হলফনামা গোপন থাকবে?

পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রথম দফায় আগামী ১০ মার্চ রাজশাহীতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতীক বরাদ্দের পরপরই প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছেন। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা প্রার্থীদের হলফনামা এখনো প্রকাশ করেননি। রিটার্নিং কর্মকর্তা এক সপ্তাহ ধরে বিষয়টি দেখার কথা বললেও কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করা হয়নি প্রার্থীদের তথ্য। পাঁচ বছর আগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা প্রার্থীদের তথ্যই ঝুলছে কমিশনের ওয়েবসাইটে।

নির্বাচন কমিশনের সাবেক অতিরিক্ত সচিব জেসমিন টুলী মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, হলফনামা প্রচার ও প্রকাশ করার বিধান রয়েছে। কেন সেটা প্রচার করা হয়নি এবং হচ্ছে না, তা বোধগম্য নয়। তবে প্রার্থীদের তথ্য জানার অধিকার ভোটারদের রয়েছে। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে বিগত নির্বাচনের প্রার্থীদের তথ্য দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটা ভুলে করা হয়েছে কি না, সে বিষয়টি কমিশনের নজরে আনতে হবে।

১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত নির্বাচন কমিশনের পরিপত্রে বলা হয়েছে, হলফনামা ছাপিয়ে প্রচার ও স্থানীয় পত্রিকার মাধ্যমে প্রকাশ করতে হবে। এর কপি রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে ঝোলানো ছাড়াও ব্যাপক প্রচার, গণমাধ্যম ও এনজিওকর্মীদের মধ্যে সরবরাহ করতে হবে।

তফসিল মোতাবেক প্রথম ধাপে রাজশাহীর একটি বাদে আটটি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৯ ফেব্রুয়ারি ছিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন। এখন পর্যন্ত প্রার্থীদের হলফনামা প্রচার বা প্রকাশ করা হয়নি। নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে ‘২০১৯ সালের প্রার্থীদের প্রদত্ত ব্যক্তিগত তথ্য’ উল্লেখ করা হলেও যুক্ত করা হয়েছে চতুর্থ উপজেলা পরিষদের (২০১৪) প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হলফনামাসহ তথ্য।

এবার বাগমারায় চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের অনিল কুমার সরকার ও বিদ্রোহী বাবুল হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ইসির ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়েছে চারজন প্রার্থীর তথ্য। যাঁরা চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। অন্য পদেরও একই অবস্থা। গতকাল রোববার বিকেল চারটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিগত বছরের তথ্যই রয়েছে কমিশনের ওয়েবসাইটে।

প্রার্থীদের হলফনামা চেয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে ধরনা দিয়েও গণমাধ্যমকর্মী ও স্থানীয় সরকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলো তা পায়নি। কর্মকর্তারা বিভিন্ন প্রশিক্ষণে থাকা এবং স্ক্যান করা হয়নি—এমন নানা অজুহাতে তা দেওয়া থেকে বিরত থাকেন। এ ছাড়া প্রার্থীদের হলফনামা সরবরাহ করা হয়নি ভোটারদের মধ্যে। এই প্রতিবেদক তিন দিন আগে রাজশাহী জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানান। হলফনামা পাওয়া যাচ্ছে না বলেও অভিযোগ করেন। তবে গতকাল পর্যন্ত হলফনামা পাওয়া যায়নি। বাগমারা উপজেলা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরেও হলফনামা পাওয়া যায়নি।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) রাজশাহীর বিভাগীয় সমন্বয়ক সুব্রত কুমার পাল অভিযোগ করে বলেন, তিনিও হলফনামা সংগ্রহের জন্য কয়েক দফায় রিটার্নিং কর্মকর্তার দপ্তরে গিয়ে তা পাননি। কমিশনের ওয়েবসাইটেও ভুল তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। তাঁরা হলফনামা প্রচার এবং প্রার্থী ও ভোটারদের মুখোমুখি অনুষ্ঠান করার উদ্যোগ নিলেও হলফনামা না পাওয়ার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। অনুষ্ঠানটি পেছানো হয়েছে।

স্থানীয় সরকার নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠনের কর্মকর্তারা বলেছেন, ‘প্রার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করে ভোটাররা তাঁদের নির্বাচিত করবেন। তাঁদের সম্পদ, আয় ও ব্যয়ের উৎস জানার অধিকার ভোটারদের রয়েছে। এবার কমিশন কেন এটা নিয়ে লুকোচুরি করছে, তা বুঝতে পারছি না।’

বাগমারা উপজেলা পরিষদের আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী অনিল কুমার সরকার প্রথম আলোকে বলেন, তিনি হলফনামা দাখিল করেছেন। হলফনামায় দেওয়া দেওয়া তথ্য প্রচার হলে কোনো সমস্যা নেই।

রিটার্নিং কর্মকর্তা সাইফুল ইসলামের সঙ্গে গতকাল বিকেলে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংযোগ কেটে দেন। তিনি সভায় রয়েছেন এবং পরে কথা বলবেন বলে খুদে বার্তার মাধ্যমে জানিয়েছেন। তবে পরে আর যোগাযোগ করেননি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে এর আগে তিনি জানিয়েছিলেন।