মাসিক নিয়মিতকরণে ওষুধ জনপ্রিয় হচ্ছে

>

  • নারীরা মাসিক নিয়মিতকরণের ওষুধ প্রধানত পাচ্ছেন দোকান থেকে

  • তাঁরা সঠিক পরামর্শ পাচ্ছেন না

  • অনেকে স্বাস্থ্য জটিলতায় ভুগছেন

দেশে নারীদের কাছে ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে প্রশিক্ষণহীন স্বাস্থ্যকর্মীর কাছ থেকে ও দোকান থেকে ওষুধ খেয়ে বহু নারীর স্বাস্থ্য জটিলতা দেখা দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞ ও গবেষকেরা বলছেন, নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি দূর করে এই ওষুধ সহজলভ্য করতে হবে।

‘ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণে মানসম্মত সেবা ব্যবস্থার গবেষণা ফলাফল’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় তাঁরা এ কথা বলেন। নারী অধিকার সংগঠন নারীপক্ষ গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করেছিল। সভায় ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণে সেবার মান ও পরিস্থিতি নিয়ে গবেষণা ফলাফল উপস্থাপন করা হয়।

প্রজনন স্বাস্থ্যবিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা আইপাস বাংলাদেশের দেশীয় পরিচালক ডা. সাইদ রুবায়েত বলেন, দেশে প্রতিবছর ২৮ লাখ নারী ইচ্ছার বিরুদ্ধে বা অজান্তে গর্ভধারণ করেন। তাঁদের মধ্যে প্রায় সোয়া চার লাখ নারী মাসিক নিয়মিতকরণের পন্থা বেছে নেন, বাকি ১২ লাখ নারী গর্ভপাত ঘটান।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, সরকার ২০১৩ সালে ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ পদ্ধতি চালু করে। এর আগে মাসিক নিয়মিতকরণে যন্ত্র ব্যবহার করা হতো। বর্তমানে যন্ত্র ও ওষুধ দুই–ই ব্যবহৃত হচ্ছে।

নারীপক্ষ ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বরিশাল সিটি করপোরেশন এবং বরগুনা জেলার চারটি উপজেলার চারটি ইউনিয়নে ওষুধের মাধ্যমে মাসিক নিয়মিতকরণ সেবার ওপর একটি গবেষণা করেছে। গবেষণায় দলগত আলোচনা, সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র, এনজিও কর্মকর্তা ও ওষুধের দোকানিদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়।

গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন প্রধান গবেষক ও নারীপক্ষের সদস্য ড. তাসনিম আজিম। তিনি বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে শহর ও গ্রামের নারীদের কাছে এবং যৌনকর্মীদের কাছে মাসিক নিয়মিতকরণের ওষুধ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। নারীরা সহজে এই ওষুধ পেতে চান, তবে তাঁরা গোপনীয়তার বিষয়েও নিশ্চয়তা চান। অনেক নারী এটাই মনে করেন যে, বয়স ও বৈবাহিক অবস্থা নির্বিশেষে সব নারীর কাছে এই ওষুধ সহজপ্রাপ্য হওয়া উচিত। যদিও কিছু নারীর এ ব্যাপারে দ্বিমত আছে।

এই ওষুধের ব্যাপারে মানুষকে জানাতে বা সচেতন করতে কোনো কর্মসূচি নেই। সরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানে এই ওষুধ এখনো পাওয়া যায় না।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্যসেবা) মোহাম্মদ শরীফ বলেন, মানুষকে সচেতন ও সেবা সহজলভ্য করার জন্য এমআর নেটওয়ার্ককে শক্তিশালী করা হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বছরে সাত-আট লাখ নারী মাসিক নিয়মিতকরণ করেন, কিন্তু এক থেকে দেড় লাখ ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়।’

আলোচনায় অংশ নিয়ে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সেপটিক অ্যাবরশনের (বাপসা) গবেষণা উপদেষ্টা ড. জামিল হোসাইন চৌধুরী বলেন, দোকান থেকে ওষুধের পাশাপাশি নারীরা যেন সঠিক পরামর্শ পান, সে জন্য বিক্রেতাদের উদ্বুদ্ধ করতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে কাজ করতে হবে। নারীকে সঠিক তথ্য দিতে গণমাধ্যমকেও এগিয়ে আসতে হবে।

নারীপক্ষের নিরাপদ গর্ভপাত অধিকারের দাবিতে প্রকল্পের পরিচালক সামিয়া আফরীনের সঞ্চালনায় বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা তাঁদের কাজ করার অভিজ্ঞতা সভায় বর্ণনা করেন।