নয় বছরে কী করেছেন, সরকারকে ড. কামাল

ড. কামাল হোসেন
ড. কামাল হোসেন

নিমতলীর ঘটনার নয় বছর পরও রাসায়নিকের গুদাম সরাতে সরকার কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন। তিনি এ ঘটনার জবাবদিহি দাবি করেছেন।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে চকবাজার অগ্নিকাণ্ডে নিহত লোকজনের স্মরণে নাগরিক শোকসভার আয়োজন করে গণফোরাম। এ শোকসভায় কামাল হোসেন এসব কথা বলেন। ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় এক ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ৬৯ জন নিহত হয়েছেন। এখনো অনেকে নিখোঁজ।

সভার শুরুতে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর শোকপ্রস্তাব পাঠ করেন গণফোরামের তথ্য ও গণমাধ্যমবিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম।

কামাল হোসেন বলেন, ‘২০০৯-১০-এ কারা ছিল সরকারে? অন্য দল থাকলে তো সুযোগ পেয়ে যাবে, ওরা কিছু করেনি। কিন্তু সেই কথা তো বলার অবকাশ নাই। ওরা সব খারাপ আপনাদের দৃষ্টিতে। কিন্তু আপনারা তো সবাই ভালো। কিন্তু কথা হলো এ নয় বছরে কী করেছেন?’ সরকারের দায়িত্বহীনতা থাকার কথা জানিয়ে বলেন, জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই সরকারের দায়িত্ব-কর্তব্য।

গণফোরাম সভাপতি বলেন, ২০১০ সালে নিমতলীর ঘটনার পর পুরান ঢাকাকে নিরাপদ করতে তখন হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছিল যেন এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে তার জন্য পদক্ষেপ নিতে। এই আদেশ হালকাভাবে নেওয়া যায় না। কামাল হোসেন বলেন, ‘নয় বছরে আদেশগুলো পালন করা যায়নি কেন? কোর্টও জবাবদিহি চায়, আমরাও চাই।’

সরকারের তরফ থেকে এখনো কিছু শুনতে পাননি উল্লেখ করে ঐক্যফ্রন্ট নেতা বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। কালক্ষেপণ করলে এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ যাবে, অন্য জিনিসের দিকে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ হয়ে যাবে। পত্রপত্রিকা থেকে এগুলো উঠে যাবে। আবার নয় বছর, আবার ঘটবে। তখন আমরা বলব কেন ঘটছে।’

আশপাশের ভবনেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ফাইল ছবি
আশপাশের ভবনেও আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। ফাইল ছবি

জনগণকে সক্রিয়ভাবে মালিকের ভূমিকা পালন করার কথা স্মরণ করে কামাল হোসেন বলেন, ঔপনিবেশিক আমল থেকে কিছু হলে সরকারকে দায়ী করা হয়। সরকার অবশ্যই দায়ী। কিন্তু সরকারের মালিক জনগণ। তিনি বলেন, সরকার জনগণকে মালিক মেনে নিলে সাধারণ মানুষের কাছে আবেদন করত, ‘আসুন, সবাই এগিয়ে আসুন। সবাই মিলে বলেন কী করা যায়?’

হাইকোর্টের আদেশের ব্যাপারে সরকার এই নয় বছরে কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, নাগরিক হিসেবে কামাল হোসেন তা জানতে চেয়ে বলেন, ‘কেন জানাবেন না? এই দেশ তো কারও পৈতৃক সম্পত্তি না। দেশের মালিক জনগণ। জানতে চাই নয় বছরে কেন হলো না। এটার দায় এড়ানো মহা অন্যায় কি না।’

জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, সরকারের দায়িত্বহীনতার জন্য এ ঘটনা ঘটেছে। এদের হত্যা করা হয়েছে। তিনি সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে বলেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান বলেন, হাজারিবাগের ট্যানারি সরাতে অনেক সময় লেগেছিল। চকবাজারেও বাস্তবসম্মত সমাধান হতে হবে। যারা সরবে তাদের উপার্জনের ব্যবস্থা করতে হবে।

লাশের সংখ্যা নিয়ে লুকোচুরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, এ ঘটনায় সরকারের লোকজন একে অন্যকে দুষছেন। ঢাকাকে আগ্নেয়গিরি বানিয়ে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া বলেন, সরকার এখনো অঙ্গীকার করেনি কত দিনে রাসায়নিক সরবে।

শোকসভায় আরও বক্তব্য দেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা চিকিৎসক জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাবেক মন্ত্রী আবু সাইয়িদ প্রমুখ।