সড়কের পাশে ভাগাড় দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ মানুষ

ময়মনসিংহ নগরের চর কালীবাড়ি এলাকায় ভাগাড়ের আবর্জনার দুর্গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। ভাগাড়টি ময়মনসিংহ থেকে শেরপুর, নেত্রকোনা ও কিশোরগঞ্জগামী মহাসড়কের পাশে হওয়ায় প্রতিদিন হাজারো মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। চর কালীবাড়ি এলাকায় বসবাসকারী পরিবারগুলো জানায়, আবর্জনার কারণে শিশুরা প্রায়ই নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের এই ভাগাড়ে ২০ বছর ধরে নগরের সব আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। পাঁচ বছর ধরে ভাগাড়ের আবর্জনা উপচে প্রায়ই মহাসড়কে ছড়িয়ে পড়ছে। বর্ষাকালে চর কালীবাড়ি এলাকায়ও ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, বিভিন্ন সময় ভাগাড়ের আবর্জনার কারণে সৃষ্ট দুর্ভোগের কথা তৎকালীন ময়মনসিংহ পৌরসভাকে জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। সম্প্রতি ময়মনসিংহ পৌরসভা সিটি করপোরেশন হিসেবে যাত্রা শুরু করেছে। চর কালীবাড়ি এলাকাটি সিটি করপোরেশনের অন্তর্ভুক্ত। সিটি করপোরেশনের সীমানার মধ্যে আবর্জনার ভাগাড় না রাখার দাবি জানাচ্ছে এলাকাবাসী।

সম্প্রতি চর কালীবাড়ি এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, ময়মনসিংহ-শম্ভুগঞ্জ মহাসড়ক ঘেঁষে ভাগাড়ের ওপর ফেলা হচ্ছে সিটি করপোরেশনের আবর্জনা। ভাগাড় উপচে পড়ে মহাসড়কে আবর্জনা ছড়িয়ে পড়ছে। মহাসড়কের ওই অংশ সরু হয়ে গেছে। বাস, ট্রাক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন থেমে থেমে চলছে। যানবাহনে থাকা যাত্রীরা নাক চেপে চলাচল করছেন। জাবেদ আলী নামের একজন যাত্রী বলেন, বিকেলে চর কালীবাড়ি এলাকায় ভাগাড়ের সামনের সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়। যানজটে আটকে পড়া যাত্রীরা আবর্জনার দুর্গন্ধে ভোগান্তিতে পড়েন।

চর কালীবাড়ি এলাকার বাসিন্দারা জানান, ভাগাড়ের কারণে এলাকাটিতে প্রচুর মাছি হয়েছে। দুর্গন্ধের কারণে মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছেন না। নানা বয়সী মানুষ বছরের বিভিন্ন সময় পেটের পীড়াসহ নানা অসুখে আক্রান্ত হচ্ছে। আনুমানিক ২০ বছর আগে থেকে ভাগাড়টি করা হয়। প্রথম দিকে আবর্জনা ফেলা হতো খালি জায়গায়। ক্রমে তা ভরাট হতে হতে আনুমানিক পাঁচ বছর আগে থেকে ভাগাড়টি জনবসতির্পূর্ণ এলাকা ও মহাসড়কের পাশে ছড়িয়ে পড়েছে।

ভাগাড়ের পেছনের বাড়ির বাসিন্দা আনিসুর রহমান বলেন, প্রায় ১০ বছর আগে সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়ে তিনি এখানে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেছেন। ভাগাড়ের কারণে তিনি ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা প্রায়ই অসুস্থ হচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুরা বেশি অসুস্থ হয়।

নজরুল ইসলাম নামের একজন বলেন, বর্ষা মৌসুমে ভাগাড়ের আবর্জনা পানিতে ছড়িয়ে পড়ে। তখন এলাকার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ে। এ ছাড়া বছরের প্রায় সব সময় বাতাসে দুর্গন্ধ ছড়ায়। এলাকাবাসীর দাবি, ভাগাড়টি এখান থেকে সরিয়ে নেওয়া না হলেও অন্তত সীমানাপ্রাচীর দিয়ে হলেও মানুষকে দুর্ভোগ থেকে রক্ষা করা।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা যায়, ৩ একর সীমানার ভাগাড়টি লাগোয়া আরও প্রায় ৫০ শতক জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। নতুন করে অধিগ্রহণ করা জমির আশপাশে বসতি নেই। ক্রমেই ভাগাড়টিকে নতুন করে কেনা জমিতে সরিয়ে নেওয়া হবে। আর বসতি ও মহাসড়ক লাগোয়া অংশে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে স্থাপনা করে সেখানে আবর্জনা থেকে সার তৈরির প্রকল্প করা হবে। এতে মানুষ দুর্গন্ধ থেকে রক্ষা পাবে।

সিটি করপোরেশনের পরিচ্ছন্নতাবিষয়ক পরিদর্শক দীপক মজুমদার বলেন, মানুষের ভোগান্তির বিষয়টি বিবেচনা করে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করেছে সিটি করপোরেশন। দ্রুত সময়ের মধ্যে ভাগাড়টি মহাসড়ক ও জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সরিয়ে নেওয়া হবে।