দাও। আমার হেলালের কী হয়েছে? আমি হেলালকে ছাড়া বাঁচব না’ বলে অঝোর ধারায় কাঁদছেন আর বিলাপ করছেন চুড়িহাট্টায় আগুনে পুড়ে নিহত হেলাল উদ্দিনের মা জহুরা বেগম। পুত্রের শোকে অনেকটা নির্বাক হয়ে গেছেন বাবা সৈয়দ আহম্মদও।

গতকাল দুপুরে বাড়িতে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপকালে সৈয়দ আহম্মদ বলেন, হেলাল স্ত্রী নিয়ে ঢাকায় থাকতেন। বড় ভাই বেলালসহ একসঙ্গে ব্যবসা করতেন চুড়িহাট্টায়। বুধবার রাত ১০টা ১০ মিনিটে স্ত্রী বাসায় যাওয়ার জন্য ফোন করলে হেলাল জানান, পাশের দোকানে মুঠোফোন রিচার্জ করতে গেছেন। ১০ মিনিট পরই তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। যে দোকানে রিচার্জ করতে গিয়েছিলেন, সেখানেই আগুনে পুড়ে হেলাল মারা যান। সেখানে মারা যান দুই ভাই রাজু ও রানাও।

বাবার জন্য দুই মেয়ের কান্না

ঘরের দরজার চৌকাঠের ওপর বসে বাবা আলী হোসেনের (৬৫) জন্য কাঁদছেন দুই মেয়ে সামছুন্নাহার ও তাজনেহার। আলী হোসেন চকবাজারে একটি ব্যাগের কারখানায় চাকরি করতেন।

কাঁদতে কাঁদতে দুই বোন বলেন, তাঁরা তিন ভাই ও পাঁচ বোন। পরিবারের ঘানি টানতে টানতেই দিনরাত ব্যস্ত ছিলেন বাবা। বাড়িতে ভালোভাবে একটি ঘরও করতে পারেননি এখনো। দোচালা একটি ছোট্ট টিনের ঘরই তাঁদের মাথা গোঁজার ঠাঁই। ছোট বোন পূর্ণিমা বিবাহ উপযুক্ত। তাঁকেও বিয়ে দিয়ে যেতে পারেননি বাবা। কেন আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে গেলেন? কে আমাদের দেখাশোনা করবে?