শ্রেণিকক্ষ-সংকটে পাঠদান ব্যাহত

টিনের বেড়া দিয়ে ঘর দুই ভাগ করা হয়েছে। অর্ধেক ঘরে গাদাগাদি করে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। গত রোববার দুপুরে তোলা ছবি।  প্রথম আলো
টিনের বেড়া দিয়ে ঘর দুই ভাগ করা হয়েছে। অর্ধেক ঘরে গাদাগাদি করে চলছে শিক্ষার্থীদের পাঠদান। গত রোববার দুপুরে তোলা ছবি। প্রথম আলো

মুন্সিগঞ্জ সদর উপজেলার দক্ষিণ কেওয়ার সাতানিখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কক্ষ মাত্র দুটি। এই দুটি কক্ষের মাঝখানে বেড়া দিয়ে চারটি ঘর বানানো হয়েছে। একটি কক্ষে শিক্ষকেরা দাপ্তরিক কাজ করছেন, অন্য তিনটি কক্ষে শিশু থেকে পঞ্চম পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণির পাঠদান করা হচ্ছে। জায়গার সংকুলান না হওয়ায় শিক্ষার্থীদেরও গাদাগাদি করে বসতে হচ্ছে।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, সেখানে শিশু থেকে পঞ্চম পর্যন্ত ছয়টি শ্রেণিতে ২৩১ শিক্ষার্থী আছে। ১৯৬৯ সালে টিনের ঘরে এ বিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে টিনের ঘরের জায়গায় চার কক্ষের একটি পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হয়। সেটি জরাজীর্ণ হয়ে যাওয়ায় ২০০৭ সালে পুরোনো ভবনের পাশে দুই কক্ষের আরেকটি স্থাপনা তৈরি করা হয়। ২০১৪ সালে পুরোনো স্থাপনা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকে নতুন স্থাপনার দুটি কক্ষকে চারটি অংশে ভাগ করে তিনটিতে পাঠদান এবং একটিতে শিক্ষকদের বসার কক্ষ বানানো হয়েছে।

গত রোববার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায় সাতানিখীল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পূর্ব ও উত্তর পাশে দুটি পাকা সড়ক। বিদ্যালয়ের মূল ফটকের দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ডান দিকে পরিত্যক্ত ভবনটি চোখে পড়ে। বাঁ দিকে নতুন ভবনটির অবস্থান। একটি কক্ষের মাঝখানে টিনের বেড়া দিয়ে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির ক্লাস চলছে। এক পাশের শব্দে অন্য পাশে পড়া তো দূরে থাক, কথা বলা ও শোনা মুশকিল। অন্য কক্ষটিতে বিদ্যালয়ের বোর্ড ও আলমারি দিয়ে বেড়া দেওয়া হয়েছে। এক পাশে পঞ্চম শ্রেণির পাঠদান চলছে, অন্য পাশে দুজন শিক্ষিকা নামাজ আদায় করছেন। কয়েকজন দাপ্তরিক কাজ করছিলেন।
বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা জানায়, প্রতিদিন এই অবস্থায় ক্লাস করে তারা। ক্লাসে একটু দেরি করে এলে বসার জায়গা পাওয়া যায় না। দুজনের বেঞ্চে কখনো গাদাগাদি করে চারজনকে বসতে হয়। পাশের কক্ষের চেঁচামেচিতে কী পড়ানো হয়, তা–ও ঠিকমতো বোঝা যায় না।

শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিভাবক জানান, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে বসার জায়গাতে গাদাগাদি করে বসতে হয়। এক কক্ষকে দুই অংশে ভাগ করে শিক্ষকেরা ক্লাস নিচ্ছেন ঠিকই; কিন্তু পড়াশোনার কোনো পরিবেশ নেই। তাঁরা জানান, বিদ্যালয়ে খেলার মাঠ নেই। বিদ্যালয়ের দুই পাশে সড়ক। সেখানে খেলতে গিয়ে বিভিন্ন সময় গাড়িতে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও বিষয়গুলো জানে। খুব দ্রুত ভবন ও খেলার মাঠ নির্মাণ করা দরকার।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুলতানা আক্তার জানান, বিদ্যালয়টিতে মাত্র দুটি কক্ষ হওয়ায় ক্লাস করতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের স্বাভাবিক পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। ভালো পড়াশোনার জন্য স্থানীয়রা তাঁদের সন্তানদের কিন্ডারগার্টেন ও অন্য বিদ্যালয়ে ভর্তি করাচ্ছে। ফলে বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়ার পরিবর্তে দিনে দিনে কমছে। ২০১৩ সালে প্রায় ৩০০ শিক্ষার্থী ছিল, এখন ২৩১ জনে নেমে এসেছে।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা এম সুলতান আহম্মেদ জানান, শ্রেণিকক্ষ–সংকটের বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানকে কয়েকবার জানানো হয়েছে। এখনো কেউ কোনো ব্যবস্থা নেননি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাসিমা খানম প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টিতে গিয়ে ভবন সংকটের বিষয়টি দেখেছি। ভবনের বিষয়ে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গেও কথা বলেছি। আশা করি, শিগগিরই নতুন ভবন হবে।’
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা তাপস কুমার অধিকারী প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিদ্যালয়টির নতুন ভবনের জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কার্যক্রম-৪–এর মাধ্যমে দেশে প্রায় ৪০ হাজার শ্রেণিকক্ষ করা হবে। সেখানেও একটি তালিকা পাঠিয়েছি।’