চলে গেলেন 'দুঃখী' জাকির

>
  • চকবাজারে মৃতের সংখ্যা ৭১ 
  • জাকিরের মৃত্যু ছিল যন্ত্রণাদায়ক
  • জীবনটাও ছিল দুঃখ–কষ্টে ভরা
জাকির হোসেন
জাকির হোসেন

দুই বাচ্চার জন্য বিরিয়ানির প্যাকেট নিয়ে সেদিন বাসায় ফিরছিলেন জাকির হোসেন (৫০)। চকবাজারের চুড়িহাট্টা মোড়ে যখন তাঁর রিকশা পৌঁছায়, তখন সেখানে আগুনের কুণ্ড।

বিস্ফোরণে আচমকা উড়ে আসা একটি জ্বলন্ত কপাটের নিচে চাপা পড়েন জাকির। বাঁচার জন্য যখন আকুতি জানাচ্ছিলেন, তখন অচেনা দুই লোক দগ্ধ অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ১০ দিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে অবশেষে হেরে গেলেন জাকির হোসেন। গতকাল থেমে গেল তাঁর হৃৎস্পন্দন।

গত ২০ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে চকবাজারের চুড়িহাট্টায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৬৭ জন নিহত হন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন চারজন। এ নিয়ে নিহতের সংখ্যা দাঁড়াল ৭১।

জাকিরের মৃত্যু যেমন যন্ত্রণাদায়ক ছিল, তেমনি তাঁর জীবনটাও ছিল দুঃখ-কষ্টে ভরা। শৈশবেই বাবাকে হারিয়েছিলেন তিনি। এরপর পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী ফয়েজ উদ্দীনের পরিবারে তিনি বড় হন। হয়ে ওঠেন ফয়েজ উদ্দীনের পরিবারেরই একজন। গতকাল মৃত্যুর পর তাঁর লাশ যখন মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন স্ত্রী ও দুই সন্তান ছাড়া স্বজন বলতে ফয়েজ উদ্দীনের পরিবারের লোকজনই ছিলেন সেখানে।

ফয়েজ উদ্দীনের ছেলে নাসির উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, প্রায় ১০ বছর বয়সে জাকির তাঁদের পরিবারে আসেন। তাঁরা আপন ভাইয়ের মতোই ছোট থেকে বড় হয়েছেন। ঘটনার দিন জাকির তাঁর মায়ের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। ফেরার পথে দুর্ঘটনার শিকার হন। আগুনে তাঁর শরীরের ৩৮ শতাংশ পুড়ে যায়। অ্যাজমাসহ আরও কিছু শারীরিক সমস্যা আগে থেকেই ছিল। এ কারণে সংক্রমণ তাঁর ফুসফুসেও চলে যায়।

জাকিরকে গতকাল বিকেলেই আজিমপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ব্যবসায়ী ফয়েজ উদ্দীনের মায়া-মমতায় তিনি যেভাবে বেড়ে উঠেছিলেন, মারা যাওয়ার পর তাঁর জায়গাও হয়েছে তাঁর পাশেই। নাসির উদ্দীন বলছিলেন, ‘তিনি বড় দুঃখী ছিলেন। আমরা তাঁকে নিজের বড় ভাই বলেই মনে করেছি। আজিমপুর কবরস্থানে আমাদের পরিবারের জায়গাতেই তাঁকে দাফন করা হয়েছে।’