২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে টাস্কফোর্সের অভিযান

>
  • মার্চ মাসের মধ্যে রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরাতে হবে
  • পাওয়া গেলে সব সেবা–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে
  • টাস্কফোর্সের দুটি কমিটি হয়েছে
প্রথম আলো ফাইল ছবি।
প্রথম আলো ফাইল ছবি।

পুরান ঢাকা থেকে সব রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরিয়ে ফেলতে হবে আগামী মাসে, অর্থাৎ মার্চের মধ্যে। এ নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অভিযান পরিচালনা করবে জাতীয় টাস্কফোর্স। এই অভিযানে কোনো ভবনে দাহ্য পদার্থের কোনো কারখানা বা গুদাম পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিকভাবে ওই ভবনের সব সেবা–সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক কেমিক্যাল কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আয়োজিত সমন্বয় সভায় গতকাল সোমবার এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সমন্বয় সভায় মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ২৮ ফেব্রুয়ারি টাস্কফোর্স কাজ শুরু করবে। ম্যাজিস্ট্রেটরা আইনগতভাবে কাজ শুরু করবেন। ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক কারখানার অস্তিত্ব পাওয়া গেলে তাঁরা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

তবে পুরান ঢাকার রাসায়নিক ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতি দাহ্য কোনো রাসায়নিকের কারখানা ও গুদাম এখন পুরান ঢাকায় নেই। বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) রাসায়নিক বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল অ্যান্ড পারফিউমারি মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন বলেন, ‘অতি দাহ্য রাসায়নিকের গুদাম বা কারখানা আগেই অন্যান্য এলাকায় চলে গেছে। তবে অন্যায়ভাবে কেউ থাকলে সেটা আমরা ধরিয়ে দেব।’ তিনি বলেন, ‘যেসব রাসায়নিক অতি দাহ্য নয়, সেগুলোর বিষয়ে মেয়র আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন।’

এদিকে বিকেলে চকবাজারের অগ্নিকাণ্ডের পর শিল্প মন্ত্রণালয়ের আশু করণীয় নিয়ে আয়োজিত সভায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, রাসায়নিকের গুদাম সরিয়ে নিতে আগামী ছয় মাসের মধ্যে শিল্পনগর তৈরি করে দেবে শিল্প মন্ত্রণালয়। সভা শেষে সাংবাদিকদের জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় রাসায়নিক পল্লির জমির পরিমাণ ৫০ একর থেকে বাড়িয়ে ২০০ একর করার চিন্তা করা হচ্ছে। এ জন্য কেরানীগঞ্জে নতুন কয়েকটি জায়গা দেখা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কাজ শুরু হয়েছে। সরকারি প্রকল্পের বিভিন্ন ধাপ থাকে, সেটা এড়িয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। এ ক্ষেত্রে ছয় মাসের বেশি লাগবে না বলে আশা করা হচ্ছে।

২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে অভিযান

ডিএসসিসির সমন্বয় সভায় মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, পুরান ঢাকার রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম জোরদার করতে জাতীয় টাস্কফোর্সের দুটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি সরকারি সংস্থা ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর প্রধানদের নিয়ে গঠিত হবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর প্রতিনিধি ও ব্যবসায়ী সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত টাস্কফোর্সের আরেকটি কমিটি পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরিয়ে নিতে কার্যক্রম পরিচালনা করবে।

সভায় সাংসদ হাজি মো. সেলিম, পুলিশের মহাপরিদর্শক মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আলী আহমেদ খান, বিস্ফোরক অধিদপ্তরের প্রধান পরিদর্শক শামসুল আলম, ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান, তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা কামাল, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক সোহরাব আলী, ঢাকা জেলা প্রশাসক আবু ছালেহ মোহাম্মদ ফেরদৌস খান, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, পুরান ঢাকা ব্যবসায়ী ঐক্য ফোরামের সভাপতি আবদুস সালাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রাসায়নিকের গুদাম সরানো প্রসঙ্গে নগর–পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, নিমতলীর দুর্ঘটনার পর কমিটির সুপারিশ মানলে চকবাজারের ওই দুর্ঘটনা ঘটত না। তিনি বলেন, ‘এর আগে আমরা চামড়াশিল্প হাজারীবাগ থেকে সরানো এবং হাতিরঝিল থেকে বিজিএমইএ ভবন সরানো নিয়ে একই ধরনের ঘটনা ঘটতে দেখেছি। ফলে সরকারের উচিত হবে চকবাজারের দুর্ঘটনার পর রাসায়নিক গুদাম সরানো নিয়ে যে জনমত তৈরি হয়েছে, তাকে আমলে নিয়ে কিছু গুদাম হলেও আপাতত সরানো। আর দ্রুততম সময়ের মধ্যে কেরানীগঞ্জে এসব কারখানা ও গুদাম সরানোর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা।’