আত্মীয়র বাসা থেকে বের হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে সব শেষ

বাবা মো. সগির, ছেলে মো. জুনায়েদ
বাবা মো. সগির, ছেলে মো. জুনায়েদ

আজ রোববার স্ত্রী–সন্তানকে নিয়ে ভারতে যাওয়ার কথা ছিল তাঁর। সেখানে চিকিৎসা নেওয়ার পাশাপাশি দিল্লির হজরত নিজামউদ্দিন আউলিয়ার মাজার জিয়ারত করার কথা ছিল। ভারত যাওয়ার আগে নগরের মতিয়ার পুল এলাকায় ফুফুশাশুড়ির বাসায় দোয়া নিতে গিয়েছিলেন মো. সাগির (৪২) ও ছেলে মো. জুনায়েদ (১২)। সেখান থেকে ফেরার পথে বাবা-ছেলের প্রাণ নিল ট্রাক।

গত শুক্রবার রাত ১১টার দিকে নগরের ধনিয়ালাপাড়া এলাকায় মোটরসাইকেল আরোহী বাবা-ছেলেকে চাপা দেয় একটি ট্রাক। ঘটনাস্থলেই দুজনের মৃত্যু হয়। মতিয়ার পুলের আত্মীয়র বাসা থেকে বের হওয়ার পাঁচ মিনিটের মধ্যে এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান সাগিরের ফুফাশ্বশুর রায়হানুল আলম।

রায়হানুল আলম বলেন, ‘তাঁদের তিনজনের টিকিট প্রস্তুত। আগামীকাল (রোববার) সকালে বাসযোগে রওনা দেওয়ার কথা ছিল। প্রথমে কলকাতা থেকে বিমানে দিল্লি, এরপর ডাক্তার দেখিয়ে মাজার জিয়ারত করত। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেল। আমার বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই দুর্ঘটনায় মারা যায়।’

সাগিরের বাসা নগরের মনসুরাবাদের খান সাহেব আলী সড়কে। চার ভাইয়ের মধ্যে সাগির সবার ছোট। মনসুরাবাদ বাজারে তাঁদের একটি ডিপার্টমেন্টাল স্টোর রয়েছে।

দোকান আর বাসার দূরত্ব মাত্র কয়েক গজ। একমাত্র ছেলে জুনায়েদ পড়ত গণপূর্ত বিদ্যানিকেতনে পঞ্চম শ্রেণিতে। স্কুলটিও বাসার কাছাকাছি।

গতকাল শনিবার দুপুরে বাড়ির আঙিনায় পাড়া–প্রতিবেশীরা ভিড় করেছেন। সাগিরের সেজ ভাই মো. ইলিয়াস বলেন, ‘সাগির হলো টোয়েন্টি ফোর কমিউনিটি সেন্টারে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে গিয়েছিল ছেলেকে নিয়ে। বিয়ে থেকে ফেরার পথে মতিয়ার পুল এলাকায় ফুফাশ্বশুরের বাসায় যায়। সেখান থেকে পোস্তার পাড়ে শ্বশুরের বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মতিয়ার পুল থেকে বের হওয়ার পরই ট্রাক চাপা দেয়।’

বাসায় ঢোকার সময় দেখা যায়, দুটি অ্যাম্বুলেন্স পাশাপাশি দাঁড়ানো রয়েছে। দুটিতে বাবা ও ছেলের লাশ। আরেকটু সামনে যেতেই পাশাপাশি দুটি খাটিয়া। পুকুর পেরিয়ে সাগিরদের বাসা। একতলা টিনশেড বাসায় তখন মাতম চলছে। সাগিরের স্ত্রী নাসিমা আকতার কিছুক্ষণ পর পর মূর্ছা যাচ্ছিলেন। জ্ঞান ফিরলেই বিলাপ করছিলেন।

স্বামী ও ছেলেহারা নাসিমা আকতারের (ডান থেকে দ্বিতীয়) আহাজারি থামছেই না। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরাও। গতকাল বেলা দেড়টায় নগরের মনসুরাবাদের খান সাহেব আলী সড়কে।  সৌরভ দাশ
স্বামী ও ছেলেহারা নাসিমা আকতারের (ডান থেকে দ্বিতীয়) আহাজারি থামছেই না। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন স্বজনেরাও। গতকাল বেলা দেড়টায় নগরের মনসুরাবাদের খান সাহেব আলী সড়কে। সৌরভ দাশ

বিলাপ করে বারবার নাসিমা বলছিলেন, ‘প্রতিবেশী এক নারীর সঙ্গে সকালে বাড়ির সীমানা নিয়ে ঝগড়া হয়েছে। সেই থেকে মানসিকভাবে ঠিক ছিলেন না তিনি। আমার ছেলে ওই ঝগড়া মোবাইলে ভিডিও করেছে। আমাকে একা করে দুজনই চলে গেল। আমি কাকে নিয়ে থাকব?’

ট্রাকের ধাক্কায় দুমড়েমুচড়ে যায় মোটরসাইকেলটি। দুজনই পড়ে ছিলেন। এক পথচারী লাশের পকেট থেকে মোবাইল বের করে স্বজনদের ফোন দেন। তখনই স্বজনেরা জানতে পারেন তাঁদের সর্বনাশ হয়ে গেছে। নাসিমা আকতার বারবার আকুতি জানিয়ে যাচ্ছিলেন লাশ দেখানোর জন্য। কিন্তু কেউ সাহস করছিলেন না। কারণ লাশ দুটি যে থেঁতলে গেছে। পরে নাসিমাকে শুধু স্বামী-ছেলের দুই জোড়া পা দেখানো হয়।