জয়ে মূল ভূমিকা রাখবে ছাত্রীদের ভোট

>

• ১১ মার্চ ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন
• নির্বাচন ঘিরে প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীরা
• ছাত্রী হলে ছাত্রসংগঠনের প্রভাব কম
• ছাত্রীদের ৫ হলেই স্বতন্ত্র প্যানেল

২৮ বছর পর হতে যাওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে জয়–পরাজয়ে মূল ভূমিকা রাখবেন ছাত্রীরা। তাঁদের ভোটের পাল্লা যাঁদের দিকে ভারী হবে তাঁরাই জয়ী হবেন।

ভোটের হিসাব–নিকাশ করে এবং প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র পাওয়া গেছে। আর এ জন্য ছাত্রীদের ভোট টানতে প্রার্থীরা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রচারে তাঁরা অন্যান্য সমস্যার পাশাপাশি ছাত্রী হলের সমস্যাকে বড় করে তুলে ধরছেন।

১১ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন। এ জন্য এখন প্রচারে ব্যস্ত প্রার্থীরা।

ডাকসু নির্বাচনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪২ হাজার ৯২৩। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি আবাসিক হলের মধ্যে ৫টি হলে ছাত্রীরা থাকেন। ওই হল প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, ছাত্রীদের মোট ভোট ১৬ হাজার ৩৮২ জন। এর মধ্যে হলে থাকেন ৭ হাজার ৭৯৪ জন ছাত্রী।

শিক্ষার্থী ও প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ছাত্রদের হলগুলোতে ক্ষমতাসীন ছাত্রসংগঠনের আধিপত্য থাকে সব সময়ই। এখনো তা–ই। ছাত্রদের হলগুলোতে সিট নিয়ন্ত্রণ করে কার্যত ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন। কিন্তু ছাত্রীদের হলের চিত্রটা অনেকটাই ভিন্ন। সেখানে সিটের প্রায় পুরোটাই হল প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে। আবার ছাত্রীদের হলে বড় অংশই সরাসরি রাজনীতি করে না। ফলে ছাত্রীরা চাপ ছাড়াই মতামত প্রকাশের সুযোগ পান।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্রদের ১২টি হলের কোনোটিতেই স্বতন্ত্র প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কারণ, নির্বাচনে দাঁড়ালে হলে অবস্থান করাই কষ্টকর বলে আশঙ্কা করেছেন কেউ কেউ। তাই ইচ্ছা থাকলেও তাঁরা প্রার্থী হননি। অন্যদিকে ছাত্রীদের পাঁচটি হলের প্রতিটিতেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র প্যানেল রয়েছে। এই চিত্রটিও ভাবাচ্ছে ছাত্রসংগঠনগুলোকে।

প্রার্থীরা যা বলেন
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্যানেলে সহসাধারণ সম্পাদক প্রার্থী সাদ্দাম হোসেন বলেন, যাঁরা ছাত্রী হলে বেশি ভোট পাওয়ার আশা করছেন, তাঁরা হলগুলোতে পূর্ণাঙ্গ প্যানেলই দিতে পারেননি। ছাত্রলীগের প্যানেলেই সবচেয়ে বেশিসংখ্যক নারী প্রার্থী রয়েছেন, ছাত্রলীগই ছাত্রীদের সম্মান দেখাতে পেরেছে।

জাতীয়তবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান বলেন, ‘ক্যাম্পাসে দীর্ঘদিন না থাকায় ছাত্রী হলগুলোতে আমাদের সরাসরি সম্পর্কভিত্তিক ভোট কম, যেটা অন্যদের বেশি। আমরা আশা করছি, যেসব ছাত্রী আমাদের দলীয় মতাদর্শে বিশ্বাসী, তাঁদের ভোটগুলো আমরা পাব।’

সাধারণ সম্পাদক (জিএস) পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমানের মতে, ছাত্রীদের হলগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণ থাকায় ছাত্রীরা স্বাধীনভাবে তাঁদের মতামত প্রকাশের সুযোগ বেশি পাবেন। এই বিষয়টিই নির্বাচনের ফলাফলের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।

 বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর জোট থেকে সহসভাপতি পদে প্রার্থী লিটন নন্দীর মতে, নারীর ক্ষমতায়ন, ছাত্রী নিপীড়ন ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার থাকার কারণে ছাত্রীদের ভোট তাঁদের দিকেই বেশি পড়বে বলে মনে করছেন।

প্রচারের সময় ছাত্রীদের পক্ষ থেকে ‘অভূতপূর্ব’ সাড়া পাওয়ার কথা জানান বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের প্যানেলে সহসভাপতি প্রার্থী নুরুল হক।

পাঁচটি হলেই স্বতন্ত্র প্যানেল
ছাত্রীদের পাঁচটি হলের প্রতিটিতেই সাধারণ শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র প্যানেল দিয়েছেন। এর মধ্যে কুয়েত মৈত্রী হলে রয়েছে দুটো প্যানেল। প্রতিটি প্যানেলে ভিপি ও জিএসসহ সাতটি পদে প্রার্থী দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বাকি চারটি হলের প্রতিটিতেই সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি করে প্যানেল রয়েছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় আলোচনায় এসেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল হল। এই হলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দেওয়া নয় সদস্যের প্যানেলে জিএস প্রার্থী হয়েছেন ইনস্টিটিউট অব ডিজাস্টার ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ভালনারেবিলিটির মাস্টার্সের ছাত্রী মনিরা শারমিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নয়জন প্রার্থীর মধ্যে সাতজনই স্নাতকোত্তরের ছাত্রী। তাঁরা সবাই বন্ধুবান্ধব। চলমান রাজনৈতিক কাঠামোর বিরুদ্ধে হলের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঐক্যবদ্ধতাই তাঁদের প্যানেল দিতে অনুপ্রাণিত করেছে। প্রচারণা চালানোর সময় ছাত্রীরাও উৎসাহিত করছেন।