আবর্জনায় ভরা পুকুর-দিঘি

আবর্জনায় ভরা সমাজসেবা কার্যালয়–সংলগ্ন  পুকুর। ছবিটি গতকালের।  প্রথম আলো
আবর্জনায় ভরা সমাজসেবা কার্যালয়–সংলগ্ন পুকুর। ছবিটি গতকালের। প্রথম আলো

আবর্জনায় ভরে গেছে কুমিল্লা নগরের পুকুর ও দিঘিগুলো। এসব জলাশয়ের দূষিত পানি গৃহস্থালি কাজে ব্যবহার করছেন নগরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী। পচা পানির গন্ধে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন এসব জলাশয়-সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা ও পথচারীরা।

গতকাল রোববার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের অন্তত ১০টি পুকুর ও দিঘি ঘুরে দেখা গেছে, এসব জলাশয়ের পানি ব্যবহারের একেবারেই অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নগরের আদালত ভবনের উত্তর পাশের সড়ক–সংলগ্ন সমাজসেবা কার্যালয়ের পুকুর আবর্জনায় ভরে আছে। পুকুরের দক্ষিণ পাড়ে দুটি টং দোকান স্থাপন করা হয়েছে। পুরো পুকুরই যেন ময়লার ভাগাড়। তার ওপর পুকুরের তিন দিকে একটু একটু করে দখল হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, একটি চক্র ওই পুকুর দখল করার জন্যই ময়লা ফেলে ভরাটের চেষ্টা করছে।

একই অবস্থা ছোটরা পূর্বপাড়া জংলি বিবি মসজিদ পুকুরের। একসময় সেখানে মুসল্লিরা অজু করতেন। এখন এই পুকুর ময়লা–আবর্জনা ও প্লাস্টিকসামগ্রীতে ভরা। কুমিল্লা নগরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ধর্মসাগর দিঘির মধ্যে বাঁশের মাচা দেওয়া হয়েছে। এতে করে দিঘির সৌন্দর্য কমে গেছে। বাদুড়তলা ফয়জুন্নেছা পুকুর কচুরিপানায় ভরা। পশ্চিম বাগিচাগাঁও জেলা পরিষদ সুপার মার্কেট লাগোয়া পুকুরে কচুরিপানা জমে আছে। মোটর গ্যারেজের মালামাল ধোয়ার কারণে পুকুরটির পানি কালো হয়ে গেছে। নগরের কান্দিরপাড় রানীরদিঘির বিভিন্ন অংশে পলিথিন এবং পানির খালি বোতল ভাসতে দেখা গেল। নানুয়াদিঘি ও চকবাজারের দিঘিরও একই অবস্থা। অশোকতলা পুকুরের মধ্যেও ফেলা হয়েছে ময়লা। বিসিক শিল্পনগরীর পুকুরও আবর্জনায় ভরা। পদুয়ার বাজারে পুকুরের পাড়ে নানা ধরনের স্থাপনা গড়ে উঠেছে।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশন সূত্রে জানা গেছে, আগে থেকেই কুমিল্লাকে ট্যাংকের (দিঘি বা পুকুর) শহর বলা হতো। তখন নগরের বাসিন্দারা পুকুরে সাঁতার কাটত। পুকুরের পানি দিয়েই গৃহস্থালিসহ যাবতীয় কাজ হতো। তখন এই শহরে অন্তত ৩৫০টির মতো দিঘি ছিল। এখন জনবসতি বেড়ে যাওয়ার কারণে নগরে পুকুরের সংখ্যা অর্ধেকের মতো নেমে এসেছে। আর যেগুলো আছে সেগুলো দখল, দূষণে ভরা। এর পানি মুখে নেওয়া যায় না। গন্ধ আর কীটপতঙ্গে ভরা।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি ও কুমিল্লা মেডিকেল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কুমিল্লাকে বলা হয় ব্যাংক ও ট্যাংকের শহর। বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থার গোড়াপত্তন হয় এই শহরে। এখানে ছিল অসংখ্য দিঘি ও পুকুর। এই শহর সম্পূর্ণ একটি আবাসিক শহর। ছোটবেলায় আমরা পাড়ার ছেলেরা মিলে দল বেঁধে পুকুরে–দিঘিতে লাফিয়ে পড়তাম। গোসল করতাম। এখন আর আগের অবস্থা নেই। নগরায়ণের কারণে বহু দিঘি ও পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। যেগুলো আছে সেগুলোতে ময়লা–আবর্জনা ফেলে দূষিত করা হচ্ছে। এগুলো রক্ষা করা দরকার।’

সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) কুমিল্লার সাধারণ সম্পাদক আলী আকবর মাসুম বলেন, জনসচেতনতা না বাড়লে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়।’

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. মনিরুল হক বলেন, মানুষ ময়লা–আবর্জনা নির্ধারিত স্থানে না ফেলে যততত্র ফেলে থাকেন। কেউ কেউ পুকুরে ফেলেন। এই ক্ষেত্রে জনগণকে সবার আগে সচেতন হতে হবে। সিটি করপোরেশন নগরের বিভিন্ন দিঘি ও পুকুরের পাড়ে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য কাজ করছে। ইতিমধ্যে কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের পুকুরে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত ময়লা ও কচুরিপানা পরিষ্কার করা হয়েছে। শিগগিরই অন্য জলাশয়গুলোর বিষয়েও তাঁরা উদ্যোগ নেবেন।