সুপেয় পানির কষ্টে তাঁরা

পৌনে এক কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পেরিয়ে পাহাড়ের নিচ থেকে পানি সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরছেন এক নারী। সম্প্রতি পানছড়ি যৌথ খামার মারমাপাড়ায়।   প্রথম আলো
পৌনে এক কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পেরিয়ে পাহাড়ের নিচ থেকে পানি সংগ্রহ করে বাড়ি ফিরছেন এক নারী। সম্প্রতি পানছড়ি যৌথ খামার মারমাপাড়ায়। প্রথম আলো

খাগড়াছড়ির পানছড়ি সদর ইউনিয়নের যৌথ খামার মারমাপাড়া গ্রামটির অবস্থান পাহাড়ি এলাকায়। এই গ্রামের ৪৫টি পরিবারের বসবাস। গ্রামের বাসিন্দাদের দৈনন্দিন ব্যবহারের জন্য মাত্র তিনটি নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে একটি নলকূপ অকেজো। সারা বছর নলকূপের পানি পাওয়া গেলেও চৈত্র মাস এলেই বেড়ে যায় পানির ভোগান্তি।

সম্প্রতি পানছড়ি বাজার থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে যৌথ খামার মারমাপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের শুরুতে সাতটি পরিবারের ব্যবহারের জন্য একটি নলকূপ বসানো হয়েছে। এর এক কিলোমিটার দূরে ২৮টি পরিবার ও একটি মন্দিরের ব্যবহারের আরও একটি একটি এবং তার আধা কিলোমিটার দূরে গ্রামের শেষ সীমানায় ১০টি পরিবার ও একটি বিদ্যালয়ের ব্যবহারের জন্য একটি নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে গ্রামের শেষ সীমানার নলকূপটি নষ্ট।

গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে সামান্য পানি পাওয়া গেলেও চৈত্র মাস থেকে নলকূপে পানি কম ওঠে। তখন বাধ্য হয়ে গ্রামের বাসিন্দাদের পুকুরের নোংরা পানি ব্যবহার করতে হয়। খাওয়ার পানি পাওয়া গেলেও দৈনন্দিন ব্যবহার ও গোসলের পানি পাওয়া কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। গ্রামে কোনো সামাজিক কিংবা ধর্মীয় অনুষ্ঠান হলেই দুই দিন আগে থেকেই পানি সংগ্রহ করে রাখতে হয়।

যৌথ খামার বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা স্থানীয় বাসিন্দা চেংওয়ং মারমা বলেন, গ্রামের অধিকাংশ পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল। চার-পাঁচ পরিবার মিলে নলকূপ বসানোর সামর্থ্য থাকলেও লাখ টাকা খরচ করে গভীর নলকূপ বসানোর সামর্থ্য নেই। কোনো সংস্থা কিংবা সরকার যদি এই গ্রামে গভীর নলকূপ বসানোর ব্যবস্থা করে দেয় তাহলে গ্রামের মানুষ উপকৃত হবে।

পানি নিতে আসা ম্রাশ্যাং মারমা, রাঅং মারমা ও সাংপ্রু মারমা বলেন, তাঁদের বাড়ি এখান থেকে প্রায় পৌনে এক কিলোমিটার দূরে। দুপুর বেলায় দুইটি পাহাড় অতিক্রম করে আসেন পানি সংগ্রহের জন্য। সকালের দিকে পানি নিতে এলে লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করে পানি নিয়ে যেতে হয়।

পানছড়ি সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. নাজির হোসেন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে সাধারণত নলকূপ ও রিংওয়েল দেওয়া হয়ে থাকে। সেগুলো ৫০-৬০ ফুটের বেশি নয়। কিছু এলাকায় নলকূপ ও রিংওয়েল বসানোর চেষ্টা করা হলেও পানির স্তর না থাকার কারণে পানি পাওয়া যায় না। এখানে গভীর নলকূপ বসানো হলে সারা বছর পানি পাওয়া যেত।

পরিবেশ আন্দোলনের নেটওয়ার্ক সদস্য আবু দাউদ প্রথম আলোকে বলেন, দুর্গম ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে সুপেয় পানি পাওয়া কষ্টকর। কিছু কিছু এলাকার বাসিন্দারা অনেক দূর থেকে পানি সংগ্রহ করেন। তবুও সুপেয় পানি পাওয়া দুষ্কর। এ ব্যাপারে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের পাশাপাশি পার্বত্য জেলা পরিষদ যদি কাজ করে তাহলে পানির কষ্ট কিছুটা কমত।

এদিকে খাগড়াছড়ি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম বলেন, পাহাড়ের দুর্গম ও পাহাড়ি এলাকায় সাত ফুটের নিচে পাথর হওয়ার কারণে নলকূপ ও রিংওয়েল বসানো সম্ভব হয় না। প্রকৌশল বিভাগ থেকে নতুন প্রকল্পের জন্য আবেদন করা হয়েছে বরাদ্দ এলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।