বাবা আর খালার লোভের শিকার নবজাতকটি

নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতাল থেকে চুরি যাওয়া নবজাতককে উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় ওই নবজাতকের বাবা কাশেম মিয়া, খালা ঝরনা আক্তার ও সহযোগী শিউলি আক্তারকে আটক করা হয়েছে। পুলিশের দাবি, লোভে পড়ে বাবা ও খালা নবজাতককে ঢাকায় এক নিঃসন্তান নারীর কাছে দিয়ে দিয়েছিলেন।

গত সোমবার নেত্রকোনার হাসপাতাল থেকে ওই নবজাতক চুরি যাওয়ার ঘটনা ঘটে। আজ বৃহস্পতিবার ভোরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ ফকরুজ্জামান জুয়েলের নেতৃত্বে আধুনিক সদর হাসপাতাল এলাকা থেকে নবজাতকটিকে উদ্ধার করে পুলিশ। নবজাতকের মায়ের নাম ববিতা আক্তার ও বাবা আবুল কাশেম। তাঁদের বাড়ি নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার পাঁচগজ এলাকায়।

নবজাতকের পরিবার, পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পাঁচগজ গ্রামের আবুল কাশেমের স্ত্রী ববিতা আক্তার গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। ২৪ ফেব্রুয়ারি পেটের সেলাই কাটার জন্য ববিতাকে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় ববিতা শারীরিকভাবে অসুস্থ বোধ করলে তাঁকে ওই দিন হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকের পরামর্শে ভর্তি করা হয়। পরের দিনদুপুরের দিকে ববিতাকে মহিলা ওয়ার্ড থেকে লেবার ওয়ার্ডে পাঠিয়ে সেলাই কেটে দেওয়া হয়। ববিতা নবজাতকটিকে তাঁর বোন ঝরনা বেগম ও শাশুড়ি জায়েদা আক্তারের কাছে রেখে যান। জায়েদা শিশুটিকে কোলে নিয়ে লেবার ওয়ার্ডের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এ সময় বোরকা পরা এক নারী গিয়ে জায়েদার কাছ থেকে আদর করে শিশুটিকে তাঁর কোলে তুলে নেন। একপর্যায়ে ওই নারী কৌশলে জায়েদার কাছ থেকে শিশুটিকে নিয়ে সটকে পড়েন। হাসপাতালজুড়ে শুরু হয় হইচই। খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা আবুল কাশেম ওই দিন থানায় নবজাতক চুরির অভিযোগ দেন।

এ নিয়ে গত মঙ্গলবার ‘হাসপাতাল থেকে নবজাতক চুরি’ শিরোনামে প্রথম আলোতে প্রতিবেদনও প্রকাশিত হয়।

এদিকে নবজাতক চুরির ঘটনায় পুলিশ জড়িত সন্দেহে শিশুটির দাদি, বাবা ও খালাকে পর্যায়ক্রমে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পরে আজ ভোরে শিশুটিকে শহরের জয়নগর এলাকায় সদর হাসপাতালের কাছে একটি ব্যাগে করে নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে। একই সঙ্গে নবজাতকের বাবা কাশেম মিয়া, খালা ঝরনা আক্তার ও তাদের দূর সম্পর্কের এক আত্মীয় শিউলি আক্তারকে আটক করে।

জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান জুয়েল প্রথম আলোকে বলেন, ‘নবজাতকের বাবা কাশেম মিয়া ও খালা ঝরনা আক্তার লোভে পড়ে পরিকল্পনা করে শিশুটিকে ঢাকায় তাদের পরিচিত নিঃসন্তান এক নারীর কাছে দিয়ে দিয়েছিলেন। পরে পুলিশ কৌশলে শিশুটিকে উদ্ধার করেছে। চিকিৎসক দেখিয়ে শিশুটিকে তার মায়ের কোলে ফেরত দেওয়া হয়েছে।’

নেত্রকোনা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘আটক ওই তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।’