দুই সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগ

রংপুরের তারাগঞ্জের খারুভাজ নদীর ওপর নির্মিত নেকিরহাট সেতুর সুরক্ষা দেয়াল আট মাস আগে ভেঙে যাওয়ার পর আর সংস্কার করা হয়নি।  প্রথম আলো
রংপুরের তারাগঞ্জের খারুভাজ নদীর ওপর নির্মিত নেকিরহাট সেতুর সুরক্ষা দেয়াল আট মাস আগে ভেঙে যাওয়ার পর আর সংস্কার করা হয়নি। প্রথম আলো

রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার খারুভাজ নদীর ওপর নির্মিত নেকিরহাট এবং উজিয়াল খালের ওপর নির্মিত দুটি সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে উপজেলার ৩২ গ্রামের মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বন্যার পানির স্রোতে রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার খারুভাজ নদীর ওপর নির্মিত নেকিরহাট সেতুটির সেতু রক্ষা দেয়াল আট মাস আগে ভেঙে পড়ে। দীর্ঘদিনেও এটি সংস্কার না করায় ওই সেতুর ওপর দিয়ে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে ২৪টি গ্রামের মানুষ দুর্ভোগে পড়েছে।

এ ছাড়া উজিয়াল খালের ওপর নির্মিত সেতুটির সংযোগ সড়ক ভেঙে যাওয়ায় ৮টি গ্রামের কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল সহজে হাটবাজারে নিতে পারছেন না।

এলাকার কয়েকজন জানান, তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের সঙ্গে রংপুর শহরের যোগাযোগ সহজ করতে ১৯৯৬ সালে খারুভাজ নদীর ওপর নেকিরহাট সেতুটি নির্মাণ করা হয়। প্রায় ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নেকিরহাট বাজারের কাছে সেতুটি নির্মাণ করে উপজেলা পরিষদ। এর দৈর্ঘ্য ৫০ মিটার ও প্রস্থ ৫ দশমিক ৫ মিটার।

গত বছরের জুন মাসে বন্যার পানির স্রোতে সেতুটির পশ্চিম দিকের উইং ওয়াল ভেঙে নদীতে পড়ে যায়। তারপরও সেতুটি মেরামত বা সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে ওই সেতুর ওপর দিয়ে ট্রাক, ট্রলি, মাইক্রোবাসসহ সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এতে নেকিরহাট, নদীরপাড়, খারুভাজ, মমিনপুর, বানিয়াপাড়া, পোদ্দারপাড়া, আসামগঞ্জ, ডাঙ্গাপাড়া, লক্ষ্মীপুর, শাহপাড়া, সরকারপাড়া, ফকিরপাড়া, ছুটমেনানগর, উত্তরপাড়া, ডাঙ্গীরহাট, পাতাইপাড়াসহ ২৪টি গ্রামের ২৩ হাজারেরও বেশি মানুষ ভোগান্তি পোহাচ্ছে।

গতকাল শনিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটির পশ্চিম দিকের উইং ওয়াল ভেঙে নদীতে পড়ে আছে। দক্ষিণ দিকের উইং ওয়ালও দেবে গেছে। পিলারগুলোতো ফাটল ধরেছে। লোকজন ঝুঁকি নিয়ে হেঁটে সেতু পারাপার হচ্ছে।

সেতুর পাশে তামাকখেতে কাজ করছিলেন খারুভাজ গ্রামের সাইফুল ইসলাম। তিনি এই প্রতিবেদককে দেখে খেত থেকে আলে উঠে এসে বলেন, ‘হামার কষ্ট কায়ো বোঝে না। এমনিতে ধান–আলু নেওছে না। বাড়ি থাকি শহরোত নিগি বেচামো তারো বুদ্দি কায়ো করোছে না। সেতু কোনা ভাঙ্গি যাওয়ায় বাড়িতেই ফসল বেচার নাগোছে।’

হেঁটে সেতু পার হচ্ছেন নদীর পাড় গ্রামের দিনমজুর আলতাফ হোসেন । তিনি বলেন, ‘দেখেন না ভাইজান ব্রিজকোনার পশ্চিম প্যাকের মাথা ভাঙি নদীত পড়ছে। ইট–সিমেন্ট ব্যারে যেয়্যা ব্রিজের গোড়াত ধোন হইছে। তাও কায়ও ব্রিজ কোনা ঠিক না করায় এদি গাড়ি চলাচল বন্ধ আছে। হামাক ভয় ভয় করি হাঁটি সেতু পার হবার নাগেছে।’

খারুভাজ গ্রামের কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘ব্রিজ কোনা ঠিক করবার জন্য হামরা গ্রামের লোক ২ দিন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানের গোরত গেছি। দুই মাস আগত উপজেলার চেয়ারম্যান এমপিওকে কইছে। তবুও কায়ও ব্রিজকোনা ঠিক করি দেওচে না।’

হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য নজরুল ইসলাম বলেন, হালকা ও ভারী যানবাহন ছাড়াও ইউনিয়নের ২৪টি গ্রামে ২৩ হাজার মানুষ এ সেতুর ওপর দিয়ে অল্প সময়ে রংপুর শহরে যাতায়াত করে। সেতুটির এক দিকের মোকা ভেঙে পড়ায় যান চলাচল বন্ধ আছে। কয়েক হাজার মানুষও দুর্ভোগে পড়েছে। তারা উৎপাদিত ফসল সহজে বাজারজাত করতে পারছে না।

হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের উজিয়াল খালের ওপর এলজিইডির অর্থায়নে ২০১০ সালে ৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটির দুদিকের সংযোগ সড়ক গত বছরের আগস্ট মাসে পানির স্রোতে ভেঙে যায়। দীর্ঘ সাত মাসেও সংযোগ সড়ক তৈরি না করায় চারআনি, পাচানি, উজিয়াল, কালারঘাট, বুড়িরহাট, পারঘাট, কাশিয়াবাড়ি জানেরপাড়সহ ৮টি গ্রামের ১৪ হাজারেরও বেশি মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। সেতু ব্যবহার করতে না পারায় কৃষকেরা তাঁদের উৎপাদিত ফসল সহজে বাজারজাত করতে পারছেন না।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটির দুই দিকের সংযোগ সড়ক নেই। বিভিন্ন স্থানে ফাটল দেখা দিয়েছে। বিকল্প কোনো পথ না থাকায় লোকজন ঝুঁকি নিয়ে অতিকষ্টে ওই সেতু পারাপার হচ্ছেন। কালারঘাট গ্রামের কৃষক যাদু হোসেন বলেন, ‘হামার কৃষকের কষ্ট কাও দেখছে না। পুল কোনা ঠিক না করায় হামরা ধান, পাট, সবজি ভ্যান, ট্রলিতে করে শহরত নিয়া বিক্রি কইরবার পাওছি না।’

হাড়িয়ারকুঠি ইউপির চেয়ারম্যান হারুন অর রশিদ বলেন, ‘ইউপির তহবিলে অর্থ না থাকায় সেতু দুটি সংস্কার করতে পারছি না। তবে বিষয়টি উপজেলা প্রকৌশলীকে জানিয়েছি।’

উপজেলা প্রকৌশলী হয়দার জামান বলেন, ওই সেতু দুটি বেহালের কথা জানা আছে। চলতি বছরেই সেতু দুটি সংস্কারের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।