ভুয়া পরিচয় দিয়ে ধরা

নদের তীর দখলমুক্ত করার অভিযান থামাতে গিয়ে নিজেকে আইনজীবী পরিচয় দিয়ে বিপাকে পড়েছেন এক ব্যক্তি। পরিচয়পত্র দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় তাঁকে আটক করা হয়েছে। আটকের পর ওই ব্যক্তি সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘মুখ ফসকে’ তিনি নিজেকে আবাসন প্রতিষ্ঠানের আইনি পরামর্শক হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। আসলে তিনি জমির মালিক। আজ বুধবার তুরাগ নদের তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের দ্বিতীয় দিনে রাজধানীর বছিলার উত্তরপাড়ায় তুরাগ নদের তীরে এ ঘটনা ঘটে।

আটক করা ব্যক্তির নাম খন্দকার আওলাদ হোসেন।

গতকাল মঙ্গলবার থেকে বুড়িগঙ্গা ও তুরাগতীরে দ্বিতীয় দফায় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। আজ সকাল সাড়ে নয়টায় দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরু হয়। নদীর তীরবর্তী এলাকায় আমিন মোমিন হাউজিং নামের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠান অবৈধভাবে জলাধার ভরাট করে জমি দখলে রেখেছে অভিযোগে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) উচ্ছেদ অভিযান শুরু করে। অভিযানে নেতৃত্ব দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান। অভিযান শুরু হওয়ার দেড় ঘণ্টা পর আমিন মোমিন হাউজিংয়ের পক্ষে কয়েকজন লোক এসে জানান, এই উচ্ছেদ অভিযান অবৈধ। তাঁদের কাছে আদালতের বৈধ কাগজপত্র আছে।

ওই সময় খন্দকার আওলাদ হোসেন নিজেকে প্রতিষ্ঠানের ‘লিগ্যাল অ্যাডভাইজর’ দাবি করে উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, প্রতিষ্ঠানের পক্ষে তাঁর কাছে বৈধ কাগজপত্র রয়েছে। এই অভিযান অবৈধ। গতকাল তিনি বিআইডব্লিউটিএর চেয়ারম্যানের সঙ্গে দেখা করেছেন। চেয়ারম্যান তাঁকে আশ্বাস দিয়েছেন, যাচাই-বাছাই করে অভিযান চলবে। মূলত বিআইডব্লিউটিএর এক কর্মকর্তা ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে তাঁদের স্থাপনা উচ্ছেদ করছেন।

ওই সময় বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক ও ঢাকা নদীবন্দরের নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এ কে এম আরিফ উদ্দিন তাঁর (আওলাদ) পরিচয় জানতে চান। তিনি আইনজীবী কি না, জিজ্ঞেস করলে হ্যাঁ-সূচক জবাব দেন আওলাদ। ওই সময় তাঁর আইনজীবী হিসেবে পরিচয়পত্র বা কার্ড চাইলে তা দেখাতে ব্যর্থ হন তিনি। ওই সময় তাঁকে আটকের নির্দেশ দেন যুগ্ম পরিচালক।

আটকের কারণ উল্লেখ করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ওই ব্যক্তি আইনজীবী পরিচয় দিয়ে তথ্য গোপন করেছেন। তিনি একজন প্রতারক। তাই তাঁকে আটক করা হয়েছে। বিকেলে মুচলেকা নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হবে।

যুগ্ম পরিচালক আরিফ উদ্দিন জানান, এর আগেও উচ্ছেদ অভিযানে বাধা দেওয়ার কারণে আওলাদ হোসেনকে একবার আটক করা হয়েছিল। সেবার মুচলেকা দিয়ে তিনি মুক্তি পেয়েছিলেন।

আটকের পর আওলাদ হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আইনি পরামর্শক নন, মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন। তিনি আসলে জমির মালিক। আমিন মোমিন হাউজিংয়ের কাছ থেকে জমি কিনেছেন। জলাধার ভরাট করা যাবে না বিষয়ে এখন যেভাবে গণমাধ্যম প্রচার করে, তা আগে হতো না। তাই তিনি না জেনে জমি কিনেছেন।

এবার দ্বিতীয় দফায় ২৮ মার্চ পর্যন্ত সপ্তাহে তিন দিন করে উচ্ছেদ অভিযান চলবে। গতকাল অভিযানের প্রথম দিন বুড়িগঙ্গা তীরের ৮৮টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর আগে আমিন মোমিন হাউজিংয়ের অবৈধ জমির সীমানাপ্রাচীর ভেঙে দেওয়া হয়েছে। আজ সারা দিন ভরাট জলাধার খনন করা হবে।

প্রথম দফায় গত ২৯ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সপ্তাহে তিন দিন করে মোট ১২ দিন উচ্ছেদ অভিযান চলে। ওই সময় ১ হাজার ৭২১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়।