ধর্ষণচেষ্টার গ্লানি থেকে বাঁচতে আত্মহত্যাচেষ্টা

>

• ভুক্তভোগী নারীকেই দোষারোপ করেন তাঁর স্বামী ও অভিযুক্ত তরুণের পরিবার
• স্বামীর এক ভাতিজা বাড়ি ফাঁকা পেয়ে ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন
• সালিসি বৈঠক হয়

নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলায় ধর্ষণচেষ্টার গ্লানি থেকে মুক্তি পেতে এক নারী (৩৫) আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন বলে জানা গেছে। ওই নারীর স্বামীর এক ভাতিজা (২৫) বাড়ি ফাঁকা পেয়ে ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। পরে এ ঘটনায় সালিসি বৈঠক ডেকে যুবকটিকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শনিবার এই সালিসি বৈঠক হলেও গতকাল রোববার পর্যন্ত জরিমানার টাকা পাননি ভুক্তভোগী ওই নারী। এদিকে ঘটনার পর ওই নারীকে তাঁর স্বামী আর ঘরে ঠাঁই না দেওয়ায় তিনি বর্তমানে নিজের বাবার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

উপজেলার গাপালপুর ইউনিয়ন পরিষদ ও ভুক্তভোগী নারীর সূত্রে জানা যায়, ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে চাচা বাড়িতে না থাকার সুযোগে মো. সেলিম নামের এক তরুণ তাঁর চাচিকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এ সময় ওই নারীর চিৎকারে আশপাশের লোকজন ছুটে এলে ওই তরুণ পালিয়ে যান। পরের দিন ওই গৃহবধূ এ ঘটনার বিচার চাইতে ওই তরুণের বাড়িতে যান। কিন্তু ওই তরুণের পরিবার বিচার করে দেওয়ার পরিবর্তে তাঁকে অপমান করে বাড়ি থেকে বের করে দেন। অপমান সহ্য করতে না পেরে ওই নারী সেখানেই (তরুণের বাড়ি) কীটনাশক পান করে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। তাৎক্ষণিক তাঁকে স্থানীয় একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে সুস্থ হওয়ার পর ওই নারীকে তাঁর স্বামীও ঘটনার জন্য দায়ী করে অপদস্থ করেন। এতে ওই নারী নিজের বাবার বাড়িতে চলে যান। পরে তিনি ঘটনার বিচার চেয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে বিচার দাবি করেন। গত শনিবার (২ মার্চ) ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে এ ব্যাপারে সালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অভিযোগের সত্যতা প্রমাণিত হওয়ায় ওই তরুণকে দোষী সাব্যস্ত করে পরিষদের চেয়ারম্যান তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। তবে গতকাল পর্যন্ত ওই নারী জরিমানার টাকা হাতে পাননি। ওই নারীর স্বামীও তাঁকে বাড়িতে ঠাঁই দেননি। বর্তমানে তিনি বাবার বাড়িতে অবস্থান করছেন।

ভুক্তভোগী নারী গতকাল বিকেলে জানান, পারিবারিক ও সামাজিক চাপে তিনি আদালতে বা থানায় বিচার চাইতে যাননি। পারিবারিক চেষ্টায় চেয়ারম্যান সালিস করে দিয়েছেন। কিন্তু সালিসের রায় মোতাবেক তিনি ৫০ হাজার টাকা পাওয়ার কথা থাকলেও তা তখনো হাতে পাননি। সালিসের পর ওই তরুণ গা ঢাকা দিয়েছেন।

ওই নারীর কৃষিশ্রমিক স্বামীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমার ভাইস্তার সঙ্গে বউয়ের খারাপ সম্পক্ক আছে, মুনে হয়। তাই বউরে গাইল দিছি। একন চেয়ারম্যান আবার সালিস কইরে দেবেন। এরপর যা সিদ্ধান্ত হয়, সেটাই করব।’

এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে গতকাল বিকেলে ওই তরুণের বাড়িতে গিয়েও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর এক ভাই জানান, একটা ঘটনা ঘটেছিল। তবে চেয়ারম্যান মীমাংসা করে দিয়েছেন। জরিমানার টাকা পরিশোধ করা হবে।

গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম খান জানান, ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। তবে অপ্রীতিকর কিছু ঘটনা ঘটেছিল। তাঁরা পরস্পর আত্মীয়। তাঁদের অনুরোধে তিনি বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। ওই নারীর চিকিৎসা বাবদ ছেলেপক্ষকে কিছু খরচ দিতে বলা হয়েছে। এ ধরনের গুরুতর অপরাধের সালিস করা যায় কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তো বিচার না। দুই পরিবারকে একত্র করার চেষ্টা করা হয়েছে।