খাস জমিতে ফের ঘর নির্মাণ

ভেড়ামার্কেট এলাকায় পোড়া ভিটায় আবার ঘর তৈরি করতে শুরু করেছে লোকজন। গতকাল বিকেল চারটায় নগরের বাকলিয়া এলাকায়।  সৌরভ দাশ
ভেড়ামার্কেট এলাকায় পোড়া ভিটায় আবার ঘর তৈরি করতে শুরু করেছে লোকজন। গতকাল বিকেল চারটায় নগরের বাকলিয়া এলাকায়। সৌরভ দাশ

আগুন লাগার এক সপ্তাহের মধ্যে নগরের চাক্তাই ভেড়ামার্কেট বস্তিতে নতুন করে ঘর নির্মাণ শুরু হয়েছে। অবৈধ দখলদারেরা সরকারি খাস জমিতে পুনরায় এসব ভাড়া ঘর তুলছেন। সরকারি জমিতে ঘর নির্মাণ করে গেলেও কেউ বাধা দিচ্ছে না।
১৬ ফেব্রুয়ারি রাতে এই বস্তিতে আগুন লেগে প্রায় ৪০০ ঘর পুড়ে যায়। জীবন্ত দগ্ধ হয়ে প্রাণ হারান আটজন। রাজাখালী খালের পাশে এই বস্তির জায়গাটি বিএস দাগে নদী হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে। বিএস দাগ- ৮৬৫১–এর এই জায়গাটি ১৪৭ একর ১০ শতাংশ। এর মধ্যে নদী এবং খালের অংশের পাশাপাশি বেদখল হওয়া নদী ও খালের পাড় রয়েছে বলে ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে।
জানতে চাইলে সদর সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাবরিনা আফরিন মুস্তফা বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া অংশটি সরকারি খাস কি না, আমি নিশ্চিত নই। এ ব্যাপারে কানুনগোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’
সদর সার্কেলের কানুনগো প্রীতিরুন চাকমা জানান, পুরো বিএস দাগটি ১০ একরের বেশি। পুরো জায়গাটি নদী এবং সরকারি খাসভুক্ত। আরএস দাগ অনুযায়ীও এটি সরকারি খাস জায়গা। এখানে নতুন করে ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে।
পুড়ে যাওয়ার পর জেলা প্রশাসন এবং ফায়ার সার্ভিস দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। কোনো কমিটি এখনো প্রতিবেদন দেয়নি। এর মধ্যে জেলা প্রশাসনের চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাশহুদুল কবীর। জানতে চাইলে মাশহুদুল কবীর বলেন, ‘তদন্ত চলছে। প্রতিবেদন দু–একদিনের মধ্যে দেওয়া হবে। ঘর তোলার বিষয়টি দেখেছি। প্রতিবেদন দেওয়ার পর কী করা হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সরেজমিনে চাক্তাই ভেড়ামার্কেট এলাকায় দেখা গেছে, পুড়ে যাওয়া অংশে বাঁশ–টিন দিয়ে ঘরবাড়ি নির্মাণ চলছে। কিছু শ্রমিক ঘর নির্মাণের কাজ করছেন। পুড়ে যাওয়া স্থানে ঘর তোলার পাশাপাশি এখনো সেখানে ত্রাণ কার্যক্রম চলছে। আগুনে ঘর এবং আসবাবপত্র হারিয়ে বেশির ভাগই সেখান থেকে চলে গেছে। তবে কয়েকটি পরিবার এখনো দিনের বেলায় ভেড়ামার্কেট–সংলগ্ন বস্তিতে থাকে।
গত রোববার মো. জাফর নামে এক বাসিন্দা বলেন, ‘বউ–বাচ্চা নিয়ে অন্য জায়গায় থাকি। দিনের বেলায় এখানে আসি। আগে দুই হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে থাকতাম।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পুড়ে যাওয়া স্থানে ১৩ জন দখলদারের ঘর রয়েছে। এই ১৩ জনই নতুন করে ঘর তুলছেন। তাঁদের মধ্যে ফরিদ, বেলাল, আকতার, ছত্তার অন্যতম। ঘর তুলে আগের মতো নিম্ন আয়ের লোকজনকে ভাড়া দেবেন তাঁরা। বাসিন্দারা তাঁদের জমিদার নামে জানে। প্রত্যেক জমিদারের ভাড়া তোলার জন্য এক একজন কেরানি থাকেন। নতুন করে ঘর নির্মাণের বিষয়টিও তদন্ত করছেন কেরানিরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্তার কলোনির কেরানি রুমা আকতার বলেন, ‘বাংলাদেশে যদি রোহিঙ্গারা এসে থাকতে পারে তাহলে আমরা কী দোষ করলাম? গরিব মানুষ কোথায় যাবে?’
নতুন করে ঘর নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে বাকলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রণব কুমার চৌধুরী বলেন, ‘বিষয়টি দেখবে ভূমি অফিস। আমাদের সাহায্য চাইলে আমরা সাহায্য করব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে নিয়োজিত সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাহমিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ভেড়া মার্কেট কর্ণফুলীর অবৈধ দখলদারের আরএস দাগ অনুযায়ী তালিকায় এটি নেই। তবে এটাও নদী এবং খালের জায়গা। দ্বিতীয় পর্যায়ের উচ্ছেদের সময় এগুলোও উচ্ছেদ করা হবে। উল্লেখ্য, হাইকোর্টের নির্দেশে ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে কর্ণফুলীর অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।