'ত্বকী একটি বিচারহীনতার প্রতীক'

ত্বকী হত্যার ৬ বছর পূর্তিতে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ আয়োজিত গোলটেবিল বক্তব্য দেন বক্তারা। ছবি: মোছাব্বের হোসেন
ত্বকী হত্যার ৬ বছর পূর্তিতে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ আয়োজিত গোলটেবিল বক্তব্য দেন বক্তারা। ছবি: মোছাব্বের হোসেন

ত্বকীকে হত্যা করার পর হত্যাকারীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই দেশে ত্বকী হত্যাকাণ্ড একটি বিচারহীনতার প্রতীকে পরিণত হয়েছে। এমন সম্ভাবনাময় কিশোরের হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত তাদের বিচার যত দিন এ দেশে হবে না তত দিন এ দেশ বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে না।

ত্বকী হত্যার ৬ বছর পূর্তিতে সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে বিশিষ্ট জনেরা এ কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই গোলটেবিল আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

২০১৩ সালের ৬ মার্চ নারায়ণগঞ্জ শহরের বাসার সামনে থেকে নিখোঁজ হয় সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বির ছেলে তানভীর মুহাম্মদ। ওই দিনই সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন রাব্বি। ৮ মার্চ সকালে শীতলক্ষ্যা নদীর শাখা চারারগোপ এলাকার খালে ত্বকীর লাশ পাওয়া যায়। ওই দিন রাতেই ত্বকীর বাবা অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মামলা করেন। পরে ১৮ মার্চ সাংসদ শামীম ওসমান, তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, জেলা যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা জহিরুল ইসলাম পারভেজ ওরফে ক্যাঙারু পারভেজ, জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি রাজীব দাস, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সালেহ রহমান সীমান্ত ও রিফাতকে দায়ী করে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন রফিউর রাব্বি।

গোলটেবিল বৈঠকে ভাষা সৈনিক ও সাংবাদিক কামাল লোহানী বলেন, ত্বকী হত্যার পর এটি এখনো আন্দোলনে পরিণত হয়নি। এটা আমাদের ব্যর্থতা। আমাদের প্রয়োজনে আবার আইনের আশ্রয় নিতে হবে। প্রয়োজন হলে সংগঠন তৈরি করে গণ আন্দোলন করতে হবে। সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে হবে। সেই সময় এসে গেছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ত্বকী হত্যা একটি প্রতিবাদে পরিণত হয়েছে। আমাদের দেশের বিচারহীনতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। ত্বকী কাউকে আঘাত করেনি। কারও প্রতি অন্যায় করে নি। তারপরও তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। এ রাষ্ট্র তাঁকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি তাঁর হত্যার বিচার করতে পারেনি। এ রাষ্ট্রকে মানবিক করার জন্য আমাদের আন্দোলন করতে হবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, গত ছয় বছর ধরে তীব্র যন্ত্রণা নিয়ে আমাদের এই আলোচনায় অংশ নিতে হয়। এই হত্যার বিচার যত দিন হয়নি তত দিন আমাদের চেষ্টা করে যেতে হবে। চেষ্টা করলে এই হত্যার বিচার একদিন না একদিন হবেই। এর পেছনে যে রাজনীতি আছে এটা স্পষ্ট।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সারা দেশের জন্য এ আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নারায়ণগঞ্জে এই হত্যার বিচারের প্রতিবাদ অব্যাহত আছে যা সারা দেশে শক্তি জোগাচ্ছে। হত্যাকারীদের রক্ষার জন্য রাজনীতি চলছে তাই এই হত্যার বিচার হচ্ছে না।

সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বাংলাদেশে অনেক অন্যায় হচ্ছে। ত্বকী হত্যার বিচারের দাবি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর দাবি। এই আন্দোলনের সঙ্গে অতীতে ছিলাম ভবিষ্যতেও থাকব। এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে এই হত্যাকাণ্ড একটা রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। তাই এর সমাধানও হতে হবে রাজনৈতিক ভাবে। প্রধানমন্ত্রী চাইলে এ হত্যার বিচার সম্ভব। তাঁর উদ্যোগের কারণে যুদ্ধাপরাধীদের ও বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার হয়েছে। তিনি চাইলে এই হত্যার বিচারও সম্ভব।

প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান বলেন, ত্বকীর বিচারের জন্য আমরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হতে পারি। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিতে পারি। এ ছাড়া পাঠ্য পুস্তকে ত্বকীর লেখা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।

ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি বলেন, ত্বকীর ঘাতকেরা সরকারের সঙ্গে জড়িত। বিচারহীনতা থেকে রেহাই পেতে ব্যাপক সামাজিক আন্দোলন জরুরি।

গোলটেবিলে বক্তব্য দেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক, সারওয়ার আলী, ন্যাপের আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্য, সাবেক সচিব সচিব ভূঁইয়া শফিকুল ইসলাম, বাসদের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শফি আহমেদ, দৈনিক সংবাদের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মনিরুজ্জামান প্রমুখ।

ত্বকী হত্যাকাণ্ডের বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা দেন সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ। সভাপতিত্ব করেন ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি।