খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য করব: ফখরুল

খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বিএনপি। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা, ৬ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম
খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসার দাবিতে আজ বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে বিএনপি। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ঢাকা, ৬ মার্চ। ছবি: আবদুস সালাম

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে জনগণের ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। সংগঠনকে শক্তিশালী করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তিনি বলেন, ‘আজকে আমাদের সময় এসেছে, জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে সংগঠনকে শক্তিশালী করে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে বাধ্য করব।’

আজ বুধবার দুপুরে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে বিএনপি আয়োজিত এক মানববন্ধনে মির্জা ফখরুল ইসলাম এসব কথা বলেন। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বেলা দেড়টা পর্যন্ত কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতা-কর্মীরা।

আজ মানববন্ধনে নেতা-কর্মীরা দলের চেয়ারপারসনের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। অন্য দিনের তুলনায় দলটির নেতা-কর্মীর উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। এ ছাড়া পুলিশের উপস্থিতি তুলনামূলক কম দেখা গেছে। মানববন্ধন থেকে কোনো আটক বা গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি।

মানববন্ধনের সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে আমাদের প্রথম কাজ খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। সে জন্য আইনি লড়াই হবে এবং এর সঙ্গে আমাদের সংগঠনকে শক্তিশালী করে জনগণের ঐক্য গড়ে তুলে ও সব দলকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদের দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘খালেদা জিয়া অসুস্থ। চিকিৎসা পাওয়া তাঁর সাংবিধানিক অধিকার। কিন্তু সেই অধিকার তিনি পাচ্ছেন না। তাঁকে চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। বর্তমান “অবৈধ” সরকার বেআইনিভাবে তাঁকে কারাগারে আটকে রেখেছে। আমরা সবাই জানি, যে মামলাগুলোয় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেগুলোর প্রতিটিতে তিনি জামিন পেতে পারেন। কিন্তু তাঁকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে একটির পর একটি মামলা দিয়ে আটক রাখা হয়েছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমাদের মনে রাখতে হবে, এই আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭৫ সালে “একদলীয় শাসনব্যবস্থা” প্রতিষ্ঠিত করেছিল। আজ আবারও সেই আয়োজন তারা সম্পূর্ণ করেছে।’

বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম বলেন, এই সরকারের আমলে ৯৮ হাজারের ওপরে মামলা দেওয়া হয়েছে এবং আসামির সংখ্যা ২৫ লাখের ওপরে। এভাবে এই ‘দখলদার’ সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে চাইছে।

মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রীরা যদি অসুস্থ হয়, বিদেশ থেকে চিকিৎসক আসে। কীভাবে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, তা আমরা দেখেছি। আর আমাদের নেত্রী দেশেই চিকিৎসার দাবি জানিয়েছিলেন। কিন্তু তিনবারের প্রধানমন্ত্রীকে ন্যূনতম চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।’ তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়া হোক। মুক্ত খালেদা জিয়া তাঁর ইচ্ছামতো চিকিৎসা নেবেন। তা না হলে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে সব দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে আমরা অনেক চেষ্টা করছি। কিন্তু তারপরও তাঁকে মুক্ত করতে পারিনি। কারণ সরকারের “হিংস্র” নীতির কারণে খালেদা জিয়াকে বের করতে পারছি না। তবে তাঁর মুক্তি আসবে রাজপথে। তাই আন্দোলনের ছাড়া তাঁর মুক্তির কোনো বিকল্প নেই।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব ও খালেদা জিয়া এক নন। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মান, মর্যাদা, সম্মানে অবশ্যই ওপরে।

স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, খালেদা জিয়া আজকে কারাগারে। কোনো বিচারিক কারণে নয়, রাজনৈতিক কারণে তাঁকে কারাগারে রাখা হয়েছে। এর মাধ্যমে দেশের সব মানুষকে বন্দী রাখা হয়েছে। গণ-আন্দোলনের মাধ্যমে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা সম্ভব।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, খালেদা জিয়াকে জেলে রেখে গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আর বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফিরে পেতে হলে গণতন্ত্রের মাকে রাজনৈতিক অঙ্গনে ফিরে পেতে হবে।

এর আগে মানববন্ধন কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা জড়ো হতে থাকেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, শামসুজ্জামান দুদু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্সসহ দলের অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।