বৃষ্টি নিয়েছে ছুটি

রাতভর বৃষ্টি আর সকাল থেকে মেঘলা আকাশের দিন আপাতত শেষ হতে চলেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে এক চিলতে রোদ পরিস্থিতির উন্নতির আভাস দিয়েছে। বলা যায়, আপাতত বৃষ্টি নিয়েছে ছুটি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ শুক্রবারের মধ্যে দেশের বেশির ভাগ এলাকার আকাশ থেকে কালো মেঘ বিদায় নেবে। একই সঙ্গে বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়ার সম্ভাবনা কম। তিন-চার দিন ধরে যে শীত শীত ভাব জেঁকে বসেছিল, তা–ও কমে যেতে পারে। দেশের এলাকাভেদে তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদেরা।

গতকাল দেশের বিভিন্ন স্থানে ঝড়ে দুজনের মৃত্যু এবং ফসল ও বাড়িঘরের বেশ ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বরগুনায় বলেশ্বর নদে একটি ট্রলার ডুবে এক জেলে মারা গেছেন। তাঁর নাম জালাল হোসেন (৩০)। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে হাসিনা বেগম (৪০) নামের একজন গৃহিণী দেয়ালচাপায় মারা গেছেন। ভোরের ঝড়ে বরগুনা সদর ও তালতলী উপজেলার বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিশোরগঞ্জে শিলাবৃষ্টি আঘাত হানায় জেলা শহরের বিদ্যুৎ–সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। গতকাল রাত পর্যন্ত তা পুনঃস্থাপন হয়নি।

যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় এক হাজার হেক্টর বোরো ফসলের জমিতে পানি জমে তা নষ্ট হয়ে গেছে। ফরিদপুরের ১৫০ হেক্টর পেঁয়াজের খেত পানিতে প্লাবিত হয়ে তা নষ্ট হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন সেখানকার কৃষকেরা। আর বগুড়ার ধুনট উপজেলার ২৬টি ইটভাটার প্রায় এক কোটি টাকার কাঁচা ইট বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, কয়েক দিন ধরে আবহাওয়া বৈরী হয়ে ওঠার কারণ ছিল পশ্চিমা লঘুচাপ ও পুবালি বাতাস একত্র হওয়া। এতে শুষ্ক বায়ু ও জলীয় বাষ্পের সংঘাত সৃষ্টি হয়ে ঝড়-বৃষ্টির জন্ম দিয়েছিল।

গতকাল বিকেল নাগাদ ওই দুই বিপরীতমুখী বায়ু পরস্পর থেকে দূরে সরে যেতে শুরু করেছে। এতেই আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতির চিত্র ফুটে উঠছে।

রাত গড়াতেই আকাশ থেকে মেঘের দলও সরে যেতে শুরু করেছে। তবে রাতভর বৃষ্টিতে রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা ও পুরান ঢাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। বিকেল পর্যন্ত তা স্থায়ী থাকে। আকাশও দিনের বেশির ভাগ সময় ছিল মেঘলা।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস প্রথম আলোকে বলেন, শীত বিদায় নেওয়ার পরপর এই পশ্চিমা লঘুচাপ ও পুবালি বায়ুর সংঘাত সৃষ্টি হয়ে এ ধরনের আবহাওয়া তৈরি হয়। এবারও তা–ই হয়েছে। আপাতত এই অবস্থা কেটে গেছে। আজ থেকে তাপমাত্রা বেড়ে ও মেঘ কেটে গিয়ে রোদের দেখা পাওয়া যেতে পারে। আজ থেকে ধারাবাহিকভাবে তাপমাত্রা বেড়ে গরম বাড়তে পারে।

তবে ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু–একটি জায়গায় দমকা হাওয়াসহ বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। দেশের কিছু অংশে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।

গতকাল দেশের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে খুলনায় ৬৮ মিলিমিটার। আর রাজধানীতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ২২ মিলিমিটার। মেঘ-বৃষ্টির কারণে গত তিন দিনে ধারাবাহিকভাবে তাপমাত্রা কমে যায়। রাজধানীসহ দেশের অনেক স্থানে প্রায় শীতকালের অনুভূতি ফিরে আসে। আর বরাবরের মতো মাঝারি বৃষ্টিতেই রাজধানীসহ দেশের বেশির ভাগ জেলা শহরের সড়কে পানি জমে যানবাহনের গতি কমে যায়। তবে গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি ও দক্ষিণ সিটির কিছু অংশে ভোট হওয়ায় সড়কে যানবাহনের পরিমাণ ছিল কম। তাই তেমন যানজটের সৃষ্টি হয়নি। ঝড়-বৃষ্টির আশঙ্কায় অনেকেই বাসা থেকে বের হননি। ফলে রাজধানীতে প্রায় ছুটির আমেজ দেখা দেয়।