এহসান মুক্তি পেয়েছেন

এহসান হাবিব
এহসান হাবিব

গ্রেপ্তারের ১৩ দিনের মাথায় গতকাল রোববার জামিনে মুক্তি পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এহসান হাবিব (২২)। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ক্যাম্পাস থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

এহসানের বন্ধুরা বলছেন, গরিবের ছেলে এহসান রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন না। ঢাকায় কোচিং করিয়ে তিনি নিজে চলতেন, বাড়িতে মা আর প্রতিবন্ধী বোনের খরচও জোগাতেন। বিনা অপরাধে পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। এ নিয়ে গতকাল প্রথম আলোতে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়।

এদিকে ছেলেকে গ্রেপ্তারের পর থেকেই মা রাবেয়া বেগমের কান্না আর থামছে না। ২০ ফেব্রুয়ারি বিকেলে কারাগারে ঢোকার আগে একজন আইনজীবীর ফোন দিয়ে মায়ের সঙ্গে সর্বশেষ কথা বলেছিলেন এহসান। মাকে বলেছিলেন, ‘আম্মু তুমি কান্নাকাটি করো না। পুলিশ আমাকে গ্রেপ্তার করেছে। আমাকে কেরানীগঞ্জ কারাগারে নিয়ে যাচ্ছে। আমি নির্দোষ।’

এহসানদের বাড়ি নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নওয়াগ্রামে। এহসান গ্রেপ্তারের পর থেকে তাঁদের স্বজনেরা তাঁর মাকে সান্ত্বনা দিতে প্রতিদিনই এহসানদের বাড়িতে আসেন। গতকালও স্বজন ও প্রতিবেশীদের ভিড় দেখা যায়।

এহসানের মা বলেন, ২০ শতাংশ ফসলি জমি আর ৫ শতাংশ জমির ওপর ছোট্ট দুটি বসতঘর ছাড়া আর কিছুই নেই তাঁদের। ২০১৪ সালে এহসান যখন উচ্চমাধ্যমিকের ছাত্র, তখন তাঁর বাবা আজিজুর রহমান ফকির হঠাৎ হৃদ্‌রোগে মারা যান। পড়াশোনার পাশাপাশি পরিবারের দায়িত্বও কাঁধে এসে পড়ে ছেলেটির। ছোট বোন আফসানা আক্তার (১৬) বেড়ে উঠছে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধিতা নিয়ে। বাবার মৃত্যুর শোক কাটিয়ে এহসান উচ্চমাধ্যমিকের পর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যায়ের ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হন।

এহসানের বন্ধুরা বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয়। ঘটনার রাতেই কোতোয়ালি থানার পুলিশ চারজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা ১০০ থেকে ১২০ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। ঘটনার পরদিন ছাত্রলীগের কেন্দ্র থেকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা আসে। এ ঘোষণায় ছাত্রলীগেরই একটি পক্ষ ক্যাম্পাসে বিজয় মিছিল করে, আগের কমিটির পোস্টার ছিঁড়ে ফেলে। ক্যাম্পাস আবার উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ অভিযান চালায়। সন্ধ্যায় ক্যাম্পাস থেকে এহসানকে ধরে নিয়ে আগের দিন করা মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। 

জামিন
গতকাল ঢাকার মহানগর হাকিম শাহীনুর রহমানের আদালত এহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া তিনজনের জামিন মঞ্জুর করেন বলে জানান এহসানের আইনজীবী জাহেদুল আলম। জামিন পাওয়া বাকি দুজন হলেন ফিন্যান্স বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জি এম শিশির এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের তৃতীয় বর্ষের রায়হানুল ইসলাম।

এ বিষয়ে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) মওদুদ হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, আদালত এহসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ বিবেচনা করে জামিন দিয়েছেন। তদন্তকাজ সম্পূর্ণ করে যাঁদের অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাঁদের নামই কেবল অভিযোগপত্রে থাকবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘বিনা অপরাধে কোনো শিক্ষার্থী যেন হয়রানির শিকার না হয়, এর জন্য আমরা সব সময় ব্যবস্থা গ্রহণ করি। পরবর্তী তদন্ত সাপেক্ষে এহসানের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়া গেলে তাঁর নাম অভিযোগপত্র থেকে বাদ দেওয়া হবে বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছে পুলিশ।’

এহসানের বন্ধুরা বলেন, কোচিংয়ে যাতায়াতের জন্য সম্প্রতি একটি মোটরসাইকেল কেনেন এহসান। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে তাঁর মেসে মোটরসাইকেল রাখার জায়গায় না থাকায় তিনি ক্যাম্পাসের নতুন ভবনের নিচতলায় মোটরসাইকেল রাখতেন। ১৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সেখানে মোটরসাইকেল রাখতে গিয়ে তিনি গ্রেপ্তার হন। এরপর গত বৃহস্পতিবার এহসানের স্থানীয় অভিভাবক শামীম আহমেদ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে শামীমের হাতে একটি খোলা চিঠি দেন এহসান। সেই চিঠিতে এহসান উল্লেখ করেন, কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে বাড়ি ফিরে তিনি মা ও ছোট বোনসহ আত্মাহুতি দেবেন। ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া চিঠিটি কর্তৃপক্ষের নজরেও আসে। এহসান ও তাঁর সঙ্গে গ্রেপ্তার হওয়া জি এম শিশির সংঘর্ষে যুক্ত ছিলেন না বলে ফিন্যান্স বিভাগ থেকে প্রক্টর কার্যালয়ে প্রত্যয়নপত্র দেওয়া হয়।