ভাঙা হলো হেলে পড়া ৬ তলা ভবন

হেলে পড়া ভবনটি এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙা হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় কামরাঙ্গীরচরে।  প্রথম আলো
হেলে পড়া ভবনটি এক্সকাভেটর দিয়ে ভাঙা হচ্ছে। গতকাল সন্ধ্যায় কামরাঙ্গীরচরে। প্রথম আলো

কামরাঙ্গীরচরে হেলে পড়া ছয়তলা ভবন ভাঙা হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার রাতে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) সহযোগিতায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এই কাজ করে।

গতকাল সন্ধ্যা সোয়া সাতটার দিকে ভবনটি ভাঙার কাজ শুরু হয়। পেছন দিক থেকে এক্সকাভেটরের সাহায্যে প্রথমে ভাঙা হয় ভবনের চারতলার দেয়াল। পরে একে একে অন্য তলার দেয়াল ভাঙা হয়। রাত  সাড়ে ১০টার মধ্যে ভবন ভেঙে ফেলা হয়। ডিএসসিসি ছাড়াও রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), ফায়ার সার্ভিসসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির মেয়র সাঈদ খোকন গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ভবনটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। নিজ থেকে পুরোপুরি ভেঙে পড়লে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে, তাই দেরি না করে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভাঙার কাজ শুরু করা হয়। এর আগে বিভিন্ন সংস্থার সদস্যদের সমন্বয়ে একটি কমিটি করা হয়। বুয়েটের বিশেষজ্ঞের মতামত নেওয়া হয়। তিনি বলেন, ডিএসসিসির এক্সকাভেটর আছে। তবে বিআইডব্লিউটিএর এক্সকাভেটর অনেক উঁচুতে কাজ করতে পারে। এ জন্য সংস্থাটির সাহায্য নেওয়া হয়েছে।

বিআইডব্লিউটিএর ঢাকা বন্দরের কর্মকর্তা এ কে এম আরিফ উদ্দিন গতকাল রাত ১০টার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, কাজ অসমাপ্ত রাখলে ঝুঁকি বাড়তে পারে। তাই রাতের মধ্যেই ভবন ভাঙার কাজ শেষ করা হয়।

গত সোমবার দুপুরে কামরাঙ্গীরচরের খলিফাঘাটের কাজীবাড়ি গলিতে রাজউকের অনুমোদনহীন ১৪০ নম্বর ভবনটি হেলে পড়ে। সোমবার এক ফুটের বেশি হেলে পড়ার পর গতকাল ভবনটি আরও হেলে পড়ে। ভবনটির চারপাশে অন্তত ১০টি বহুতল ভবন এবং ১৫টির মতো আধা পাকা ও টিনের বাড়ি আছে। সোমবার হেলে পড়া বাড়ির লোকজন ছাড়াও চারপাশের বাড়িঘরের বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া হয়। বিচ্ছিন্ন করা হয় বাড়িগুলোর গ্যাস ও বিদ্যুৎ–সংযোগ। হেলে পড়ার পর নিরাপত্তার জন্য ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ ভবনটির কাছের রাস্তার দুই পাশে অনেক দূর পর্যন্ত প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে যানবাহন ও জনচলাচল বন্ধ করে দেয়। গতকাল ভাঙার কাজ শুরুর আগে নিরাপত্তাব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়। এক্সকাভেটর ঢোকানোর জন্য ভবনটির পেছনের তিনটি টিনশেড ঘর ভেঙে দেওয়া হয়। ঘরগুলোর মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন ডিএসসিসির প্রতিনিধি।

জানা যায়, ডোবা ভরাট করে পৌনে এক কাঠা জায়গার ওপর প্রথমে তিনতলা তৈরি করা হয়। পরে আরও দুই তলা নির্মাণ করে তার ওপর আরও একটি কক্ষ করা হয়। পাঁচটি তলায় পাঁচটি পরিবার ভাড়া থাকত। জায়গা ও ভবনটির মালিক ছিলেন মো. শাহীন নামের এক ব্যক্তি। তিনি তৈরি পোশাকের ব্যবসা করেন। ভবনটি হেলে পড়ার পর থেকে তিনি গা ঢাকা দিয়েছেন। তাঁর মুঠোফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। মাস তিনেক আগে তিনি ৮৩ লাখ টাকায় আবদুল কাদের নামের এক ব্যক্তির কাছে ভবনটি বিক্রি করে দেন।

আবদুল কাদেরের ছোট ভাই আবদুস সামাদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা জানতেন না যে ভবনটি ঝুঁকিপূর্ণ। ভবনটি কেনার সময় শাহীন তাঁদের বলেছিলেন, নকশাসহ সব ঠিক আছে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনার পর তাঁর ভাইসহ পরিবারের সবাইকে বিপদে ফেলে শাহীন পালিয়ে গেছেন।

রাজউকের ওই অঞ্চলের (৫ নম্বর) পরিচালক শাহ আলম চৌধুরী বলেন, এলাকার অন্য ভবনগুলোও ঝুঁকিপূর্ণ কি না, তা পরীক্ষা করে দেখা হবে।