৫০০ টাকা খরচ করে ৩৮০ টাকায় বিক্রি

ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

রংপুরের বদরগঞ্জে আমনের শুরুতে প্রতি মণ (২৮ কেজি) ধান বিক্রি হয়েছে ৫২০ টাকায়। দাম কমতে কমতে বর্তমানে সেই ধান প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ টাকায়। ধানের এই দরপতনে এলাকার কৃষকেরা হতাশ হয়ে পড়েছেন। কৃষকদের মতে, মণপ্রতি ধান উৎপাদনে তাঁদের উৎপাদন খরচ পড়েছে গড়ে প্রায় ৫০০ টাকা।

ধানের দাম কমতে থাকায় কৃষকদের পাশাপাশি ধান ব্যবসায়ীরাও বিপাকে পড়েছেন। কারণ, ধানের দাম কমতে থাকলে তাঁদের অনেক লোকসান হবে।

দুটি কারণে ধানের দাম পড়ে গেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এর মধ্যে একটি হচ্ছে আমনে উৎপাদন ও হঠাৎ আমদানি বেশি। অন্যটি হচ্ছে বাজার পড়ে যাওয়ায় চালকলগুলো ধান কিনছে না।

বদরগঞ্জ বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৫ দিন আগে প্রতি মণ আমন ৪৫০-৪৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত শনিবার সেই আমনের বাজারদর ছিল ৩৮০ টাকা।

কৃষকেরা জানান, তাঁরা মৌসুমের এক ফসল বিক্রি করে আরেক মৌসুমের ফসল উৎপাদনে খরচ মেটান। বর্তমানে তাঁরা বোরো চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। এ জন্য বোরো চাষের খরচ জোগাড়ের জন্য কৃষকেরা আমন ধান বাজারে নিয়ে বিক্রি করছেন। কৃষকদের অভিযোগ, ওই সুযোগ কাজে লাগিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কম দামে বাজার থেকে ধান কিনছেন।

আমন ধান চাষের খরচের বিষয়ে আমরুলবাড়ী গ্রামের কৃষক আবদুস সালাম বলেন, আমনে এক একর জমি ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করতে খরচ ৩ হাজার ২০০ টাকা, ধান রোপণ করতে শ্রমিকের মজুরি ৩ হাজার টাকা, ধানবীজ ১ হাজার ৬০০ টাকা, রাসায়নিক সার ২ হাজার ৭০০ টাকা, নিড়ানি খরচ ৪ হাজার টাকা, কীটনাশক ২ হাজার ৫০০ টাকা, সেচ খরচ ৩ হাজার টাকা, কাটা-মাড়াইয়ে খরচ ৮ হাজার ২০০ টাকা। সব মিলিয়ে এক একরে খরচ হয়েছে ২৮ হাজার ২০০ টাকা। তিনি এক একরে ধান পেয়েছেন ৫৬ মণ (২৮ কেজিতে মণ)। প্রতি মণ ধানে উৎপাদন খরচ পড়েছে ৫০৩ টাকা। বর্তমানে প্রতি মণ ধানের বাজারদর ৩৮০ টাকা হিসেবে ৫৬ মণ ধানের দাম হয় ২১ হাজার ২৮০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি একরে আমন চাষে কৃষককে লোকসান গুনতে হচ্ছে ৬ হাজার ৯২০ টাকা।

বদরগঞ্জের রাধানগর অফিসপাড়া গ্রামের কৃষক আনারুল হক বলেন, ‘কেষকের প্যাকে কাঁয়ো দ্যাকে না (কৃষকের দিকে কেউ তাকায় না)। সরকার দ্যাকোচে খালি চাকরিয়াক (সরকার চাকরিজীবীদের কথাই ভাবে)। ধান আবাদ করি হামরা কেষকেরা মরি যাওচি। বাজারোত দাম নাই। খালি লস। কী করি হামরা? হামরা কি ছইলপইল নিয়া মরমো!’

রোহানীপাড়া বাতাসন গ্রামের কৃষক শাহাদত হোসেন (৬৫) বলেন, ‘ধান আবাদ করি চাইর বছর থাকি লস খাওচি। লস খাইতে খাইতে হামার পিট দেওয়ালোত ঠেকি গেইচে। এক মণ আমন দান আবাদ করতে খরচ পড়ছে প্রায় ৫০০ টাকা। তাক এ্যালা বাজারোত বেচাওচি ৩৮০ টাকা। তা হইলে কন কেষক কি বাঁচপে! আমোনোত লস খায়া ফির ইরি গাড়োছি। ধানের যে অবস্থা, মনে হওচে ইরিতো লস হইবে। সংসার কীভাবে চলবে, সেইটা নিয়া খুব চিন্তায় পড়ি গেছি।’

তারাগঞ্জের ব্রাদার্স অ্যাগ্রো ফুড প্রোডাক্টসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইকরামুল হক বলেন, ‘বাজারে চালের দাম কম। ধান ছাঁটাই করে চাল বিক্রি করতে পারছি না। এতে টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। আগে বেশি দামে ধান কিনে অনেকটা বিপাকে পড়েছি।’

এই বিষয়ে বদরগঞ্জের দামোদরপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রহমান বলেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ কৃষক। ধান চাষ করে অব্যাহত লোকসানে সেই কৃষকের কোমর ভেঙে পড়েছে। ধানের দাম এখনই বাড়ানোর পদক্ষেপ নেওয়া না হলে কৃষকেরা ধান আবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন। এতে খাদ্য উৎপাদন ব্যাহত হবে এবং দেশের অর্থনীতিতে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এবার উপজেলায় ১৯ হাজার ৫৯৫ হেক্টর জমিতে আমন চাষ করা হয়েছিল। ধান উৎপাদিত হয়েছিল ১ লাখ ৩৩ হাজার ৮৮৭.৪৭ মেট্রিক টন।