সরু গলিতে হিমশিম খেয়েছে ফায়ার সার্ভিস

চুড়িহাট্টার গলিগুলো এমনই সরু। এতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশে ঘটেছে বিপত্তি।  প্রথম আলো
চুড়িহাট্টার গলিগুলো এমনই সরু। এতে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশে ঘটেছে বিপত্তি। প্রথম আলো
>

• চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ড
• চুড়িহাট্টা মোড়ের দিকে যাওয়া গলিগুলো মাত্র ৮ থেকে ১০ ফুট চওড়া
• লম্বা পাইপ দিয়ে পানি টেনে নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চলে

আগুন দ্রুত ছড়াচ্ছিল। ছড়িয়ে পড়ছিল আশপাশের ভবনে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ছুটে গিয়েছিল ফায়ার সার্ভিসের বেশ কিছু গাড়ি। কিন্তু ঘটনাস্থলের কিছু দূরে থেমে যেতে হয় সেগুলোকে। কারণ, সরু গলি দিয়ে গাড়িগুলোর আর এগুনোর সুযোগ ছিল না। ফায়ার সার্ভিসের নিরুপায় কর্মীরা লম্বা পাইপ দিয়ে পানি টেনে নিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা চালান।

পুরান ঢাকার চকবাজারের চুড়িহাট্টায় আগুন নেভানোর কাজে নিয়োজিত ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানালেন, সড়কগুলো সরু হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে তাঁদের বেশি সময় লেগেছে। এ ছাড়া সরু সড়কের ওপর দিয়ে যাওয়া বিদ্যুৎ, ইন্টারনেট, ডিশের তারও অগ্নিনির্বাপণ কাজে বিঘ্ন ঘটায়।

রাজধানীর অন্য এলাকা থেকে চুড়িহাট্টা মোড়ে যাওয়ার প্রধান পথ উর্দু রোড ও ওয়াটার ওয়ার্কস রোড। এই দুটি রোড থেকে পৃথক চারটি গলি পৌঁছেছে চুড়িহাট্টা মোড়ে। এই গলিগুলো মাত্র ৮ থেকে ১০ ফুট চওড়া। এই পথে একটি ব্যক্তিগত গাড়ি ঢুকলে বিপরীত পাশ থেকে একটি রিকশারও ঠিকমতো যাওয়ার উপায় নেই।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জানান, এমন পরিস্থিতির কারণে চুড়িহাট্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে তাঁদের হিমশিম খেতে হয়। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে অনেক বেশি সময় লেগেছে।

গত বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে দেখা যায়, উর্দু রোডে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে ফায়ার সার্ভিসের সাতটি গাড়ি। এর মধ্যে দুটি গাড়িতে পাইপ লাগিয়ে চুড়িহাট্টার ওয়াহেদ ম্যানশনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় পানি ছিটাচ্ছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। কিন্তু ভবনগুলোর ভেতরে যেখানে আগুন জ্বলছে, সেখানে ঠিকমতো পানি পৌঁছানো যাচ্ছে না। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের মইও ছিল না। পাশের যে ভবন থেকে পানি ছিটানো যেত, সে ভবনেও একপর্যায়ে আগুন ধরে যায়।

আড়াইটার দিকে উর্দু রোডে ফায়ার সার্ভিসের বেশির ভাগ গাড়ির পানি মজুত শেষ হয়ে যায়। তখন পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পুকুরে পানির পাম্প বসানো হয়। সেখান থেকে পাইপে নন্দ কুমার দত্ত রোড দিয়ে চুড়িহাট্টায় পানি পৌঁছানো হয়। ওই পুকুর থেকে চুড়িহাট্টার দূরত্ব প্রায় আধা কিলোমিটার।

উর্দু রোড হয়ে ওয়াটার ওয়ার্কস রোডে যায় ফায়ার সার্ভিসের ছয়টি গাড়ি। এই রোড থেকে ওয়াহেদ ম্যানশন বা চুড়িহাট্টা মোড়ের দূরত্ব ৫০ থেকে ৬০ মিটার। এই গাড়িগুলোতে পাইপ লাগিয়ে পানি ছিটানো হয়। রাত তিনটার দিকে এই গাড়িগুলোর পানিও ক্রমান্বয়ে শেষ হয়ে যায়। পরে আজগর লেন, উর্দু রোড, ডালপট্টি লেন, ওয়াটার ওয়ার্কস রোড ও রহমতগঞ্জের বিভিন্ন বহুতল ভবনের ট্যাংক থেকে পানি সংগ্রহ করে ফায়ার সার্ভিস। এর মধ্যে চকবাজার শাহি মসজিদে পানির মজুত ছিল বেশি।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মী মিরাজুল ইসলাম ও আমজাদ হোসেন বলেন, গাড়ি নিয়ে আগুনের কাছাকাছি যাওয়া গেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব ছিল।

এদিকে ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় অনেক বাসিন্দা। তাঁদের অভিযোগ, আধুনিক যুগে আগুন নিয়ন্ত্রণে পানির ওপর নির্ভরশীল ফায়ার সার্ভিস। সরু গলির অজুহাতে তারা গাড়ি নিয়ে ঘটনাস্থলে যেতে পারেনি। অথচ বিশ্বের উন্নত দেশে আগুন নেভাতে অনেক আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক (প্রশিক্ষণ, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) লে. কর্নেল এস এম জুলফিকার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের আধুনিক যন্ত্রপাতি আছে। কিন্তু ওই এলাকার রাস্তাগুলো সরু হওয়ায় তা যথাযথভাবে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। পর্যাপ্ত পানিও পাওয়া যায়নি। তা করা গেলে অল্প সময়ের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো।