খানাখন্দে ভরা সড়কে ৮০ হাজার মানুষের ভোগান্তি

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-বুড়িমারী স্থলবন্দর সড়কের শ্রীরামপুর ইউনিয়নের পয়ষট্টিবাড়ি গ্রাম এলাকায় পিচঢালাই উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।  ছবি: প্রথম আলো
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-বুড়িমারী স্থলবন্দর সড়কের শ্রীরামপুর ইউনিয়নের পয়ষট্টিবাড়ি গ্রাম এলাকায় পিচঢালাই উঠে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ছবি: প্রথম আলো

বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্ত। কোথাও কোথাও ভাঙাচোরা। বৃষ্টি হলে গর্তে পানি জমে থাকে। গরমের সময় ধুলা ওড়ে। এই শোচনীয় অবস্থা লালমনিরহাটের পাটগ্রাম-বুড়িমারী স্থলবন্দর আঞ্চলিক সড়কের সাত কিলোমিটারের। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কের এই দুরবস্থা হয়েছে। এতে এই সড়ক দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে একটি পৌরসভা ও তিন ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের প্রায় ৮০ হাজার মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

 স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পাটগ্রাম উপজেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পাটগ্রাম-বুড়িমারী স্থলবন্দর আঞ্চলিক সড়কটির দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার ও প্রস্থ ১২ ফুট। দুই ধাপে সড়কটি নির্মাণ করা হয়। ১৯৯৯ সালে প্রথম ধাপের এলজিইডির অর্থায়নে সড়কের পাটগ্রাম-কাউয়ামারী পর্যন্ত সাড়ে চার কিলোমিটার ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ২০০২ সালের দিকে কাউয়ামারী বাজার থেকে বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজার পর্যন্ত আরও সাড়ে সাত কিলোমিটার নির্মাণ করা হয়। এরপর ২০১৭ সালের শেষের দিকে ওই সড়কের লতামারী ছিট গ্রাম থেকে শ্রীরামপুর ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত সংস্কার করা হয়। কিন্তু সড়কের কাউয়ামারী-বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজার পর্যন্ত সাড়ে সাত কিলোমিটার সড়ক আর সংস্কার করা হয়নি।

সড়কের এই অংশ সংস্কার করার বিষয়ে এলজিইডি পাটগ্রাম উপজেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু তৈয়ব মো. শামসুজ্জামান বলেন, সড়কের ওই অংশ সংস্কার ও সম্প্রসারণ করা হচ্ছে। এর প্রস্থ বাড়িয়ে ১৮ ফুট করার একটি প্রকল্প প্রস্তাব তৈরি করে এলজিইডির প্রধান কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে। এই প্রকল্প প্রস্তাব অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। সড়কের বাকি অংশ পর্যায়ক্রমে সংস্কার করা হবে।

এলাকার ১০ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এই সড়ক দিয়ে পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর ইউনিয়নের জালঙ্গিরহাট বিজিবি, ক্যাম্প, কামারেরহাট বিজিবি ক্যাম্প, কালিরহাট বিজিবি ক্যাম্প, বুড়িরবাড়ী গ্রাম, লতামারীর ছিট, আওয়ালিয়ারহাট, কাঠাতলী, কাউয়ামারী বাজার, গেদেরটারী, প্রধানপাড়া, পাটগ্রাম পৌরসভা, পাটগ্রাম, শ্রীরামপুর ও বুড়িমারী ইউনিয়নের শতাধিক গ্রামের মানুষ চলাচল করে। তা ছাড়া এই সড়কটি লালমনিরহাট-বুড়িমারী মহাসড়কের বিকল্প হিসেবে ছোট যানবাহনের চালকেরা বাইপাস সড়ক হিসেবে ব্যবহার করেন।

গতকাল বুধবার সরেজমিনে শ্রীরামপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে বুড়িমারী ইউনিয়নের বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজার পর্যন্ত ঘুরে দেখা যায়, পিচঢালাই উঠে ইটের খোয়া বের হয়ে আছে। সড়কের দুই পাশের ঢালে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বিপরীত দিক থেকে আসা দুটি গাড়ি একসঙ্গে সড়ক অতিক্রম করতে পারছে না।

 শ্রীরামপুর ইউনিয়নের পঁয়ষট্টিবাড়ি গ্রামের আওয়াল মিয়াসহ ছয়জন কৃষক বলেন, তাঁদের উৎপাদিত বিভিন্ন কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য বুড়িমারী স্থলবন্দর বাজারসহ উপজেলা সদরের হাটবাজারের নিতে হয়। কিন্তু দুই দিকেই ভাঙাচোরা ও খানাখন্দে ভরা সড়কের কারণে ভ্যানে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে পণ্য পরিবহন করতে হয়। সড়ক খারাপ হওয়ায় এক স্থান থেকে অন্য স্থানে যেতে সময় বেশি লাগছে। এই কারণে হাটে যথাসময়ে কৃষিপণ্য নিতে না পারলে কম দামে বিক্রি করতে হয়। এই সড়কের কারণে দুই দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে।

সড়কের দুরবস্থার বিষয়ে লতামারী ও আওলিয়ারহাট গ্রামের কলেজ ছাত্রী লতা বেগম ও পারভিন খাতুন বলেন, সড়ক বেহাল থাকায় হেঁটেও চলাচল করা যায় না। রিকশাও নেই। তবে ভ্যানগাড়িতে যাতায়াতের কষ্ট হয় আবার সময়ও বেশি লাগে।