পিকআপে সিলিন্ডার ছিল না

>
  • ঘটনাস্থলে এলেন পিকআপের মালিক
  • গ্রেপ্তার হননি ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক
  • তদন্তের দ্বিতীয় ধাপে ঘটনাস্থল ফায়ার সার্ভিস পরিদর্শন করেছে

রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে রাখা পিকআপটি ফাঁকা ছিল। গ্যাস সিলিন্ডার ছিল না, চলত ডিজেলে। অথচ এই পিকআপটিতে এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল এবং সেখান থেকেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছিল বলে দাবি করে আসছিলেন চুড়িহাট্টা এলাকার ব্যবসায়ী ও বাড়ির মালিকেরা।

চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ আগুনের ঘটনার চার দিন পর গতকাল রোববার পিকআপটির (ঢাকা মেট্রো ন ১৭-৩১৭১) মালিক মো. দুদু মিয়া ঘটনাস্থলে এসেছিলেন। তিনি প্রথম আলোক বলেছেন, পিকআপটি তাঁর নিজের। চালাতেন নিজেই। এটি তাঁর জীবিকার একমাত্র সম্বল ছিল।

ওয়াহেদ ম্যানশনের ভূগর্ভে থাকা রাসায়নিকের গুদাম গতকালও অপসারণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তবে গতকালও বাড়িটির পলাতক দুই মালিককে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

চুড়িহাট্টা মোড়ের ঘটনাস্থলকে ঘিরে সকাল থেকেই ছিল উৎসুক মানুষের ভিড়। মোড়ে যাওয়ার পাঁচটি সড়কেই পুলিশ সদস্যদের পাহারা রয়েছে। তাঁদের টপকে ঘটনাস্থলে যেতে মানুষের পীড়াপিড়ি ছিল চোখে পড়ার মতো। সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে হিমশিম খাচ্ছিলেন পুলিশের সদস্যরা।

গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে গঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব প্রদীপ রঞ্জন চক্রবর্তী পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেছেন, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীসহ ৩৫ জনের সঙ্গে তাঁরা ইতিমধ্যে কথা বলেছেন। সিসি ক্যামেরার ফুটেজ এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদও সংগ্রহ করেছেন। তদন্তের দ্বিতীয় ধাপে তাঁরা গতকাল পরিদর্শনে আসেন বলে জানান।

পিকআপের মালিক দুদু মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, সেদিন সাভারের নামাগেন্ডা এলাকা থেকে খালি পিকআপ নিয়ে তিনি চুড়িহাট্টায় গিয়েছিলেন। ওয়াহেদ ম্যানশনের নিচতলার একটি দোকান থেকে প্লাস্টিকের দানা নিয়ে ফেরার কথা ছিল। পিকআপটি ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে রেখে তিনি দোকানে যান। দোকানদার নাহিদ তখন তাঁকে জানান, পিকআপে জিনিস তোলার লোক নেই। এর ফাঁকে পাশের রাজমহল হোটেল থেকে তিনি নাশতা করে আসছেন বলে বের হয়ে আসেন। হোটেলে ঢুকে ‘রুটি’ মুখে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এরপর তিনি দৌড়ে হোটেল থেকে বের হয়ে আসেন। চার–পাঁচ শ গজ দূরে এসে দাঁড়িয়ে দেখেন পারফিউমের ক্যান চারদিকে ছিটকে পড়ছে।

দুদু মিয়া বলেন, গাড়িটি তাঁর নিজের এবং এটিই তাঁর জীবিকার অবলম্বন ছিল। ঘটনার পর ২২ তারিখ এসে চকবাজার থানায় তিনি সাধারণ ডায়েরি করে গেছেন। এখন ইনস্যুরেন্স থেকে টাকা পেলে কিছুটা হলেও উপকৃত হবেন।

পুরান ঢাকার চকবাজারে চুড়িহাট্টা মোড়ে ভয়াবহ আগুনে ৬৭ জন মারা যান। ঘটনার পরপর বিস্ফোরণের উৎস ও কারণ নিয়ে নানা বক্তব্য আসতে থাকে। চুড়িহাট্টা মোড়ে বিদ্যুতের কোনো ট্রান্সফরমার না থাকলেও সেখান থেকে আগুনের উৎপত্তি হয়েছিল বলে দাবি করেন কেউ কেউ। কেউ বলেন, ওয়াহেদ ম্যানশনের সামনে থাকা দুদু মিয়ার এই পিকআপ হঠাৎ বিস্ফোরিত হয়ে ওপরে ওঠে। এরপর আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। আবার কারও কারও দাবি, দুদু মিয়ার পিকআপ বা যানজটে আটকা একটি পিকআপের ওপর থাকা এলপি গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণের পর আগুন চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে।

তবে ওয়াহেদ ম্যানশনের পাশের রাজমহল হোটেলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ, শেখ হায়দার বক্স লেনের একটি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা থেকে জানা যায়, ওয়াহেদ ম্যানশনের দোতলা থেকেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। সেখানে সুগন্ধির ক্যান ও বাল্বের গুদাম ছিল। লাইটার রিফিল করার ক্যানও সেখানে পাওয়া গেছে।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ওয়াহেদ ম্যানশনের মালিক দুই ভাই হাসান ও সোহেলকে আসামি করে চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন চুড়িহাট্টা এলাকার এক বাসিন্দা। কিন্তু ঘটনার পর থেকে তাঁরা পলাতক রয়েছেন। এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের চকবাজার অঞ্চলের অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. কামাল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একটি দল কাজ করছে।