আংশিক অস্ত্রোপচারের পর চলে গেলেন চিকিৎসক

আংশিক অস্ত্রোপচারের পর রোগীকে রেখে চিকিৎসক চলে যাওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে পাবনার বেড়া পৌর এলাকার বেসরকারি ক্লিনিক মৃদুলা জেনারেল হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটে।

রোগীর স্বজনদের ভাষ্য, বেড়া পৌর এলাকার কাগমাইরপাড়ার সাইফুল ইসলাম (৪০) অ্যাপেন্ডিক্সের সমস্যা নিয়ে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় মৃদুলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের চিকিৎসক মোস্তাকিম বিল্লাহ রোগীর শারীরিক টেস্টের কাগজপত্র দেখে দ্রুত অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেন। রোগীর স্বজনেরা চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সাত হাজার টাকায় অস্ত্রোপচার করার বিষয়ে সমঝোতায় আসেন। রাত সাড়ে সাতটার দিকে চিকিৎসক মোস্তাকিম বিল্লাহ রোগীকে অস্ত্রোপচার কক্ষে নিয়ে অস্ত্রোপচার শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যে চিকিৎসক অস্ত্রোপচার কক্ষ থেকে বের হয়ে জানান, রোগীর অ্যাপেন্ডিক্সের কোনো সমস্যা নেই। বরং রোগীর পেটের একটি নাড়ি ছিদ্র হয়ে গেছে। এই সংক্রান্ত অস্ত্রোপচার জটিল দাবি করে তিনি রোগীর স্বজনদের কাছে ওই অস্ত্রোপচারের জন্য ৫৬ হাজার টাকা দাবি করেন বলে রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করেন।

রোগীর স্বজনদের ভাষ্য, এ নিয়ে স্বজনদের সঙ্গে চিকিৎসকের কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে চিকিৎসক রোগীকে অস্ত্রোপচার টেবিলে রেখে অন্য একটি ক্লিনিকে চলে যান। এর কিছুক্ষণের মধ্যে ক্লিনিকের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও বিভিন্ন কক্ষ তালাবদ্ধ করে চলে যান। শুধুমাত্র অস্ত্রোপচার কক্ষে রোগীটি পড়ে থাকেন বলে রোগীর স্বজনেরা অভিযোগ করেন।

এদিকে চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ রোগীকে ক্লিনিকে ফেলে সরে যাওয়ায় রোগীর স্বজনদের সঙ্গে এলাকাবাসী যোগ দিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। একপর্যায়ে রোগীর স্বজন ও এলাকাবাসী চিকিৎসক মোস্তাকিম বিল্লাহর ব্যক্তিগত গাড়িটি ক্লিনিকে পেয়ে সেটি ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে ও ক্ষতিগ্রস্ত গাড়িটি থানায় নিয়ে যায়। পরে রাত সাড়ে ৯টার দিকে রোগীর স্বজনেরা রোগীকে প্রথমে পাবনা সদর হাসপাতালে এবং পরে সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে অবস্থিত খাজা ইউনুস আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় আজ শনিবার রোগীর বড়ভাই আবদুল মান্নান বাদী হয়ে ওই চিকিৎসক ও ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বেড়া মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ক্লিনিকের মালিক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে রোগীর প্রতি আমরা কোনো অবহেলা করিনি বা চলেও যাইনি। বরং ওই রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য অন্যত্র নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা সহায়তা করেছি।’

অভিযোগের বিষয়ে চিকিৎসক মোস্তাকিম বিল্লাহ বলেন, ‘অস্ত্রোপচার করার সময় বোঝা যায় রোগীর অ্যাপেন্ডিক্সের সমস্যা নেই। অন্য একটি সমস্যা। বড় ধরনের অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে আমি রোগীর স্বজনদের ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলতে ও প্রস্তুতি নিতে বলি। এখানে অস্ত্রোপচারের ব্যাপারে আমার টাকা-পয়সা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আমি রোগীর অস্ত্রোপচারের জায়গা ভালোমতো ব্যান্ডেজ করে রেখে অল্প সময়ের জন্য পাশের একটি ক্লিনিকে রোগী দেখতে গিয়েছিলাম। এরই মধ্যে শুনি আমার গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। ঘটনাটির পেছনে হয়তো অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে।’

বেড়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিদ মাহমুদ খান বলেন, ‘ঘটনার ব্যাপারে অভিযোগ পেয়েছি। ভাঙচুরের শিকার গাড়িটি থানায় রাখা হয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’