বাচ্চা দেখতে না দেওয়ায় শাশুড়িসহ তিনজনকে হত্যার দায়ে জামাই আল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড

ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। প্রথম আলো ফাইল ছবি
ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালত। প্রথম আলো ফাইল ছবি

রাজধানীর চকবাজারে শাশুড়িসহ তিনজনকে হত্যার দায়ে আল ইসলাম ওরফে জীবন (৩০) নামের এক ব্যক্তিকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ মঙ্গলবার ঢাকার অষ্টম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফারহানা ফেরদৌস এই রায় দেন। রায় ঘোষণার পর আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি মাজহারুল হক প্রথম আলোকে বলেন, তিনজনকে হত্যার দায়ে জীবনকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত।

২০১৬ সালের ৪ জুলাই চকবাজারের বাসায় খুন হন রাশিদা বেগম (৬০), শ্রাবণী আক্তার বন্যা (২৩) ও সীমা আক্তার (৩০)। এ ঘটনায় রাশিদার ভাই সাহাবুদ্দিন বাদী হয়ে আল ইসলামকে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন।

মামলার কাগজপত্র থেকে জানা যায়, নিহত রাশিদার মেয়ে সুমি আক্তারের সঙ্গে আল ইসলামের ঘটনার ছয় বছর আগে বিয়ে হয়। বিয়ের পর এই দম্পতির জুই (৩) নামের একটি কন্যা জন্ম নেয়। পরে দ্বিতীয় সন্তান সানির জন্মগ্রহণের সময় সুমি মারা যান। এরপর থেকে সুমির দুই সন্তান নানির কাছেই বড় হতে থাকে। পরে জীবন দুই সন্তান নিজের কাছে রাখার অনুমতি চেয়ে আদালতের কাছে আবেদন করেন। আদালত আসামির আবেদন সাড়া না দিয়ে দুই সন্তানকে তাদের নানির কাছে রাখার আদেশ দেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়, সময়-অসময়ে বাচ্চাদের দেখার কথা বলে আসামি জীবন শাশুড়ি রাশিদার বাসায় যাতায়াত করতেন। ২০১৬ সালের ৪ জুলাই বাচ্চা নেওয়াকে কেন্দ্র করে কথা-কাটাকাটির একপর্যায়ে তিনি শাশুড়ি রাশিদাকে কুপিয়ে জখম করেন। ঘটনাস্থলে মারা যান রাশিদা। তখন বাসায় থাকা বাদী সাহাবুদ্দিনের ভাগনি দুলারীর মেয়ে বন্যা ও ভাগনি সীমাকে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যান জীবন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান বন্যা ও সীমা।

মামলার পর ২০১৬ সালের ৯ আগস্ট গ্রেপ্তার হন জীবন। পরে শাশুড়িসহ তিনজনকে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেন তিনি। এরপর ২০১৬ সালের ২৫ ডিসেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। পরে ২০১৭ সালের ৯ মে জীবনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জীবন বলেন, তাঁর স্ত্রী সুমি আক্তার মারা যাওয়ার পর দুই সন্তানকে শাশুড়ি রাশিদা লালন-পালন করে আসছিলেন। সন্তানদের দেখতে গেলে শাশুড়ি গালাগাল করতেন। সন্তানদের দেখা করতে দিতেন না। ঘটনার দিন তিনি সন্তানদের কাপড়চোপড় দিতে শাশুড়ির বাসায় গিয়েছিলেন।

জীবন তাঁর জবানবন্দিতে বলেন, কাপড় দিতে যাওয়ার সময় সঙ্গে করে একটা রামদা নিয়ে যান তিনি। যদি কাপড় রাখে অথবা সন্তানদের দেখতে দেয় তাহলে তিনি চলে আসবেন অন্যথায় তিনি মরবেন, না হয় শাশুড়িকে মারবেন। কিন্তু বাচ্চাদের কাপড় না রাখতে চাওয়ায় তিনি শাশুড়িসহ তিনজনকে রামদা দিয়ে কুপিয়ে জখম করে পালিয়ে যান।