সেলুনে বসেই বই পড়ুন

বাগেরহাটের চুলকাঠি বাজারের একটি সেলুনে বিনা মূল্যে বই পড়ার আয়োজন।  ছবি: প্রথম আলো
বাগেরহাটের চুলকাঠি বাজারের একটি সেলুনে বিনা মূল্যে বই পড়ার আয়োজন। ছবি: প্রথম আলো

বাগেরহাট সদর উপজেলার চুলকাঠি বাজারের সেলুনগুলোতে চালু করা হয়েছে বিনা মূল্যে বই পড়া কর্মসূচি। গতকাল শুক্রবার সকালে দুটি সেলুনে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়। পর্যায়ক্রমে অন্য সেলুনগুলোতেও এই কার্যক্রম চালু করা হবে।

সেলুনভিত্তিক এ কর্মসূচির নাম দেওয়া হয়েছে ‘সেলুন পাঠাগার’। ব্যতিক্রম এ বই পড়া কর্মসূচির আয়োজন করেছে ‘চুলকাঠি ইয়ুথ সোসাইটি’ নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

আয়োজকেরা মনে করছেন, সেলুনে চুল-দাড়ি কাটতে গিয়ে বেশির ভাগ মানুষকেই অনেকক্ষণ ধরে বসে থাকতে হয়। ওই সুযোগে তারা সেখানে বসে অবসর সময়ে বই পড়তে পারবে। এই কার্যক্রম ধীরে ধীরে তাদের বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।

খুলনার বটিয়াঘাটা উপজেলার মিলন শীল তাঁর সেলুনে একটি ছোট লাইব্রেরি গড়ে তুলেছেন। মিলন শীলের ওই লাইব্রেরিতে আছে বিভিন্ন লেখকের তিন শতাধিক বই। এলাকার কেউ চাইলে ওই সেলুনে বসে বই পড়তে পারে। আবার কেউ চাইলে একটি খাতায় নাম লিখে বাড়িতেও বই নিয়ে যেতে পারে। মিলন শীলের ওই লাইব্রেরি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি প্রথম আলোতে ‘বাজারের সেলুনে বইয়ের ঐশ্বর্য’ শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

মিলন শীলের ওই লাইব্রেরিই অনুপ্রাণিত করেছে বাগেরহাটের চুলকাঠি ইয়ুথ সোসাইটিকে। তাই সংগঠনটির পক্ষ থেকে এলাকার সব সেলুনে লাইব্রেরি গড়ে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে জানান আয়োজকেরা। চুলকাঠি ইয়ুথ সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা জাকারিয়া হোসাইন বলেন, বই পড়া আন্দোলনের ব্যতিক্রমী উদ্যোক্তা মিলন শীল। সাধারণত গ্রামাঞ্চলে তেমন কোনো গণগ্রন্থাগার থাকে না। তা ছাড়া বর্তমানে মানুষের কর্মব্যস্ততার মধ্যে জেলা শহরের গ্রন্থাগারে গিয়ে বই পড়ার পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগও নেই বললেই চলে। এসব কারণে বর্তমান ফেসবুক আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে মানুষ বই পড়া থেকে পিছিয়ে পড়ছে। হারিয়ে ফেলছে বই পড়ার অভ্যাস। তাই মানুষকে বই পড়ার প্রতি আগ্রহী করতে সেলুনভিত্তিক বই পড়া কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। প্রত্যেক মানুষকে মাসে অন্তত একবার হলেও সেলুনে যেতে হয়। সেখানে বেশির ভাগ মানুষকে অনেকটা সময় অলস বসে থাকতে হয়। ওই সময়ে তাদের সামনে যদি বইগুলো থাকে, তাহলে সেগুলো নিয়ে তারা পড়তে পারবে। আর এতে তাদের মধ্যে পড়ার প্রতি আগ্রহ তৈরি হতে পারে।

চুলকাঠি ইয়ুথ সোসাইটির সদস্যদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে অল্প কিছু বই দিয়ে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বিত্তবান মানুষের সাহায্য পেলে আরও বড় আকারে এই উদ্যোগ গ্রহণ করা সম্ভব বলে মনে করেন জাকারিয়া।

গতকাল যে দুটি সেলুনে বই পড়া কর্মসূচি চালু করা হয়েছে তার একটি চন্দন সেলুন। ওই সেলুনের মালিক চন্দন দাস বলেন, ‘এ ধরনের কর্মসূচি একটি মহৎ উদ্যোগ। এমন এক উদ্যোগ নিয়েছেন বটিয়াঘাটার মিলন শীল। পত্রিকায় তাঁকে নিয়ে প্রতিবেদন দেখে মনে হয়েছিল আমার সেলুনেও যদি ওই রকম একটি লাইব্রেরি গড়ে তুলতে পারতাম। এখন সেটা বাস্তবায়িত হলো। কিন্তু এখানে বইয়ের সংখ্যা খুবই কম।’