গাফিলতি তদন্তে আরও সময় লাগবে দুদকের

জাহালম।  ফাইল ছবি
জাহালম। ফাইল ছবি

বিনা অপরাধে পাটকলশ্রমিক জাহালমের তিন বছর কারাভোগের ঘটনায় কারও গাফিলতি ছিল কি না, সে তদন্ত শেষ হতে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আরও সময় লাগবে। প্রতিবেদন পেতে ১০ থেকে ১৫ দিন লাগতে পারে। আজ বুধবার বিকেলে দুদকের সচিব মুহাম্মদ দিলোয়ার বখত সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

দুদক সচিব বলেন, ‘জাহালমের ঘটনায় দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, সেটা তদন্ত করার জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার দেওয়ার কথা ছিল। কমিটির পক্ষ থেকে সময় চেয়ে আবেদন করা হয়েছে। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়ানোর বিষয়ে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। আমরা আশা করছি, আগামী ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাব।’ তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন পেলে প্রকৃতপক্ষে দুদকের কারও গাফিলতি ছিল কি না, তা জানা যাবে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জাহালমের ঘটনায় দুদকের তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুদকের পরিচালক (আইন) আবুল হাসনাত মো. আবদুল ওয়াদুদকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দুদক।
এদিকে সোনালী ব্যাংকের সাড়ে ১৮ কোটি টাকা ঋণ জালিয়াতিসংক্রান্ত ৩৩টি মামলার সব কাগজপত্র দুর্নীতি দমন কমিশনকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। দুদকের মামলায় নিরীহ জাহালমের কারাভোগসংক্রান্ত মামলার শুনানি নিয়ে আজ বুধবার বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে আদালত আগামী ১০ এপ্রিল পরবর্তী শুনানির দিন ঠিক করেন।

হাইকোর্ট বলেন, ‘ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় কতজন ব্যাংক অফিসারের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে, আমরা সব দেখব। দুদক যখন জানতে পারল জাহালম নির্দোষ, তখন তাঁর জামিন করানো উচিত ছিল। এর দায় দুদককে নিতেই হবে।’

এ মামলায় দুদকের পক্ষে হলফনামা জমা দেন আইনজীবী খুরশীদ আলম। তিনি শুনানিতে সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির মামলায় জাহালমকে কীভাবে ২৬ মামলার আসামি করা হয়, আবার দুদকের অধিকতর তদন্তে জাহালম কীভাবে নির্দোষ প্রমাণিত হলেন—এসব ব্যাপারে হলফনামা থেকে আদালতকে পড়ে শোনান।
দুদকের এই আইনজীবী আদালতকে জানান, সোনালী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতিসংক্রান্ত মামলাগুলোর অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন বিচারিক আদালতে জমা দেওয়া হয়। একই সঙ্গে জাহালমের বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগ প্রত্যাহার চেয়েও বিচারিক আদালতে আবেদন করা হয়। খুরশীদ আলম হলফনামা থেকে তথ্য তুলে ধরে আদালতকে বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তাসহ সাক্ষীরা জাহালমকে সালেক বলে শনাক্ত করেন। তবে অধিকতর তদন্তে জানা যায়, প্রকৃত আসামি সালেকের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে।

এ সময় আদালত খুরশীদ আলমের কাছে জানতে চান, ‘কবে আপনারা জানলেন জাহালম নির্দোষ আর কবে আদালতে অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিলেন?’ তখন খুরশীদ আলম খান জানান, অধিকতর তদন্ত প্রতিবেদন তিনি আদালতে নিয়ে এসেছেন। এগুলো সবই তিনি আদালতে জমা দেবেন। আদালত তখন দুদকের এই আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘যখন আপনারা জানতে পারলেন জাহালম নির্দোষ, তখন আপনাদের উচিত ছিল জাহালমের জামিনের ব্যবস্থা করা। জাহালম বলে আসছেন, তিনি নির্দোষ। পিপিরা জানলেন কিন্তু কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এর দায় আপনাদের নিতেই হবে।’