বীরাঙ্গনা মা ও শ্রেণিসংগ্রামে পরাজিত সিপাহি আকবর

শ্রেণিসংগ্রামে পরাজিত এক মানুষ সিপাহি আকবর। তাঁর মা বীরাঙ্গনা। মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা মানসিক ও মানবিক ক্ষতের দাগ নিয়ে বেঁচেছিলেন, জাতি তাঁদের দেয় বীরাঙ্গনার সম্মাননা। কিন্তু আত্মহত্যার পথ বেছে নেওয়া মায়ের বীরাঙ্গনা উপাধি আকবরকে দাঁড় করায়নি মাথা উঁচু করে। বরং তাড়া করেছে লজ্জা ও অপমানের হিংস্র থাবায়।

এ কাহিনি কোর্ট মার্শাল নাটকের। গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় নগরের রিকাবিবাজার এলাকার কবি নজরুল অডিটরিয়ামে এ নাটকের মঞ্চায়ন করেছে কথাকলি সিলেট। ‘সংলাপে-সংকল্পে থাক চেতনার একুশ’স্লোগান নিয়ে শুরু হওয়া ১৪ দিনব্যাপী একুশের চেতনায় নাট্য প্রদর্শনীর উদ্বোধনী দিনে তাদের এ পরিবেশনা ছিল। সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেটের উদ্যোগে এবং সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় এ উৎসব শুরু হয়েছে।

নাটকের কাহিনি এগিয়ে চলে আকবরের অপদস্থ হওয়াকে কেন্দ্র করে। আকবরকে অপদস্থ করেছে তারা, যারা মুক্তিযুদ্ধে বিরোধীদের উত্তরাধিকার এবং পরবর্তী সময়ে যারা আবার ফিরেছে ক্ষমতার অংশীদারত্বে। তবে একসময় ঘুরে দাঁড়ান সিপাহি আকবর। বিচার যেখানে বন্ধ, সেখানে অবিচারের পথ রোধ করেন আকবর। সামাজিক শ্রেণিদ্বন্দ্ব, রাজনৈতিক উত্তরাধিকার, সামন্ত প্রবৃত্তির উৎপীড়ন আর চিন্তার স্তরে সামন্ত নৈরাজ্যের পাশাপাশি সত্য আবিষ্কারের ঘটনা ঘিরেই এ নাটকের পুরো বিষয়বস্তু। স্বদেশ দীপকের মূলপাঠ থেকে এ নাটকটি রূপান্তর করেছেন এস এম সোলায়মান। নাটকের নির্দেশনা দিয়েছেন আমিনুল ইসলাম চৌধুরী।

নাটকে অভিনয় করেছেন আমিরুল ইসলাম চৌধুরী, আমিনুল ইসলাম চৌধুরী, মুহা. আনোয়ার হোসেন, নয়ন তালুকদার, আবেদ আবদুল্লাহ, মঞ্জুর আহমদ চৌধুরী, প্রশান্ত দে প্রলয়, অরিন্দম দত্ত চন্দন, রোহেনা সুলতানা, সৈয়দ ফয়সল আহমেদ, শামসুল বাসিত ও নীলাঞ্জন দাশ। নাটকের আবহসংগীত প্রয়োগে ছিলেন বাপ্পী ত্রিবেদী ও কমলজিৎ শাওন। আলোক সম্পাতে ছিলেন হুমায়ুন কবীর। রূপসজ্জায় ছিলেন সালেহ নাহিদ এবং নেপথ্য কণ্ঠে হিমাংশু বিশ্বাস।

নাটক শুরুর আগে অডিটোরিয়াম-সংলগ্ন মুক্তমঞ্চে প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয়। শুরুতেই ছন্দ নৃত্যালয়ের শিল্পীরা উদ্বোধনী নৃত্য পরিবেশন করেন। এরপর ঢাকার চকবাজারে অগ্নিকাণ্ডে নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।