'বেয়াড়া' পলাশ বলেছিলেন দুবাই যাচ্ছেন

মো. পলাশ আহমদ। ছবি: সংগৃহীত
মো. পলাশ আহমদ। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে কমান্ডো অভিযানে নিহত মো. পলাশ আহমদকে শনাক্ত করেছেন তাঁর বাবা। পলাশের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার পিরিজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা গ্রামে।

আজ সোমবার বেলা একটার দিকে তাঁর বাড়িতে গিয়ে বাবা পিয়ার জাহান সরদারের সঙ্গে কথা বলে তাঁর ছেলে পলাশের পরিচয়ের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়। পরিবারের সঙ্গে প্রায় সম্পর্কহীন পলাশের কর্মকাণ্ড নিয়েও কথা বলেন পিয়ার জাহান। তিনি জানান, তাঁর ছেলে ‘বেয়াড়া’ স্বভাবের ছিলেন। দুবাই যাওয়ার কথা বলে গত শুক্রবার বাড়ি ছাড়েন পলাশ।

দুধঘাটা গ্রামের পলাশদের একতলা কংক্রিটের বাড়িটি ঘিরে শত শত মানুষের জটলা। এরই মধ্যে কথা হয় পিয়ার জাহান সরদারের সঙ্গে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি সৌদি আরবে ছিলেন। এখন দেশে একটি মুদি দোকান করেছেন। তাঁর স্ত্রী রেণু বেগম। পিয়ার জাহান-রেণু দম্পতির চার সন্তানের মধ্যে পলাশ দ্বিতীয়। একটাই ছেলে তাঁদের। বাকি তিনজন মেয়ে।

পেয়ার জাহান বলেন, গতকাল রাতেই তিনি ছেলের পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে যান। গভীর রাতে পুলিশ ছবি নিয়ে আসে। তখন তিনি আরও নিশ্চিত হন।

পিয়ার জাহান জানান, স্থানীয় তাহেরপুর সিনিয়র মাদ্রাসা থেকে ২০১১ সালে পলাশ দাখিল পাস করেন। পরে সোনারগাঁ বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হন। প্রথম বর্ষের পর পড়াশোনা বন্ধ করে দেন। এরপর বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে যান। ঢাকায় কী করতেন, কোথায় থাকতেন পলাশ, সে সম্পর্কে তাঁরা কিছু জানতেনও না। বাড়িতে প্রায় আসতেনই না। ঢাকায় গান ও অভিনয় করতেন বলে স্থানীয় লোকজনের কাছে শুনেছেন তিনি।

পিয়ার জাহান জানান, গত কোরবানি ঈদের এক মাস আগে এবং এরপর এক সপ্তাহ আগে দুই দফায় পলাশ বাড়ি আসেন। তখন তাঁর সঙ্গে চলচ্চিত্র নায়িকা সিমলা ছিলেন বলে দাবি করেন পলাশের বাবা। তিনি বলেন, পলাশ তাঁকে জানান, সিমলাকে তিনি বিয়ে করেছেন। তবে পলাশের এই বিয়েতে প্রবল আপত্তি করেন তাঁরা। এ কারণে যেদিন এসেছিলেন, ওই দিনই সিমলা ও পলাশ ঢাকায় চলে যান।

পিয়ার জাহান বলেন, ‘ছেলে বেয়াড়া ছিল। কী করত, কোথায় থাকত, তা জানতাম না।’ পলাশের বাবা জানান, সর্বশেষ একটানা ১৫ দিন বাড়ি ছিলেন পলাশ। এর আগে এতটা সময় তিনি বাড়ি থাকেননি। দুবাই যাবেন বলে মা-বাবাকে তিনি জানান। তাঁর এই কথায় কোনো আপত্তি করেননি তাঁরা। দুবাই যাওয়ার কথা বলে গত শুক্রবার বাড়ি ছেড়ে যান পলাশ।

পলাশের জাতীয় পরিচয়পত্র ছিল না বলে জানান পলাশের বাবা। নাম মো. পলাশ আহমদ হলেও ফেসবুকে মাহি বি জাহান নামে অ্যাকাউন্ট আছে তাঁর। ওই অ্যাকাউন্টে দেওয়া ছবিগুলোও বাবা পিয়ার জাহান শনাক্ত করেন।

পলাশের মা রেণু বেগম গতকালই হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসেছেন। তাঁর স্ট্রোক হয়েছিল। বাড়ি এসে ছেলের কথা শোনার পর বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন মা।

নিহত পলাশের লাশ এখন ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের মর্গে আছে। তবে ছেলের লাশ চান না বাবা। বললেন, ‘দেশের বিরুদ্ধে যে কাজ করেছে, তার লাশ চাই না।’

সোনারগাঁ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল কালাম আজাদ বলেছেন, দিবাগত রাত দুইটার দিকে ঢাকা থেকে পলাশের ছবি পাঠানো হয় থানায়। মা-বাবাকে দেখিয়ে তাঁরা নিশ্চিত হন যে এটিই পলাশ। আবুল কালাম আজাদ বলেন, পলাশের নামে স্থানীয় থানায় কোনো মামলা নেই।

চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের ময়ূরপঙ্খী উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে কমান্ডো অভিযানে নিহত পলাশ আহমদের নাম ও পরিচয় উদ্ধারের দাবি করে র‌্যাব। আজ র‌্যাবের পাঠানো খুদে বার্তায় বলা হয়েছে, অপরাধীদের তথ্যভান্ডার অনুযায়ী ওই ব্যক্তির নাম মো. পলাশ আহমদ।

র‌্যাব বলছে, গতকাল রোববারের কমান্ডো অভিযানে নিহত ওই যুবকের আঙুলের ছাপ র‌্যাব ক্রিমিনাল ডেটাবেইসের একজন অপরাধীর সঙ্গে মিলে যায়।

আরও পড়ুন: