গাছের 'রক্ত' ঝরিয়ে নানা ধরনের প্রচার

গাছে পেরেক দিয়ে সাঁটানো প্রচারপত্র। গতকাল মৌলভীবাজারের চাঁদনীঘাট এলাকায়।  প্রথম আলো
গাছে পেরেক দিয়ে সাঁটানো প্রচারপত্র। গতকাল মৌলভীবাজারের চাঁদনীঘাট এলাকায়। প্রথম আলো

গাছের গায়ে ঠোকা হয়েছে অসংখ্য পেরেক। পেরেক দিয়ে লাগানো হয়েছে প্রচারপত্র। গাছগুলো বিনা পয়সায় প্রচারের ক্ষেত্র হয়ে উঠেছে। তাই ছোট–বড় বিভিন্ন আকারের টিনের মধ্যে লেখা প্রচারপত্র সাঁটাতে গিয়েই গাছে পেরেক ঠোকাঠুকি চলছে।

এ অবস্থা মৌলভীবাজার শহর ও আশপাশের এলাকায়। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে এবং শহরের চাঁদনীঘাট বাসস্ট্যান্ড এলাকা ও মনু সেতু এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক দিন ধরেই সড়কের পাশে বড় গাছের শরীরে ছোট–বড় অনেক ধরনের প্রচারপত্র লাগানো হচ্ছে। টিনের মধ্যে লেখা বিভিন্ন আকারের এই প্রচারপত্র স্থায়ীভাবে আটকে রাখার জন্য পেরেক মেরে গাছের সঙ্গে লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কোনো কোনো গাছে আট-দশটা বা তারও বেশি প্রচারপত্র আছে।

গাছের শরীরে গেঁথে থাকার কারণে গাছে ক্ষতের সৃষ্টি করছে। কোনো গাছের ক্ষতস্থানে পচন ধরছে। গাছ দুর্বল হয়ে পড়ছে। ঝড়-ঝঞ্ঝায় ক্ষতিগ্রস্ত গাছ ভেঙে পড়ছে। শুধু শহর এলাকায় নয় ছোট–বড় স্ট্যান্ড, সড়ক-মহাসড়কের পাশে ছোট–বড় হাটবাজার, গ্রামীণ হাটবাজারে এ রকম প্রচারপত্রের ছড়াছড়ি।

পরিবেশকর্মী সোনিয়া মান্নান বলেন, ‘গাছে পেরেক মেরে বিজ্ঞাপন লাগানো মোটেই উচিত না। গাছেরও তো প্রাণ আছে, অনুভূতি আছে। একজন মানুষ হিসেবে যেমন আমার গায়ে পেরেক ঠুকলে ব্যথা পাব, গাছেরও তাই।’

তিনি আরও বলেন, উদ্ভিদবিজ্ঞানের মতে গাছের গায়ে পেরেক বা কোনো কিছু দিয়ে ক্ষত তৈরি করলে, তা গাছের স্বাভাবিক কাজে বিঘ্ন ঘটায়। যেমন খাদ্য পরিবহন, পানি ও অন্যান্য উপাদান সরবরাহ ব্যাহত হয়। তা ছাড়া জীবাণু আক্রমণও হতে পারে। গাছের বৃদ্ধি, উৎপাদন ব্যাহত হতে পারে। গাছ মারা যেতে পারে।

মৌলভীবাজার সরকারি কলেজের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন গতকাল রোববার বলেন, ‘গাছে আঘাত করলে গাছ একধরনের প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। যাকে আমরা ব্যথা পাওয়া বলি। গাছের গায়ে পেরেক লাগানোর ফলে যে ছিদ্র হয়, তা দিয়ে গাছের অভ্যন্তরে পানি ও অণুজীব তথা ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও ছত্রাক ঢুকে গাছে পচন ধরায়। ফলে গাছের শারীরতাত্ত্বিক প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটে। একসময় গাছটি মরে যায়। তা ছাড়া পেরেকের ছিদ্র ছাড়াও ব্যানারের আড়াল হওয়ায় গাছ সরাসরি সূর্যালোক বা পানি পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে পারে। এতে সালোকসংশ্লেষণ–প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়।’

ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মো. রোকনউদ্দিন বলেন, তিনি উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেবেন। যেন কেউ গাছে পেরেক ঠুকে আর প্রচারপত্র লাগাতে না পারে।