নিষেধ মানলেন না সাংসদ কুদ্দুস

নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও স্থানীয় সাংসদ আবদুল কুদ্দুস রোববার সন্ধ্যায়  উপজেলার রাজাপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বইমেলায় বক্তব্য দেন।  প্রথম আলো
নির্বাচন কমিশনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও স্থানীয় সাংসদ আবদুল কুদ্দুস রোববার সন্ধ্যায় উপজেলার রাজাপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে বইমেলায় বক্তব্য দেন। প্রথম আলো

নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগে নাটোর-৪ (বড়াইগ্রাম-গুরুদাসপুর) আসনের সাংসদ আবদুল কুদ্দুসকে নির্বাচন কমিশন থেকে নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে বলা হলেও তিনি এলাকা ছাড়েননি। গত রোববার সন্ধ্যায় তিনি বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে একটি বইমেলার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য দেন। তাঁর উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের নেতারা দলের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনের পক্ষে ভোট চেয়েছেন। তবে সাংসদ নিজে অবশ্য সরাসরি ভোট চাননি।

বড়াইগ্রাম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারির লিখিত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কমিশন গত বুধবার সাংসদ আবদুল কুদ্দুসকে ওই নির্বাচনী এলাকা ছাড়তে বলে। সম্প্রতি বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় যোগ দিয়ে নৌকার প্রার্থীকে প্রতিহত করার ঘোষণা–সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সিদ্দিকুর রহমান নির্বাচন কমিশনের কাছে সাংসদকে এলাকার বাইরে রাখার আবেদন করেন। সিদ্দিকুর রহমান জানান, তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বুধবার নির্বাচন কমিশন থেকে সাংসদ আবদুল কুদ্দুসকে নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত নিজ নির্বাচনী এলাকার বাইরে থাকতে বলা হয়।

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা সত্ত্বেও সাংসদ আবদুল কুদ্দুস এলাকায় অবস্থান করছিলেন। রোববার সন্ধ্যায় তিনি বড়াইগ্রাম উপজেলার রাজপুর উচ্চবিদ্যালয় মাঠে একটি বইমেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত হন। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি শাহজাহান কবির, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল জলিল প্রামাণিক, গোপালপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোতালেব হোসেন খান, গোপালপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম প্রমুখ।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আবদুল জলিল বলেন, ‘সাংসদ আবদুল কুদ্দুসের কল্যাণে গোপালপুর ইউনিয়নে অনেক উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। তাঁর এই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে ১০ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আমাদের মনোনীত প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনকে আনারস প্রতীকে ভোট দেবেন।’ এই মোয়াজ্জেম হোসেন বড়াইগ্রাম উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক।
এরপর সাংসদ বক্তব্য দেন। তবে তিনি কারও জন্য ভোট চাননি। অন্য বক্তাদের সঙ্গে সাংসদ এক ঘণ্টার বেশি সময় অবস্থান করার পর অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করেন।
নৌকার প্রার্থী সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘সাংসদ নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা ভঙ্গ করে রোববার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত রাজাপুরের বইমেলায় উপস্থিত ছিলেন। তাঁর সঙ্গে থাকা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল জলিল আমার প্রতিপক্ষ প্রার্থীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন। এটা আচরণবিধির সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানাচ্ছি।’

এ ব্যাপারে বড়াইগ্রাম উপজেলা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুর রহিম বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের উপসচিব আতিয়ুর রহমান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে সাংসদ আবদুল কুদ্দুসকে এলাকার বাইরে থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছিল। তাঁকে বিষয়টি অবহিত করা হয়। তিনি তাতে সম্মতি দিয়ে এলাকা ছেড়েছিলেন। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনকে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছিল। কিন্তু রোববার যে তিনি আবার নির্বাচনী এলাকার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন, এমন তথ্য আমার জানা ছিল না। বিষয়টি জানার পর আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, ভবিষ্যতে তিনি এমন কিছু করবেন না, যাতে নির্বাচন কমিশন বিব্রত হয়।’
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানার জন্য গতকাল সোমবার বেলা সোয়া একটায় সাংসদ আবদুল কুদ্দুসের সঙ্গে তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তাঁর ব্যক্তিগত সহকারী ইব্রাহিম হোসেন জানান, সাংসদ রোববার কোথায় ছিলেন, তা তাঁর জানা নেই।