পরচা দেওয়ায় অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ

রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলায় মৌজা রয়েছে ৬৪টি। এর মধ্যে প্রায় ৫০টি মৌজার জমির প্রিন্ট পরচা (খতিয়ান) রংপুর জোনাল সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে জমা রয়েছে। এসব মৌজার প্রিন্ট পরচা দেওয়ার এখতিয়ার বদরগঞ্জ উপজেলা সেটেলমেন্ট কার্যালয়ের না থাকলেও তা কম্পিউটারে লিখে দিচ্ছেন পেশকার আইয়ুব আলী সরকার। অভিযোগ রয়েছে, তিনি প্রতিটি পরচায় ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা পর্যন্ত নেন।

অবৈধভাবে দেওয়া এসব পরচায় ব্যবহার করা হচ্ছে চার বছর আগে বদলি হয়ে যাওয়া উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা আবদুল খালেক মিঞার স্বাক্ষরিত সিলমোহর। এমন একাধিক প্রিন্ট পরচায় কোনো তারিখ দেখা যায়নি।

উপজেলা সেটেলমেন্ট কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রংপুর সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে জমা হওয়া ওই মৌজাগুলোর জমির প্রতিটি পরচা নিতে বিধিমোতাবেক কৃষককে ১০০ টাকা ফি রংপুর কার্যালয়ে জমা দিতে হবে। পরে রংপুর সেটেলমেন্ট কার্যালয় থেকে পরচা সংগ্রহ করতে হবে। আর যে ১৪টি মৌজার পরচা রংপুর কার্যালয়ে জমা হয়নি, সেগুলো তুলতে বিধি অনুযায়ী ২০ টাকার কোর্ট ফিসহ উপজেলা সেটেলমেন্ট কার্যালয়ের কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করে ১০০ টাকা ফি জমা দিতে হবে। পরে উপজেলা সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত হাতের লেখা প্রিন্ট পরচা তারিখসহ দেওয়ার বিধান রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা সেটেলমেন্ট কার্যালয়ের পেশকার আইয়ুব আলী সরকার ১৪টি মৌজার প্রতিটি প্রিন্ট পরচা দিতে ১০০ টাকার বদলে নিচ্ছেন ৪০০-৫০০ টাকা। আর রংপুর সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে জমা হওয়া ৫০টি মৌজার প্রতিটি প্রিন্ট পরচা কম্পিউটারে তৈরি করে দিয়ে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা নিয়ে পুরোটাই পকেটস্থ করছেন। প্রতিদিন উপজেলা সেটেলমেন্ট কার্যালয় থেকে গড়ে অর্ধশতাধিক প্রিন্ট পরচা দেওয়া হয় বলে ওই কার্যালয়ের তিনজন কর্মচারী জানিয়েছেন।

ওই সেটেলমেন্ট কার্যালয়ের দুজন কর্মচারী জানান, বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের আমরুলবাড়ি মৌজার প্রিন্ট পরচা প্রায় দুই বছর আগে রংপুর জোনাল সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে জমা হয়েছে। কিন্তু গত ৩০ জানুয়ারি কালীরডাঙ্গা গ্রামের কৃষক মিজানুর রহমান পেশকার আইয়ুব আলী সরকারকে ৬০০ টাকা দিয়ে ওই মৌজার মাঠের কাঙ্ক্ষিত প্রিন্ট পরচা বদরগঞ্জ সেটেলমেন্ট কার্যালয় থেকে পেয়েছেন। পরচার নম্বর ৬০৯, দাগ নম্বর ৪। দেখা যায়, প্রিন্ট পরচাটি কম্পিউটারে লেখা। পরচায় চার বছর আগে বদলি হওয়া উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা আবদুল খালেক মিঞার স্বাক্ষরিত সিলমোহর রয়েছে।

এ ব্যাপারে আবদুল খালেক মিঞার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। 

পেশকার আইয়ুব আলীর কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, অবৈধ প্রিন্ট পরচা বের করতে তিনি মাঠের ভলিয়ম বই টেবিলে রেখে কম্পিউটার চাপছেন। আইয়ুব আলী সরকার বলেন, যে মৌজাগুলোর প্রিন্ট পরচা দেওয়ার এখতিয়ার তাঁদের নেই, সেটা তিনি দেন না। আর ১৪টি মৌজার প্রিন্ট পরচা দিতে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন।

আমরুলবাড়ি মৌজার মৌলভীপাড়া গ্রামের ছাইদার রহমান অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি আইয়ুব আলী সরকারকে ৮০০ টাকা দিয়ে আমরুলবাড়ি মৌজার প্রিন্ট পরচা তুলেছি।’

বদরগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ের দুজন দলিল লেখক অভিযোগ করেন, সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে প্রতি মাসে ৭০০-৮০০ দলিল সম্পাদন হয়। জমি কেনাবেচায় যেসব প্রিন্ট পরচা পাওয়া যায় তার বেশির ভাগই কম্পিউটারে লেখা তারিখবিহীন পরচা।

উপজেলা সহকারী সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা বিশ্বজিত কুমার কুণ্ডু বলেন, ‘বিধিমোতাবেক আবেদনসহ ১০০ টাকা ফি জমা দিয়ে রংপুর জোনাল সেটেলমেন্ট কার্যালয়ে  থেকে পরচা নিতে হবে। যদি পেশকার আইয়ুব আলী বিধির বাইরে কাউকে সেই প্রিন্ট পরচা দিয়ে থাকেন তাহলে দায় তাঁকেই নিতে হবে। আমি এসব অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই।’

মুঠোফোনে রংপুর জোনাল সেটেলমেন্ট কর্মকর্তা আজমল হোসেন বলেন, ‘আমার কার্যালয়ে জমা হওয়া মৌজার প্রিন্ট পরচা বদরগঞ্জ কার্যালয় থেকে দেওয়ার এখতিয়ার কোনো কর্মকর্তার নেই। যদি পেশকার আইয়ুব আলী এটা করে থাকেন, তাহলে তদন্ত করে তাঁর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’