'শুইলেই ছাঁইক্যা ধরে মশা'

প্রথম আলো ফাইল ছবি
প্রথম আলো ফাইল ছবি

‘সারা রাইতে একটুও ঘুমাইতে পারি নাই। রাইত ভইরা মশা মারছি। শুইলেই ছাঁইক্যা ধরে মশা। দেখেন দেখেন, মশায় কামড়াইয়া আমার পায় কী হাল করছে।’ কথাগুলো বলছিলেন যাত্রাবাড়ী নবীনগরের বাসিন্দা সৈয়দ বাপ্পি।

শীতের শুরু থেকেই যাত্রাবাড়ীসহ আশপাশের এলাকাগুলোয় মশার উপদ্রব বাড়তে থাকে। এখন শীত বিদায় নিলেও মশার উপদ্রব কমার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং দিনে দিনে মশার যন্ত্রণা ক্রমেই বাড়ছে। মশার কামড়ে জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে এলাকাবাসীর।

এই এলাকায় ঘুরে জানা গেল, যাত্রাবাড়ী, বিবির বাগিচা ১ থেকে ৪ নম্বর গেট, কাজলা, মিরহাজিরবাগ, সায়েদাবাদ, গোলাপবাগ, ধলপুর, নবীনগর, সুতিখালপাড় এলাকায় বেলা গড়াতেই শুরু হয় মশার অত্যাচার। সুতিখালপাড়ের বাসিন্দা আমিনা খাতুন বলেন, ‘আমি একটি বাসার পাঁচতলায় থাকি। বিকেল হলেই দরজা-জানালা ভালো করে লাগাতে হয়। একদিন একটু দেরি হয়ে গেল মানেই ঘরভর্তি মশা। তখন কয়েল আর স্প্রে, কোনোটাতেই কাজ হয় না।’

বিবির বাগিচা এলাকার বাসিন্দা উম্মে হানি বলেন, ‘আমার ছোট দুইটা ছেলে–মেয়ে। সন্ধ্যা থেকেই পড়তে বসতে হয় ওদের। মশার জ্বালায় টেবিলে বসতে পারে না। তাই সন্ধ্যা নামতেই মশারি টানিয়ে বিছানার উপরেই ওদের পড়ার ব্যবস্থা করি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেল এসব এলাকার মুদিদোকানে শীতের শুরু থেকেই কয়েল ও মশা মারার স্প্রের বিক্রি বেড়েছে। দোকানিরা এখন এসব পণ্য বেশি মজুত রাখছেন। নবীনগর এলাকার দোকানি শরীফ উদ্দিন বলেন, ‘আগে কয়েল আর স্প্রে এক মাসে তিন কার্টুন রাখলেই হতো। আর এখন মাসে আট কার্টুন যায়। সন্ধ্যা হলে আমি নিজেও একটা কয়েল জ্বালিয়ে দোকানে বসি।’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, মশার ওষুধ ছিটানোর জন্য এই সিটিতে ৯৪০টি মেশিন রয়েছে। এর মধ্যে মেশিনের অর্ধেকই অকেজো। ফলে বাকি অর্ধেক দিয়েই কাজ সারতে হয় তাদের। ডিএসসিসির ওয়ার্ডগুলোর ডোবা, নালা কিংবা বাসাবাড়িতে নিয়মিত মশার ওষুধ ছিটানোর কথা। ওষুধ ছিটানোর জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে পাঁচ থেকে ছয়জন করে মশক নিধন কর্মী রয়েছেন। তাঁদের সকাল-সন্ধ্যা দুইবার ওষুধ ছিটানোর কথা। তবে মশক নিধন কর্মীদের দেখা যায় কালেভদ্রে। যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা রুহুল আমিন বলেন, ‘জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে যাত্রাবাড়ী এলাকায় একবার ওষুধ ছিটাতে দেখেছিলাম। এরপরে আর চোখে পড়েনি। মাসে একবার মেশিন শব্দ করে ধোঁয়া উড়িয়ে যায়। আর তাদের দেখা যায় না।’

যাত্রাবাড়ীসহ আশপাশের এলাকাগুলো ডিএসসিসি অঞ্চল-৫-এর আওতাধীন। এ বিষয়ে অঞ্চল কর্মকর্তা শামসুল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘শীতে মশার প্রকোপ বেড়ে যায় ঠিক, তবে আমাদের ওষুধের কিছুটা ঘাটতি থাকায় ওয়ার্ডগুলোতে নিয়মিত ওষুধ ছিটানো যায়নি। এখন সংকট কেটে গেছে, আশা করি খুব দ্রুতই এর সুফল পাবেন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা।’