পরিবহনে চাঁদাবাজির মামলায় কারাগারে শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি

ইসমাইল হোসেন ছবি: সংগৃহীত
ইসমাইল হোসেন ছবি: সংগৃহীত

পরিবহনে চাঁদাবাজির অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়ে এক সপ্তাহ ধরে কারাগারে আছেন শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইসমাইল হোসেন বাচ্চু। পুলিশ আদালতকে প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, ইসমাইল হোসেন কুমিল্লায় খুনের মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

ইসমাইল হোসেন ঢাকা জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। এদিকে শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হামিদ খান জানান, ইসমাইল হোসেন শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতির দায়িত্বে আছেন।

কয়েকজন পরিবহন মালিকের অভিযোগ, ইসমাইল হোসেন ও তাঁর সহযোগীরা পরিবহন মালিকদের জিম্মি করে সমিতির নামে চাঁদা আদায় করছে, যানবাহন ভাঙচুর করছে। তবে ইসমাইলের আইনজীবী বলছেন, রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা দিয়ে তাঁর মক্কেলকে হয়রানি করা হচ্ছে।

ইসমাইলের বিরুদ্ধে কী অভিযোগ
রাজধানীর শাহ আলী থানার চাঁদাবাজির মামলায় গত ২১ ফেব্রুয়ারি গ্রেপ্তার হন ইসমাইল। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাত ১১টায় দিশারি পরিবহনের একটি বাস মিরপুরের শাহ আলীর রাইনখোলার ঢালে আসে। তখন বাবুল হাওলাদার নামের আসামি গাড়ি চালককে থামতে বলেন। তখন বাসচালক সেন্টু মিয়াকে মারধর করা হয়। সেখানে উপস্থিত আসামি ইসমাইলসহ অন্য আসামিরা হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমরা শ্রমিক নেতা। এই রুটে গাড়ি চালাতে হলে প্রতি গাড়ি থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা না দিলে তোদের মালিককে বলবি, এই রাস্তায় গাড়ি চালানো বন্ধ থাকবে।’

পরে ইসমাইলসহ সাতজনের নাম উল্লেখ করে শাহ আলী থানায় মামলা করেন চিড়িয়াখানা বাস মিনিবাস আঞ্চলিক শ্রমিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খান।

মঙ্গলবার মুঠোফোনে মামলার বাদী দেলোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, মাসখানেক ধরে ইসমাইল ও তাঁর সহযোগীরা দিশারি পরিবহনের বাস থামিয়ে চাঁদা আদায় করছে। চাঁদা না দেওয়ায় বাসচালক, চালকের সহকারী এবং সুপারভাইজার দিয়ে মারধর করেছে ইসমাইলের লোকজন।

দিশারি পরিবহন মালিক সমিতির নেতা মহারাজ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের কাছ থেকে তিনি সম্প্রতি জানতে জানতে পারেন, ইসমাইল হোসেনের লোকজন দিশারি পরিবহন থেকে চাঁদা আদায় করছে।

শাহ আলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাউদ্দিন মিয়া বুধবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে বলেন, ইসমাইল হোসেন খুনের মামলার অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। পরিবহন থেকে চাঁদাবাজি করার অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতাও পাওয়া গেছে।

চলতি মাসে ইসমাইল হোসেনের বিরুদ্ধে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও পল্টন থানায় আরও দুটি মামলা হয়েছে। যাত্রাবাড়ী থানার মামলায় সীমান্ত পরিবহনের একটি বাস ভাঙচুরের অভিযোগ আনা হয়। মামলার বাদী সীমান্ত পরিবহনের মালিক ফিরোজ ইসলাম লিটন বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালে আরাফাতসহ অন্যরা তাঁর গাড়ি ভাঙচুর করে। আসামিরা সবাই ইসমাইল হোসেনের লোক।
পল্টন থানার মামলায় বলা হয়, ইসমাইল হোসেনের নির্দেশে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গুলিস্তানে আশিয়ান পরিবহনের বাস ভাঙচুর করে আসামিরা।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ প্রথম আলোকে বলেন, ইসমাইল হোসেনের নামে খুনের মামলাসহ একাধিক অভিযোগ আছে। পরিবহন মালিকদের মারধরও করার অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।

তবে ইসমাইল হোসেনের আইনজীবী খালেদ মাসুদ মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর মক্কেল ইসমাইল হোসেন একজন রাজনীতিবিদ। তিনি শাহবাগ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। যাঁরা তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তারাও রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। রাজনৈতিক কোন্দলের কারণ তাঁর মক্কেলের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি সম্পূর্ণ নির্দোষ।

মঙ্গলবার ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত ইসমাইল হোসেন বাচ্চুর জামিন আবেদন নাকচ করেন। আদালতে দুই পক্ষের অন্তত শতাধিক লোককে অবস্থান করতে দেখা যায়। বুধবার দুপুরে গুলিস্তানে দিশারী পরিবহনের বাস চালক রাজু জানান, বাস চালাতে গেলে নানা ঘাটে চাঁদা দিতেই হয়। চাঁদা দেওয়া ছাড়া গাড়ি চালানো যায় না। ফুলবাড়িয়ার পরিবহন শ্রমিক নেতা গিয়াস উদ্দিন বলেন, ইসমাইল হোসেনের লোকজন বাস থেকে চাঁদা আদায় করে আসছিল।

আরেক আসামি রিমান্ডে:
একই মামলার আসামি ও ইসমাইলের সহযোগী নাসির উদ্দিন রিপন ওরফে রিপন মোল্লাকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার শাহ আলী থানা-পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রিপন মোল্লার এক দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

চাঁদাবাজির আরেকটি মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাত ৯টায় দিশারি পরিবহনের একটি বাস চিড়িয়াখানা রোডে আসে। তখন আসামি রিপন মোল্লা বাসের কন্ডাক্টর বাপ্পী হোসেনকে মারধর করে বলে, ‘আমি শ্রমিক নেতা রিপন মোল্লা। এই রাস্তায় গাড়ি চালাতে হলে গাড়ি প্রতি দেড় শ টাকা চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা না দিলে গাড়ি চালানো বন্ধ করে দেব।’ পরে আসামিরা গাড়ি ভাঙচুর করে।

রিপন মোল্লাকে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদনে বলা হয়, রিপন মোল্লার মুঠোফোনের কল ডিটেইলস রেকর্ড (সিডিআর) পর্যালোচনায় দেখা গেছে, রিপনের সঙ্গে ইসমাইল হোসেন বাচ্চুর যোগাযোগ আছে।